শিশু সৌরভ হত্যার দুসপ্তাহেও উদঘাটন হয়নি রহস্য

আপলোড সময় : ০১-০৭-২০২৫ ১২:০৭:০৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০১-০৭-২০২৫ ১২:০৭:০৬ অপরাহ্ন
নেত্রকোনা প্রতিনিধি ছয় বছরের শিশু সৌরভ বাড়ির পাশে এক শিক্ষিকার ঘরে প্রাইভেট পড়তে যায়। তারপর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির প্রায় তিন ঘণ্টা পর একই গ্রামের বনর চৌধুরীর গোয়ালঘর থেকে রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। তখন শিশুর শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা। গত ১৬ জুন সকাল ৬টা ২০ মিনিট থেকে ৮টার মধ্যে নেত্রকোনার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের দেওসহিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে ১৪ দিনেও হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকে নির্বাক গ্রামের লোকজন। হত্যাকাণ্ড নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে চলছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা। তাদের দাবি, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য জানাতে পারেনি পুলিশ। হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সৌরভের পরিবারের প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মো. জিয়া (৪৫), সম্রাট মিয়া (৪২), লালন মিয়া (৫৩), নুপুর মিয়া (৩৫), বাকী মিয়া (২৮), মো. সালমান (১৯) ও মো. হোসাইনসহ (২০) সাত জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে মদন থানায় হত্যা মামলা করেন শিশুটির বাবা সবু উল্লাহ। এর আগে ঘটনার দিনই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। সেদিনই একই গ্রামের অপু, এফজি, লালন মিয়া, নুপুর মিয়া, জয় ও মুদি দোকানি জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ। ওই দিন রাতেই মামলা দায়ের হলে এজাহারনামীয় লালন মিয়া ও নুপুর মিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অন্য চার জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওই দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ওই চার জনকে ছাড়াতে পুলিশের সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা। তিনি বলেন, যদি তারা নিরপরাধ হয়ে থাকে তাহলে টাকার বিনিময়ে ছাড়লো কেন পুলিশ? মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন। বাড়িতে আছের নারী-শিশুরা। মামলার আসামি জিয়ার স্ত্রী সীমা আক্তার, লালন মিয়ার স্ত্রী মেরিনা আক্তার, সম্রাট মিয়ার স্ত্রী রিমা আক্তার ও নুপুর মিয়ার স্ত্রী তানিয়া আক্তার জানান, শত্রুতাবশত তাদের স্বামীদের মামলার আসামি করা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামিরা ঘটনায় জড়িত নয়। সন্দেহ করে আসামি করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। স্থানীয় লোকজন জানান, সবু উল্লাহর ভাই নিক্সন মিয়ার পা কেটে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য নুপুর মিয়ার অটোরিকশায় করে নিয়ে যেতে বলেন। তখন নুপুর মিয়া অসম্মতি জানালে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে সৌরভকে প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যা করে লাশ বনর চৌধুরীর গোয়ালঘরে ফেলে রেখে যায়- এমন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে বাদী-বিবাদীসহ সবার মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় গিয়ে সৌরভের পরিবার, তার প্রাইভেট শিক্ষিকা, যে গোয়ালঘরে লাশ পাওয়া যায় তার মালিক ও স্থানীয় এক মুদি দোকানিসহ গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। শিক্ষিকা পলাশী আক্তার বলেন, সৌরভ প্রতিদিনের মতো ওই দিনও সকাল ৬টার দিকে আমার কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। কিছুক্ষণ পর দোকান থেকে মজা কিনে খাওয়ার কথা বলে বইপত্র রেখে বের হয়ে যায়। আর পড়তে না এলে আমি ধরে নিই, হয়তো বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খুঁজতে বের হন। তারা ছুটে যান শিক্ষিকা পলাশীর কাছে। তার কথা মতো গ্রামের মুদি দোকানি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কাছে ছুটে যান। দোকানি শিশুটির পরিবারকে জানান, সকাল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে সৌরভ তার দোকান থেকে ছয়টি পাইলট সিগারেট কিনে নিয়ে যায়। এর বেশি কিছুই জানেন না। পরে গ্রামের পুকুর, ডোবা, হাওরসহ পুরো এলাকায় খুঁজতে শুরু করেন। কোথাও সন্ধান মেলেনি। সকাল ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরের মুদি দোকান সংলগ্ন বনর চৌধুরী গোয়ালঘর পরিষ্কার করতে গেলে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তখন বিষয়টি অন্যদের জানালে পরিবারের লোকজন গোয়ালঘর থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে যান। খবর পেয়ে মদন থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। গোয়ালঘরের মালিক বনর চৌধুরী বলেন, আমি সকাল ৯টার দিকে গোয়ালঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে শিশুটির লাশ পড়ে থাকতে দেখি। প্রথমে মনে হয়েছিল, লুকিয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু শরীরে ধাক্কা দিয়ে বুঝতে পারি মৃত। তখন রক্তাক্ত লাশ দেখে চিৎকার করলে পরিবারের লোকজন ছুটে এসে নিয়ে যায়। তবে কে বা কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কিছুই জানি না। তবে আমাকে ফাঁসাতে লাশ এখানে রেখে গেছে তারা। মুদি দোকানি জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ঘটনার পর পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমি যা জানি, তাই বলেছি। পরে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। মদন থানার ওসি নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, মামলার এজাহারনামীয় সাত জন আসামির মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি। তবে মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি আমরা। অচিরেই রহস্য বেরিয়ে আসবে। টাকার বিনিময়ে আটক চার জনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, ছয় জনকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে বাদী সাত জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দিলে এজাহারনামীয় দুজনকে রেখে অন্য চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। বাদী মামলা দায়েরের পর এখন যা ইচ্ছে তাই বলছেন। তবে এজাহারনামীয় আসামিদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তারা নিরাপরাধ এবং ষড়যন্ত্রের শিকার। পুলিশ ঘটনার রহস্য উন্মোচন না করেই তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। এ ব্যাপারে ওসি বলেন, নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের খুঁজে বের করতে পারলেই ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন হত্যার রহস্যও জানা যাবে।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net