
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাস, ট্রেন, লঞ্চ সব যানেই মানুষের উপচেপড়া ভিড়। রাস্তায় ঢল নেমেছে ঘরমুখো মানুষের। এতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ছাড়তে ভিড় এখন স্টেশন ও টার্মিনালগুলোয়। শহরের মানুষের একটা বড় অংশই এখন রাস্তায়। উদ্দেশ্য, প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ উদ্যাপন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। গতকাল বুধবার শেষ কর্মদিবসে হাজিরা দিয়েই কেউ কেউ রওনা দিয়েছেন বাড়ির পথে, আবার কেউ রওনা দিবেন আজ। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে ।
এদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে উপচেপড়া মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে স্টেশনে চেকিং ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গাবতলী, মহাখালী, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ভিড় জমেছে যাত্রীদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চাপ। দুপুরের পর ভিড় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। যাত্রীচাপে আশপাশের সড়কে তৈরি হয়েছে যানজট। গাড়ি ছাড়তে দেরি হচ্ছে কিছুটা। তবু ভোগান্তি এখনো নিয়ন্ত্রণে। শেষ কর্মদিবসে কেউ অফিস শেষে ছুটছেন বাস ধরতে, কেউবা দুপুরেই রওনা হয়েছেন। অনেকেই আবার পরিবারকে আগেই পাঠিয়ে বের হচ্ছেন পরে।
সরেজমিনে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, আগের দিনগুলোর তুলনায় যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়েছে। তবে, উত্তরবঙ্গের রুটে বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গাবতলী বাস টার্মিনালে মো. ফারহান নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে বগুড়ার ভাড়া আগে ১ হাজার টাকা ছিল, এখন ২ হাজার টাকার বেশি চাওয়া হচ্ছে। ঈদ এলেই পরিবহন সিন্ডিকেট ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এর কোনো তদারকি নেই। তবে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জকরিয়া ও মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এ নিয়ে গতকাল বুধবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতৃদ্বয়। তারা বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। সরকার অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথা বললেও, বিভিন্ন বাস ও লঞ্চে প্রকাশ্যে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে শুধু বাস ও লঞ্চ মালিকদের নিয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে, যা স্বৈরাচারী। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে চাঁদা কমলেও ভাড়া না কমায় যাত্রীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এবার ঈদে উত্তরবঙ্গের রুটে এসি ও নন-এসি বাসে ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে উত্তরবঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় হচ্ছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, বগুড়া, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও রুটেও বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, সদরঘাট নৌবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের রুটে অতিরিক্ত ভাড়ায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আকাশপথে ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে উচ্চ ভাড়া আদায় হচ্ছে। তিনি অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের জন্য জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানান।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখী মানুষের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে, এবং ৩০ হাজার ১৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল। তিনি বলেন, যানবাহনের চাপ বাড়লেও সেতুতে যানজট নেই। যানজট নিরসনে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে ১৮টি টোল বুথ এবং মোটরসাইকেলের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে দুটি রেকার রাখা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে। তবে এর আগেই ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, যানবাহনের চাপ বেড়েছে সড়কে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। বুধবার সকাল আটটায় চট্টগ্রামগামী লেনে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ধীরে ধীরে যানজট কমছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা দিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। একসঙ্গে অসংখ্য যানবাহন পারাপারের কারণে টোল প্লাজায় অনেক সময় যানবাহন পারাপারে ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সেখানেও যানজট তৈরি হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। বুধবার ভোর চারটায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু এলাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল আটটায় যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটারে পৌঁছায়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে যানজট কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে যানজট ছিল। এদিন সকাল আটটায় যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটারে পৌঁছায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে যানজট কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে যানজট ছিল। সকাল ৯টায় মহাসড়কের কানড়া এলাকায় কথা হয় কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কমল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোর পাঁচটায় ঢাকার কাজলা থেকে সায়মুন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছার পর থেকেই যানজটে আটকা পড়ি। এতে এক ঘণ্টার পথ চার ঘণ্টায় অতিক্রম করতে হয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী, উপজেলার সিঙ্গুলা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন সকাল সোয়া ৯টায় মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে ছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকার যাত্রাবাড়ি আড়ত থেকে মাছ কিনে, ভোর পাঁচটায় সেন্ট মার্টিন পরিবহনের বাসে উঠেন। মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছার পর যানজটে আটকা পড়েন। এতে সাড়ে তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়েছে। মাছ নিয়ে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় লাভের বিপরীতে লোকসানও হতে পারে। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা মতলব দক্ষিণ উপজেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সৃজন চন্দ্র মজুমদার একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তবে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি, দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই গাজীপুরের চন্দ্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ও চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে বাড়িমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার ভোররাতে যমুনা সেতু সংযোগ সড়কে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হওয়ায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা যায়, ভোররাত থেকে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে কয়েক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে ঘরমুখো মানুষ। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীরা। সকাল থেকে মহাসড়কে গণপরিবহনের চেয়ে ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গণপরিবহন না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাকে করে গন্তব্য পৌঁছাতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেকেই গরুবাহী খোলা ট্রাকে বাড়ি ফিরছেন। তবে উত্তরের ঘরমুখো মানুষ বলছে, ৩০০ টাকার ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীরা।
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বুধবার ঢাকায় কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা জানান। ট্রেনের শিডিউল ঠিক রাখতে সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যথাসময়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিতে শিডিউল মতো ট্রেন আসা-যাওয়া করছে। এর জন্য সবাই মিলে কাজ করছে। তিনি বলেন, ট্রেনে যাত্রী পরিবহন নিরাপদ করতে ছাদে উঠতে যাত্রীদের অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের জন্য ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি বন্ধেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে উপচেপড়া মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে স্টেশনে চেকিং ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গাবতলী, মহাখালী, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ভিড় জমেছে যাত্রীদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চাপ। দুপুরের পর ভিড় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। যাত্রীচাপে আশপাশের সড়কে তৈরি হয়েছে যানজট। গাড়ি ছাড়তে দেরি হচ্ছে কিছুটা। তবু ভোগান্তি এখনো নিয়ন্ত্রণে। শেষ কর্মদিবসে কেউ অফিস শেষে ছুটছেন বাস ধরতে, কেউবা দুপুরেই রওনা হয়েছেন। অনেকেই আবার পরিবারকে আগেই পাঠিয়ে বের হচ্ছেন পরে।
সরেজমিনে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, আগের দিনগুলোর তুলনায় যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়েছে। তবে, উত্তরবঙ্গের রুটে বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গাবতলী বাস টার্মিনালে মো. ফারহান নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে বগুড়ার ভাড়া আগে ১ হাজার টাকা ছিল, এখন ২ হাজার টাকার বেশি চাওয়া হচ্ছে। ঈদ এলেই পরিবহন সিন্ডিকেট ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এর কোনো তদারকি নেই। তবে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জকরিয়া ও মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এ নিয়ে গতকাল বুধবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতৃদ্বয়। তারা বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। সরকার অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথা বললেও, বিভিন্ন বাস ও লঞ্চে প্রকাশ্যে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে শুধু বাস ও লঞ্চ মালিকদের নিয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে, যা স্বৈরাচারী। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে চাঁদা কমলেও ভাড়া না কমায় যাত্রীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এবার ঈদে উত্তরবঙ্গের রুটে এসি ও নন-এসি বাসে ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে উত্তরবঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় হচ্ছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, বগুড়া, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও রুটেও বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, সদরঘাট নৌবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের রুটে অতিরিক্ত ভাড়ায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আকাশপথে ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে উচ্চ ভাড়া আদায় হচ্ছে। তিনি অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের জন্য জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানান।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখী মানুষের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে, এবং ৩০ হাজার ১৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল। তিনি বলেন, যানবাহনের চাপ বাড়লেও সেতুতে যানজট নেই। যানজট নিরসনে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে ১৮টি টোল বুথ এবং মোটরসাইকেলের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে দুটি রেকার রাখা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে। তবে এর আগেই ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, যানবাহনের চাপ বেড়েছে সড়কে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। বুধবার সকাল আটটায় চট্টগ্রামগামী লেনে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ধীরে ধীরে যানজট কমছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা দিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। একসঙ্গে অসংখ্য যানবাহন পারাপারের কারণে টোল প্লাজায় অনেক সময় যানবাহন পারাপারে ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সেখানেও যানজট তৈরি হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। বুধবার ভোর চারটায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু এলাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল আটটায় যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটারে পৌঁছায়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে যানজট কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে যানজট ছিল। এদিন সকাল আটটায় যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটারে পৌঁছায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে যানজট কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে যানজট ছিল। সকাল ৯টায় মহাসড়কের কানড়া এলাকায় কথা হয় কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কমল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোর পাঁচটায় ঢাকার কাজলা থেকে সায়মুন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছার পর থেকেই যানজটে আটকা পড়ি। এতে এক ঘণ্টার পথ চার ঘণ্টায় অতিক্রম করতে হয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী, উপজেলার সিঙ্গুলা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন সকাল সোয়া ৯টায় মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে ছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকার যাত্রাবাড়ি আড়ত থেকে মাছ কিনে, ভোর পাঁচটায় সেন্ট মার্টিন পরিবহনের বাসে উঠেন। মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছার পর যানজটে আটকা পড়েন। এতে সাড়ে তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়েছে। মাছ নিয়ে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় লাভের বিপরীতে লোকসানও হতে পারে। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা মতলব দক্ষিণ উপজেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সৃজন চন্দ্র মজুমদার একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তবে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি, দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই গাজীপুরের চন্দ্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ও চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে বাড়িমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার ভোররাতে যমুনা সেতু সংযোগ সড়কে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হওয়ায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা যায়, ভোররাত থেকে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে কয়েক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে ঘরমুখো মানুষ। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীরা। সকাল থেকে মহাসড়কে গণপরিবহনের চেয়ে ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গণপরিবহন না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাকে করে গন্তব্য পৌঁছাতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেকেই গরুবাহী খোলা ট্রাকে বাড়ি ফিরছেন। তবে উত্তরের ঘরমুখো মানুষ বলছে, ৩০০ টাকার ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীরা।
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বুধবার ঢাকায় কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা জানান। ট্রেনের শিডিউল ঠিক রাখতে সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যথাসময়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিতে শিডিউল মতো ট্রেন আসা-যাওয়া করছে। এর জন্য সবাই মিলে কাজ করছে। তিনি বলেন, ট্রেনে যাত্রী পরিবহন নিরাপদ করতে ছাদে উঠতে যাত্রীদের অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের জন্য ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি বন্ধেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।