* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যত আয়োজন * ৩৬ দিনব্যাপী জুলাই অভ্যুত্থান উদযাপন করবে এবি পার্টি * অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি আপ বাংলাদেশের * জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে জাগপার ৩ দাবি, কর্মসূচি ঘোষণা * জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর বিশেষ ফিচার, নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচির মাধ্যমে নজীর সৃষ্টি করবে

আপলোড সময় : ০১-০৭-২০২৫ ০৭:০৯:৩১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০১-০৭-২০২৫ ০৭:১০:১৯ অপরাহ্ন
ক্ষত আর বিভৎস স্মৃতি নিয়ে দেখতে দেখতে চলে গেল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পূর্ণ একটি বছর। স্বজন হারানোর আহাজারি, আহতদের ক্ষত এবং সর্বোপরি বিজয় উল্লাসের মিশেল এ ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিএনপি-এনসিপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নজীর সৃষ্টি করতে চায় সবাই। শুধু তাই নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর বিশেষ ফিচার, নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। একইসঙ্গে মাসব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয় দেখাতে চায় আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপনের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে জুলাই উদ্যাপন-সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপনে ইতোমধ্যে উদ্যাপন-সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থান উপলক্ষে গ্রাফিতির বই, পোস্টার, চলচ্চিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর তথ্য ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। গৃহীত কর্মসূচির আওতায় ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর বিশেষ ফিচার, নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। সে সঙ্গে, গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী বিলবোর্ড স্থাপন, পোস্টার ও ফেস্টুন মুদ্রণ ও বিতরণ করা হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর রচিত গ্রন্থ এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে চলচ্চিত্র শ্রাবণ বিদ্রোহের প্রিমিয়ার প্রদর্শনী; যা আগামী ৫ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে জেলা তথ্য অফিসগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে শ্রাবণ বিদ্রোহ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি সারা দেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রদর্শন করা হবে। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কর্মসূচি অনুযায়ী, তথ্য ভবন, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারণ করা আলোকচিত্র ও গ্রাফিতি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এছাড়া অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবারকে সম্মাননা, বিশেষ অনুদান ও উপহার দেওয়া হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে অনুষ্ঠিত হবে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার।
জুলাই বিপ্লব স্মরণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। দলটি ৩৬ দিনব্যাপী শোক ও বিজয়ের কর্মসূচিগুলোকে সর্বজনীন রূপ দিতে চায়। শহীদ পরিবারকে সম্মাননা প্রদান থেকে শুরু করে বিজয় মিছিল, মৌন মিছিল, ছাত্র সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, রক্তদান, গ্রাফিতি অঙ্কন, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্তত ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজন সফল ও ব্যাপকভাবে পালন করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ৭টি কমিটি করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ৩০ জুন দিবাগত রাতে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ কর্মসূচি দিয়ে ৩৬ দিনের এই কর্মসূচি শুরু করেছে দলটি। আজ ১ জুলাই সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে । ওই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি ঘোষিত অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-৩ জুলাই দেশব্যাপী (জেলা পর্যায়ে) ড্যাবের উদ্যোগে রক্তদান কর্মসূচি। ৫ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট। ৯ জুলাই বিএনপি নেত্রী ফারজানা পুতুল ও ‘মায়ের ডাকের’ সানজিদা তুলির তত্ত্বাবধায়নে সেমিনার। ১১ জুলাই জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১২ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় সভা। ১৪ জুলাই শহীদ মিনারে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে অনুষ্ঠান। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান। ১৬ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে শহীদ ওয়াসিম ও শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্র সমাবেশ। ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের স্মরণে স্মরণসভা। ২৩ জুলাই শাহবাগে ‘জুলাইয়ে লাশের সারি’ শীর্ষক প্রতীকী স্মৃতিস্তম্ভ প্রদর্শন এবং দৃক গ্যালারিতে ফ্যাসিস্ট কার্টুন প্রদর্শনী, ২৬ জুলাই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘রোড টু জুলাই’ শিরোনামে গ্রাফিতি অঙ্কন ও গণসঙ্গীত পরিবেশন, ২৭ জুলাই বিভাগীয় পর্যায়ে গ্রাফিতি অঙ্কন ও গণসঙ্গীত পরিবেশন, ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘পালাব না, কোথায় পালাব? শেখ হাসিনা পালায় না’ শীর্ষক পথনাটক এবং বিপ্লবের স্পট উত্তরা, রামপুরা, মিরপুর ও যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ এবং সর্বশেষ ৬ আগস্ট বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে বিজয় মিছিল করা হবে।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ১ জুলাই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের জন্য দেশব্যাপী শাখায় শাখায় দোয়া অনুষ্ঠান, ২ থেকে ৪ জুলাই দেশব্যাপী দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ; ৮ থেকে ১৫ জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন জামায়াত নেতারা। ১৬ জুলাই জুলাই আন্দোলনে প্রথম অকুতোভয় শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান (রংপুরে) ১৯ জুলাই জামায়াত ঘোষিত ৭-দফা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দলীয় নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। একইদিন শহীদ পরিবার কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির অংশগ্রহণ করবেন। ২০ থেকে ২৪ জুলাই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ও গণ-প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা হবে। ২৫ থেকে ২৮ জুলাই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ওপর ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২৯ থেকে ৩০ জুলাই মহিলা ও ছাত্রীদের উদ্যোগে কেন্দ্রসহ সব শাখায় সারাদেশে আলোচনা সভার আয়োজন। ১ আগস্ট জাতীয় সেমিনার করা হয়েছে। যেখানে শহীদদের স্মরণে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১০ খণ্ডের যে স্মারক প্রকাশ করা হয়েছে তার ইংরেজি ও আরবি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। ১ থেকে ৩ আগস্ট ছাত্রদের উদ্যোগে আলোকচিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচি পালন। জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক বিজয়ের দিন, পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদের দেশ ছেড়ে পলায়নের দিন। সেদিনটিকে স্মরণ করতে দেশব্যাপী গণমিছিল পালন করবে দলটি। এছাড়া রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন দলটির নেতারা। ৬ থেকে ৮ আগস্ট সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী ও আলেম-ওলামাদের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোর অনুষ্ঠান। এভাবেই ১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম, সাংবাদিক, সুধীজন, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সফল করতে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
এনসিপির মাসব্যাপী কর্মসূচি: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপির উদ্যোগে ১ জুলাই পদযাত্রা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলায় হবে। এছাড়া শহীদদের ঘরে ঘরে যাব, সব শ্রেণির মানুষের কাছে যাব, কথা বলব, কথা শুনব। ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত পদযাত্রা চলবে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ শহীদ হন। এদিন বৈষম্যবিরোধী শহিদ দিবস পালন করব। আর ৩ আগস্ট ঘোষণাপত্র পাঠ ও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদ্যাপন করা হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ থাকতে হবে। কতদিনে বিচার কাজ শেষ হবে তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার না করলেও আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবো। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করার কথা থাকলেও তা হয়নি। তাই আমরা এখন এটা করব। এটা আমাদের দায়িত্ব।
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান উদ্যাপনে প্রতীকী রোডমার্চ, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৪ জুলাই স্মরণে প্রতীকী মিছিল, রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবরে দোয়া ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ, গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের প্রতীকী সম্মাননা প্রদান ও সংবর্ধনা, রায়েরবাজারে গণকবরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও দোয়া, আলোচনা সভা, প্রতীকী রোডমার্চ ও পথসভা, স্মারকলিপি প্রদান এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ১ জুলাই শুরু হয়ে এসব কর্মসূচি চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন হয়নি। হাজারো মানুষের রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে সিংহাসন ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। কাজেই শুধু একটা নির্বাচন করে ক্ষমতায় নতুন সরকার বসলেই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার পূর্ণ হবে না। বরং একাত্তর, নব্বই ও চব্বিশের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবার ঐকমত্যে পৌঁছার মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, গুম খুনের বিচার, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন দাবিতে ৩৬ দিন ধরেই নানাভাবে স্মরণ ও উদ্?যাপন করার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক এই প্লাটফর্মটি। সোমবার পুরানা পল্টনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র, প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম এবং গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পরবর্তী কর্মসূচি শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১ জুলাই থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী গণসংযোগ; ৪ জুলাই: বরিশাল বিভাগীয় গণসংযোগ; ৫ জুলাই : রংপুর বিভাগীয় গণসংযোগ; ১১ জুলাই : চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসংযোগ; ১২ জুলাই: সিলেট বিভাগীয় গণসংযোগ; ১৫ জুলাই : নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ স্মরণ; ১৬ জুলাই: দোয়া ও শহীদদের কবর জিয়ারত; ১৮ জুলাই : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধ স্মরণ; ১৮ জুলাই: খুলনা বিভাগীয় গণসংযোগ; ১৯ জুলাই: রাজশাহী বিভাগীয় গণসংযোগ; ১৯ জুলাই: মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ স্মরণ; ২০ জুলাই: মেহনতী মানুষের প্রতিরোধ স্মরণ; ২৫ জুলাই: ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণসংযোগ; ২৬ জুলাই: ঢাকা বিভাগীয় গণসংযোগ; ১ আগস্ট: জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল; ৩ আগস্ট: হাসিনা পতনের ১ দফা দাবি স্মরণ এবং ৫ আগস্ট: গণঅভ্যুত্থান ও নতুন বাংলাদেশ দিবস উদ্?যাপন করবে আপ বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব আরেফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ, প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ এবং মুখপাত্র সারমিন সুলতানা ইরাসহ অনেকেই।    
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিতে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মতোই আশাবাদী জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। তবে নির্বাচনের পাশাপাশি দলটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান নিয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে নির্বাচন যেমন প্রয়োজন, তেমনি পূর্ববর্তী সব গণহত্যার বিচারও অপরিহার্য। অথচ আমরা ক্রমাগত ভুলে যাচ্ছি পিলখানা, শাপলা চত্বর, মোদী বিরোধী আন্দোলন এবং লগি-বৈঠাসহ অসংখ্য রক্তক্ষয়ী ঘটনার কথা। জাগপা নেতারা এ সময় দাবি করেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারেরই নয়, জাতীয় সার্বভৌমত্বেরও পরিপন্থি। রাশেদ প্রধান বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যা, পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়া, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং শেখ হাসিনাকে এক বছর ধরে দিল্লিতে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারত তাদের আগ্রাসী অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সংবাদ সম্মেলনে জাগপা তিন দফা দাবি পেশ করে। সেগুলো হলো-১. গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়াসহ সীমান্ত হত্যা, ভূমি দখল, পানির বণ্টনে বৈষম্য ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ইত্যাদি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ২. জুলাই, পিলখানা, শাপলা চত্বর, মোদী বিরোধী আন্দোলন এবং লগি-বৈঠা গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৩. গুম, খুন, হামলা, মামলা, অর্থপাচার ও লুটপাটে জড়িত সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ-এর বিচার করতে হবে। এছাড়া জুলাইয়ে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি-১ জুলাই: জুলাই শহীদদের স্মরণে দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ২ জুলাই-৩০ জুলাই: ভারতীয় আগ্রাসন, গণহত্যা এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ৮ বিভাগীয় শহর এবং ২০ সাংগঠনিক জেলায় গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি। ৩১ জুলাই: আহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল। ৫ আগস্ট: বাংলাদেশের নাজাত দিবস পালন এবং শোকরানা নামাজ। ৬ আগস্ট: গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমরা সংস্কার চাই, ভারতীয় প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কিন্তু তার আগে চাই ন্যায়বিচার ও জাতীয় মুক্তি।
এদিকে আগামী ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান’ দিবস উদযাপন এবং ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ’ দিবস পালন করা হবে। ৮ আগস্টের জন্য কোনো বিশেষ উদযাপন থাকবে না। রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান। তিনি ফেসবুকে লেখেন, উপদেষ্টা পরিষদ ১৬ জুলাই শহীদ দিবস এবং ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পরিপত্র জারি করে। তবে এই ঘোষণা নিয়ে আপত্তি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তবে আমরা বেঁচে থাকতে ৮ আগস্টকে নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করতে দেওয়া হবে না। সরকার এমন কিছু করলে ঐদিন সারাদেশে পালিত হবে বিপ্লব-বেহাত দিবস বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net