১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারী সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা

সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ পুলিশের লাঠিচার্জ

আপলোড সময় : ১৫-০৬-২০২৫ ১১:৫৬:৩৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-০৬-২০২৫ ১১:৫৬:৩৯ অপরাহ্ন
* পুলিশকে কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে  ডিসি মাসুদ আলম


তিন দফা দাবি আদায়ে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারী শিক্ষকরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা করলে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা সচিবালয় এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে তা মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগ প্রত্যাশীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাঁচটির বেশি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এরআগে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা। পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) আওতায় দ্রুত নিয়োগের দাবিতে প্রেস ক্লাব থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। তবে সচিবালয় এলাকায় আগে থেকে সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ছিল বলে জানায় পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিছিলকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করে সচিবালয়ের ফটকের কাছাকাছি চলে গেলে পুলিশ তাদের থামার অনুরোধ করে। আন্দোলনকারীরা সেই অনুরোধ না মানলে পুলিশ প্রথমে পাঁচটি ও পরে আরও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে ফিরে অবস্থান নেন।
জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রোববার ‘লংমার্চ টু সচিবালয়’ করেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ৫টির বেশি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেই সঙ্গে করা হয় লাঠিচার্জও। এক নিবন্ধনধারী বলেন, আমরা বারবার শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। অথচ সরকার বারবার তা উপেক্ষা করছে। এনটিআরসিএ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে অথচ আমাদের ১৭তম ব্যাচের সমস্যার সমাধান করছে না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিতে চাই।
১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের মধ্যস্থতায় পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে গেছেন। এদিন দুপুরে তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে শিক্ষা সচিবের উদ্দেশ্যে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। এরআগে, প্রেস ক্লাব থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল থামিয়ে দেয়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, ওনাদের মধ্যে আমরা পাঁচজনকে সচিবালয় পাঠিয়েছি যেন তারা সংশ্লিষ্ট দফতরে গিয়ে কথা বলে বিষয়গুলো আপডেট নিয়ে আসে। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। কিন্তু হঠাৎ তারা সচিবালয়ের দিকে রওনা হলে আমরা বাধা দিই এবং পরিস্থিতি সমাধানে আলোচনার পথ খুলি। তখন পাঁচজনকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি, আজকের ঘটনায় পাঁচ থেকে ছয় জন আহত হয়েছেন। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের এক থেকে দুই রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে হয়েছে। এতে আমাদের দুই-একজন পুলিশ সদস্যও সামান্য আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সকাল থেকেই ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। হঠাৎ করে দুপুর দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের দিক থেকে লং মার্চ শুরু করেন। এ সময় আমরা জানতে পারি, তারা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৭তম ব্যাচের প্রার্থী। ডিসি মাসুদ আলম বলেন, সচিবালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা এলাকা এবং সেখানে মিটিং মিছিলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই কারও সচিবালয়ে ঢোকার সুযোগ নেই। আমরা শুধুমাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করেছি। তবে আন্দোলনকারীরা জানান, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এনটিআরসিএ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছেন। তারা ১৭তম ব্যাচের সমস্যা দ্রুত সমাধানের বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাব মোড়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-১. ১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের জন্য আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে। ২. ১৭তম ব্যাচের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে। ৩. আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএর সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি ছিল থমথমে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে গত ৮ জুন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জনশৃঙ্খলা এবং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে ৯ জুন ২০২৫ সোমবার হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড়, অফিসার্স ক্লাব মোড়, মিন্টু রোড) যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net