
স্বরূপকাঠি থেকে এম. ইসলাম জাহিদ
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার মৈশানি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাগজে-কলমে ১৩০ জন দেখানো হলেও বাস্তবে শ্রেণিকক্ষে পাওয়া যায় গড়ে মাত্র ৭-১০ জন। অথচ এখানে রয়েছেন ৯ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ছয় জন শিক্ষার্থী, পাস করে মাত্র একজন। ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই বিবাহিত। স্থানীয়রা বলছেন, এমন ভয়াবহ ফলাফল ও শিক্ষার্থী সংকটের জন্য দায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্ষিয়া রানী হালদার ও বিদ্যালয়ের কেরানি আব্দুল জলিলের অনিয়মতান্ত্রিক পরিচালনা। প্রতি মাসে দু’একদিনে সারা মাসের হাজিরা দেয়া হয়। শ্রেণিকক্ষে নেই শিক্ষার্থী, তবু হাজিরা খাতায় উপস্থিতি। সাম্প্রতিক সময়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির কক্ষে কোনো শিক্ষার্থী নেই। কক্ষগুলো ধুলায় ঢাকা। দশম শ্রেণিতে দুইজন, অষ্টমে পাঁচজন এবং সপ্তমে তিনজন শিক্ষার্থী ছিল। অথচ হাজিরা খাতায় অনেক নাম থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে তারা উপস্থিত নয়।
শিক্ষকদের কাছে যখন শ্রেণিশিক্ষকের নাম জানতে চাওয়া হয়, কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। হাজিরা খাতা দেখাতেও গড়িমসি করেন তারা। পরবর্তীতে খাতা দেখে পাওয়া যায়, বহু ছাত্রীর নাম রয়েছে যারা দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে আসে না, এমনকি কেউ কেউ আদৌ এই স্কুলের ছাত্রী নন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মালা দাস জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়, কখনও তা নেমে আসে ৭-৮ জনে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা পর্ষিয়া রানী হালদার নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। কেরানি আব্দুল জলিলের প্রভাব এতটাই যে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাও তার কথার বাইরে যেতে পারেন না।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা পর্ষিয়া রানী হালদার স্বীকার করেন, আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থী কম, তাই কাগজে-কলমে সংখ্যা বেশি দেখাতে হয়। জলিলের বাড়ি কাছেই, আমার দূরে। তাই তার কথাই মানতে হয়। এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। অচিরেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের ফল বিপর্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। খুব শিগগিরই অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হবে।
পিরোজপুরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিভাবকদের প্রশ্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই, অথচ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন কীভাবে উত্তোলন হচ্ছে? স্থানীয়দের দাবি প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই কেবল বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও সংকট নিরসন সম্ভব।