
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বদিউর রহমান আর নেই। গত বুধবার গভীর রাতে ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বদিউরের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, প্রয়াত এই সংস্কৃতিসেবীর প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানাতে তার লাশ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লাশ বরিশালে তার জন্মস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। বরিশালে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন বদিউর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। দীর্ঘ কর্মজীবনে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা শেষে ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ গবেষক, অনুবাদক ও সম্পাদক। সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫০টির বেশি। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সাহিত্য স্বরূপ’, ‘সাহিত্য সংজ্ঞা অভিধান’, ‘ধ্রুপদী সাহিত্যতত্ত্ব’, ‘বাংলার চারণ মুকুন্দদাস’, ‘সত্যেন সমীক্ষণ’, ‘দ্য প্রিন্স’, ‘গণনাট্য’, ‘উপন্যাস ও জনগণ’, ‘সত্যেন সেন রচনাবলি’ (৯ খণ্ড), ‘রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ কবিতা’ এবং ‘নজরুল অভিভাষণ ও পত্রাবলি’। আশির দশক থেকে উদীচীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন বদিউর রহমান। নব্বইয়ের দশকে সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকা এই সংস্কৃতিসেবী ২০২২ সালের জুনে উদীচীর ২২তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাকে পেরোতে হয় এক সাংগঠনিক সংকট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনটি। ৮ ফেব্রুয়ারি শিশু একাডেমিতে আয়োজিত সমাপনী অধিবেশনে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে উদীচীর একাংশ বদিউর রহমানের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে জুন মাসে তিনি সম্মেলনের অসমাপ্ত অংশ সম্পন্ন করে আবারও সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বদিউর রহমান শুধু একজন সংগঠকই ছিলেন না, ছিলেন সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী এক সংস্কৃতি সৈনিক। দীর্ঘ জীবনে সাহিত্য, সংগঠন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি রেখে গেছেন স্থায়ী ছাপ। তার প্রয়াণে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হলো।