১৫ শতাংশ ভোট পেতে পারে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আ’লীগ : সানেমের জরিপ

আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৫:৩০:৫১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৫:৩০:৫১ অপরাহ্ন
আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৫.০২ শতাংশ ভোট পেতে পারে, এমনটাই মনে করেন দেশের তরুণদের একটি অংশ। গত রোববার প্রকাশিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সারা দেশের আটটি বিভাগের বাছাইকৃত ১৬টি জেলার ৩২টি উপজেলা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণী। তাদের রাজনৈতিক পছন্দ ও মূল্যবোধ, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে ভাবনা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সম্ভাব্যতা নিয়ে এ জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়। জরিপে দেখা যায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগকে ১৫ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে আগ্রহী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি দলটির দীর্ঘ সময়ের শাসনকাল, সাংগঠনিক ভিত্তি ও একাংশের মধ্যে টিকে থাকা আস্থার প্রতিফলন হতে পারে। এদিকে, জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশের মত অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে বিএনপি শীর্ষে থাকবে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলটির পক্ষে মত দিয়েছেন ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ তরুণ। এছাড়া নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট- এমনটাই মনে করছেন উত্তরদাতারা। জরিপ অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেতে পারে। আর অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো সম্মিলিতভাবে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। জাতীয় পার্টি পাবে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ছোট দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট হবে মাত্র ০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জরিপে আরও দেখা গেছে, বিএনপির প্রতি তরুণ ভোটারদের সমর্থন তুলনামূলক বেশি। পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিএনপিকে ভোট দিতে চাইলেও নারী ভোটারদের মধ্যে এ হার ৩৭.০৩ শতাংশ। জামায়াতে ইসলামি ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিও যথাক্রমে ২০-২২ শতাংশ এবং ১৪-১৭ শতাংশ ভোটার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সানেম জানিয়েছে, তাদের এই জরিপ পরিচালিত হয় দেশের সবক’টি বিভাগের ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি বিভাগ থেকে দুটি জেলা এবং প্রতি জেলা থেকে দুটি উপজেলা বেছে নেওয়া হয়। মোট ২ হাজার তরুণ এই জরিপে অংশ নেন; যাদের বয়সসীমা ১৫ থেকে ৩৫ বছর । অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৬০ শতাংশ এসএসসি বা তার ওপরে শিক্ষিত। জরিপের লিঙ্গভিত্তিক ফলাফল তুলে ধরে সানেম সানেম বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণেও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য লক্ষ করা গেছে। অংশগ্রহণকারী ছেলেদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিএনপি, ২২ দশমিক ২১ শতাংশ জামায়াত এবং ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। আর মেয়েদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ বিএনপি, ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ জামায়াত এবং ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ এনসিপির পক্ষে মত দিয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহর ও গ্রামের সমান প্রতিনিধি ছিল বলে জানিয়েছে সানেম। জরিপের ফল বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া গ্রামীণ তরুণদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বিএনপি, ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ জামায়াত এবং ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এনসিপিকে সমর্থন করেছেন। শহুরে তরুণদের বিএনপি ৩৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ, জামায়াত ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং এনসিপি ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে। অপরদিকে, জরিপে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের প্রতি এখনও গ্রামীণ তরুণদের ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশের সমর্থন রয়েছে, আর শহুরে তরুণদের এই হার ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ৭১ শতাংশ তরুণের মতে গণপিটুনির প্রভাব বাড়ছে: এদিকে, দেশে মব জাস্টিস বা গণপিটুনির ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং এটি তরুণদের দৈনন্দিন জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে- এমনটি মনে করছেন দেশের ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ। ‘ইউথ ইন ট্রানজিশন: ন্যাভিগেটিং জবস, এডুকেশন অ্যান্ড চেঞ্জিং পলিটিক্যাল সিনারিও পোস্ট-জুলাই মুভমেন্ট’ শীর্ষক জরিপে দেশের ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণীর মতামত নেওয়া হয়। এতে ১৭টি কেস স্টাডিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মব জাস্টিস বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন এবং ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন, এই ইস্যু তাদের দৈনন্দিন জীবনে তেমন প্রভাব ফেলছে না। জরিপে উঠে আসে, সাম্প্রতিক সময়ে আগুন লাগানো, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধজনিত ঘটনাগুলো নিয়ে ৮০ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ১২ দশমিক ১ শতাংশ নিরপেক্ষ এবং ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন নন। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বিষয়ে তরুণদের মতামত ছিল বিভক্ত। ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন, এসব ঘটনা তাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে, ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছিলেন নিরপেক্ষ, আর ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ একমত নন। নারীবাদ ও উদারপন্থি মতাদর্শের প্রতি সামাজিক প্রতিক্রিয়া একটি উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে দেখছেন ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ। ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ এ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। সরকারি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন বা বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ। তবে ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ নিরপেক্ষ ছিলেন। রাজনৈতিক সহিংসতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষ নিয়ে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টভাবে গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রসঙ্গে ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, এটি তাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। ২৮ দশমিক ২ শতাংশ নিরপেক্ষ এবং ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ একমত নন। জরিপটি পরিচালনা করেন সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। গবেষণা দলে আরও ছিলেন একরামুল হাসান, শাফা তাসনিম, এশরাত শারমিন, নীলাদ্রি নভিয়া নভেলি এবং মো. রজিব।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net