ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ

উপজেলায় অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে নীতিগত একমত রাজনৈতিক দলগুলো

আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৫:১৩:১১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৫:১৩:১১ অপরাহ্ন
বিচার ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উপজেলায় পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে একমত হয়েছে ঐক্যমত কমিশনের আলোচনা অংশ নেওয়ার রাজনৈতিক দলগুলো। তবে, এক্ষেত্রে ভৌগলিক অবস্থানে যেসব উপজেলা জেলা সদরের নিকটবর্তী সেখানে আদালত স্থাপনের বিপক্ষে দলগুলো। গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলগুলো নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করে। ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলা সদরের ভৌগলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা; জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে যেসব উপজেলায় চৌকি আদালত পরিচালিত হয়, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সবগুলো চৌকি আদালতকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন, না কি সেক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা ও পুনর্বিন্যাসের সুযোগ রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে উপজেলা সদরে স্থাপিত কোনো আদালতের জন্য একাধিক উপজেলাকে সমন্বিত করে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন হলে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উপজেলা আদালতগুলোতে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে। দেওয়ানি মামলা গ্রহণে সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে বাস্তবানুগ করাও প্রয়োজন। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, জেলা সদরের অতি কাছে যেসব উপজেলা সদর রয়েছে সেখানে অধস্তন আদালত প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে জেলা সদরে উপজেলা অধস্তন আদালতের প্রয়োজন নেই। কোন উপজেলায় অধস্তন আদালত প্রয়োজন তার সংখ্যা নিরূপণের জন্য সমীক্ষার অনুরোধ করেন তিনি। আদালতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রস্তাবের পক্ষে গণসংহতি আন্দোলন একমত উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অনেক মামলা ও গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু জামিন থেকে শুরু করে একেবারে প্রাথমিক কাজের জন্য তাদেরকে জেলায় যেতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক চাপ থাকে। অনেক সময় মামলার জন্য জেলায় গিয়ে থাকতেও হয়। উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত হলে মামলা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা বিবেচনায় না নিয়ে বর্তমান বিচার ব্যবস্থার অসুবিধা বিবেচনা নিয়ে এটি করা দরকার বলে মনে করেন সাকি। উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ হলে তা প্রতিটি উপজেলায় হওয়া দরকার। সংসদীয় আসন কিংবা অন্যকিছু বিবেচনা করায় হলে তাহলে এক অঞ্চলে সঙ্গে আরেক অঞ্চলে দ্বন্দ্ব বাড়বে মনে করেন সাকি। আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দলের নেতা উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপন করা হলে দুর্নীতি বাড়বে আশঙ্কা করেন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ। জামায়াতের এই নেতা বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত হলে দুর্নীতি বাড়বে এটা ভুল ধারণা। বিচার প্রার্থীকে হয়রানি রোধ করতে বিচারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপনে তাগিদ দেন। প্রয়োজনে সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে দ্রুতই অধস্তন আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি। কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে আগামী কত বছরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করা হবে তা নির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয় ঐকমত্য কমিশনকে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। সেগুলো নিয়ে বিরতির পরে আলোচনা শুরু হবে। এখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে বর্তমান যে বিধান রয়েছে তা ভয়াবহভাবে নাগরিক অধিকারকে সংকুচিত করে এবং আদালতকে এমনভাবে বেঁধে দেয় যে তার পক্ষে কিছুই করার থাকে না। তাই সংবিধানের ১৪১ ক, খ, গ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জরুরি অবস্থার মেয়াদ ৬০ দিনের বেশি হবে না। জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের দ্বারা নিশ্চিত করা নাগরিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আদালতে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না। এরআগে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১০ দিনের সূচনা বক্তব্যে রাখেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমি বারবার বলেছি। দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠকের সময় সুস্পষ্টভাবে বলেছি কমিশন কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে না। সব বিষয়ে একমত হওয়ার কোনো বিষয় নেই। আমরা সব বিষয়ে একমত হবও না। প্রাথমিক প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ নিয়ে দলগুলোর আপত্তি থাকায় সংশোধিত প্রস্তাবে তা ছিল না জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, একইভাবে চার প্রদেশে ভাগের প্রস্তাবে দলগুলোর দ্বিমতের কারণে উপস্থাপন করা হয়নি। সব বিষয়ে একমত হওয়া যাবে না। তবুও আমাদের চেষ্টা করতে হবে। যেগুলো বাদ দিয়ে যে সমস্ত জায়গায় আমরা একমত হতে পারি, সেই জায়গায় যেন আমরা আসতে পারি, সেই চেষ্টা আমাদের থাকতে হবে। সংলাপে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি অর্জন হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে এবং কিছু কিছু বিষয় এখনো উপস্থাপন করিনি। তার মধ্যে একটি নতুন বিষয় আজকে উপস্থাপন করব। সংশোধিত প্রস্তাবের বিষয়ে দলগুলোর দলীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনা থাকবে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে দেখছি সবাই আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করছে এক জায়গায় আসা, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এই প্রক্রিয়ায় যা হচ্ছে কোনো বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু আলোচনার মধ্য সেটা সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সেন্টিমেন্ট, বক্তব্যগুলোকে ধারণ করে সংশোধিতভাবে উপস্থাপন করা। সংশোধিত প্রস্তাব তৈরিতে কমিশন ধারাবাহিক বৈঠক করছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংশোধিত প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যকে ধারণ করে তৈরি চেষ্টা হচ্ছে। সেটা আমরা অব্যাহত রাখব। এতে করে যাতে কোনোরকম ভুল বুঝাবুঝি বা বিভ্রান্তির চেষ্টা না হয়। আমাদের দিক থেকে আন্তরিক ও সর্বাত্মকরণের চেষ্টা হচ্ছে আপনাদের বক্তব্য, আকাঙ্ক্ষা সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করা কমিশনের প্রধান লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি আপনাদের জায়গায় আসতে। ফলে এই সংশোধিত ভাষ্যগুলো হচ্ছে আপনাদের আলোচনার বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা। জুলাই মাসজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আপনাদের কর্মসূচি একটু অসুবিধা সৃষ্টি করবে। তবুও আমরা আশা করছি, আপনারা সেক্ষেত্রে আমাদের জায়গাতে একত্রে বসতে পারি। তবে সময়ের একটা স্বল্পতা আছে সেগুলো আপনারা নিশ্চয় বিবেচনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন-কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ড. আইয়ুব মিয়া।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net