
মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। গতকাল সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।
খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, বারবার ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়া জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি বিরোধ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২৮ জুন দলের জাতীয় সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছিলেন জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির দপ্তর থেকে জানানো হয়, দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে মুজিবুল হক চুন্নুকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় মহাসচিব করা হয়েছে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। এর মধ্যেই জাপায় নতুন নেতৃত্ব গড়ার উদ্যোগ নেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগ সদস্য। বিশেষ করে কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদপ্রত্যাশী বলে জানালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে জিএম কাদেরের কপালে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যেনু জটিলতার কথা বলে ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করেন জিএম কাদের।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনিরাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এ বি এম মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মা রোকেয়া ইসলাম, আইনজীবী ছিলেন। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ। তিনি উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি (অর্নাস) সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এলএলবি করেছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজি সার্টিফিকেট অন ইনটেলেকঢুয়াল প্রোপাটি ল’ ডিগ্রি নেন। সিটি ইউনিভার্সিটির ইনস অব কোর্ট স্কুল অব ল’ (আইসিএসএল) থেকে বিভিসি (পিজি ডিপ্লোমা ইন প্রফেশনাল অ্যান্ড লিগ্যাল স্কিলস) করেছেন। এছাড়াও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে হিউম্যান রাইটসের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন।
কর্মজীবনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত। শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা ছিলেন। জাতীয় পার্টির সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সভাপতিও তিনি। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহমেদ মৃত্যুবরণ করলে শূন্য আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ২২ মার্চ ২০১৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনটি আর জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করার ফলে জামায়াত থেকে কেউ নির্বাচনে আসতে পারেনি। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মাজেদুর রহমান ছিলেন। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ২০১৮ সালে পুনরায় এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০২৫ সালের ৭ জুলাই তাঁকে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব পদে নিয়োগ দেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
প্রসঙ্গত, সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে পড়েছে প্রয়াত স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের গঠনতন্ত্রের ‘বিতর্কিত’ ২০(ক) ধারাকে কেন্দ্র করে ফের ভাঙতে যাচ্ছে জাপা। একইসঙ্গে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে শীর্ষপদ থেকে সরাতে জোট বেঁধেছে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দল থেকে ২০(ক) ধারার ক্ষমতাবলে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বহিষ্কার হওয়া নেতারা। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যেকোনো পদ দিতে পারেন। এজন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হয় না। যে কারণে দলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র নেতাদের বড় একটি অংশ বর্তমান চেয়ারম্যানকে এই ধারা সংশোধন করার অনুরোধ করেন। দলের বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও এই বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে শেষ পর্যন্ত মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনলেন জিএম কাদের।