
বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দলটি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আনতে না পারা দলটি আপাতত কঠিন আন্দোলনে না গিয়ে গতানুগতিক কর্মসূচির পাশাপাশি দল গোছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির শীর্ষনেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এবার সংগঠনকে কার্যকর করতে বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন ৮ বছর অতিবাহিত হলেও সহসাই কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান। তবে এ বছর সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হলেও পূরণ করা হবে শূন্যপদগুলো। ইতিমধ্যে এর কাজও শুরু করেছে দলটি।
তারা বলছেন, চলতি বছর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আনা হবে নতুন নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে ছাত্রদলে। ছাত্রদল ছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, জাসাস, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলেও পরিবর্তন আনা হবে। শ্রমিক দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দশক আগে।
দলটির সূত্র জানান, বিভিন্ন কমিটিতে পরিবর্তন আনলেও তা কোনো কাউন্সিলের মাধ্যমে হচ্ছে না। ছাত্রদলের মতোই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এবারের নেতৃত্বে বিগত আন্দোলনে যাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো তাদেরকেই দেয়া হবে। বিশেষ করে সাবেক ছাত্রনেতাদেরই দেয়া হবে প্রাধান্য।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। যদিও মহানগরের দুটি ইউনিটই ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মহানগরের কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় করা হবে। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও ঘোষণা হতে পারে যেকোনো সময়। বিগত আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জোরালো ভূমিকা না রাখার অভিযোগও রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক দলে দেখা যেতে পারে নতুন নেতৃত্ব।
শ্রমিক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দশকেরও বেশি সময়। দীর্ঘদিন সম্মেলন বা কমিটি পরিবর্তন না হওয়ায় অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে এ সংগঠনটি। যদিও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শ্রমিক দলকে চাঙ্গা করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তাঁতী দল দীর্ঘদিন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে চললেও সংগঠনের ভেতরের একটি অংশ মূল নেতৃত্বের বিরোধিতা করে আসছেন। সেই অংশটি একাধিক সভাতে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিয়েছেন। ছিঁড়ে ফেলেছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পোস্টার-ফেস্টুন। মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বিরোধও বিএনপিতে ওপেন সিক্রেট। জাসাস একসময় শক্তিশালী সংগঠন হলেও বর্তমানে নেই কোনো কার্যক্রম।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হতে পারে। এর মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুনদের আনা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে পাঁচটি পদ খালি আছে। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের ১৭টি, উপদেষ্টা পরিষদের ১৭টি এবং সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক মিলে একশর মতো পদ খালি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে আইন, যুব, জলবায়ু পরিবর্তন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং ছাত্রবিষয়ক, তথ্য ও গবেষণা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদকের পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে যুব ও ছাত্রবিষয়ক সহ-সম্পাদকের দুটি পদ ৮ বছরেও পূর্ণ হয়নি। আর বাকিগুলো রদবদল, মৃত্যু, বহিষ্কার কিংবা পদত্যাগের কারণে শূন্য হয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এখন ৮ থেকে ১০ জনের বেশি সদস্য উপস্থিত থাকেন না। নির্বাহী কমিটির অনেকে অসুস্থ ও বয়সজনিত কারণে নিষ্ক্রিয়। অনেকেই জেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করায় কেন্দ্রে সময় দিতে পারেন না। আবার কেউ কেউ কেন্দ্রে থাকলে এলাকায় সময় দিতে পারেন না। ফলে নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ এবং ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির গত কাউন্সিলের পর থেকেই স্থায়ী কমিটিতে দুটি পদ খালি ছিল। পরবর্তী সময়ে এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদ মারা যান। এ ছাড়া সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করেন। সব মিলিয়ে স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদের সংখ্যা সাতটিতে দাঁড়ায়। এর মধ্যে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে এখনো পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। আবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খালেদা জিয়া ‘সাজাপ্রাপ্ত’ ও অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতিতে ‘সক্রিয়’ নন। চিকিৎসাধীন থাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। নব্বইয়ের বেশি বয়সি জমির উদ্দিন সরকার বৈঠকে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন। বিদেশে অবস্থান করায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারছেন না ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ অবস্থায় সক্রিয় নেতাদের দিয়ে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণের জন্য দলের ভেতর দাবি উঠছে।
স্থায়ী কমিটির শূন্যপদের জন্য বেশ কয়েকজন নেতা আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নুল আবেদিন, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। যুগ্ম মহাসচিব পদের জন্য আলোচনায় আছেন সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, প্রশিক্ষণবিষয়ক সহ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুলসহ কয়েকজন।
জানা গেছে, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। এই পদের জন্য আলোচনায় আছেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, জি কে গউছ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আবদুল খালেক, মো. শরীফুল আলম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ আলী আহমদ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা সবসময়ই বলে এসেছি দলীয় সংগঠন গঠন এবং পুনর্গঠন একটি দলের নিয়মিত কার্যক্রম। অথচ অনেকেই বলেন ঘর গুছানোর বিষয়। রাজনৈতিক দল কোনো জামাকাপড় নয় যে তাকে আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে হবে। দল হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি কর্মীদের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে বটমআপ কনসেপ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটি নির্বাচিত হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা করছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিল অনুষ্ঠান সরকার কর্তৃক বিঘ্নিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আসুক। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা যেন অতিসত্বর আমাদের জাতীয় কাউন্সিলসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি পুনর্গঠনের জন্যে একটি শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয় পরিবেশ ফিরে পাই।
দলটির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাংগঠনিক কাজ চলমান প্রক্রিয়া। দলের কাউন্সিল এবং নেতৃত্ব পরিবর্তন এই প্রক্রিয়ারই অংশ। রাজনৈতিক পদ চিরস্থায়ী নয়। আর মূল নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে তাদের ত্যাগ ও যোগ্যতার ওপর।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংগঠন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। কখন কোন কমিটি পরিবর্তন হবে তা দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না। আমরা আন্দোলনে আছি। পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমও অব্যাহত রাখছি।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সাংগঠনিক ব্যাপারটা হলো রেগুলার প্রসেস। সাধারণভাবে শূন্যপদ পূরণের গণতান্ত্রিক ক্ষমতা চেয়ারপার্সনের আছে। তিনি শূন্যপদ পূরণ করতে পারেন। আর সম্মেলন বা নতুন কমিটি সংগঠনকে গতিশীল করতে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখে।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন ৮ বছর অতিবাহিত হলেও সহসাই কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান। তবে এ বছর সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হলেও পূরণ করা হবে শূন্যপদগুলো। ইতিমধ্যে এর কাজও শুরু করেছে দলটি।
তারা বলছেন, চলতি বছর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আনা হবে নতুন নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে ছাত্রদলে। ছাত্রদল ছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, জাসাস, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলেও পরিবর্তন আনা হবে। শ্রমিক দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দশক আগে।
দলটির সূত্র জানান, বিভিন্ন কমিটিতে পরিবর্তন আনলেও তা কোনো কাউন্সিলের মাধ্যমে হচ্ছে না। ছাত্রদলের মতোই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এবারের নেতৃত্বে বিগত আন্দোলনে যাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো তাদেরকেই দেয়া হবে। বিশেষ করে সাবেক ছাত্রনেতাদেরই দেয়া হবে প্রাধান্য।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। যদিও মহানগরের দুটি ইউনিটই ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মহানগরের কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় করা হবে। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও ঘোষণা হতে পারে যেকোনো সময়। বিগত আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জোরালো ভূমিকা না রাখার অভিযোগও রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক দলে দেখা যেতে পারে নতুন নেতৃত্ব।
শ্রমিক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দশকেরও বেশি সময়। দীর্ঘদিন সম্মেলন বা কমিটি পরিবর্তন না হওয়ায় অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে এ সংগঠনটি। যদিও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শ্রমিক দলকে চাঙ্গা করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তাঁতী দল দীর্ঘদিন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে চললেও সংগঠনের ভেতরের একটি অংশ মূল নেতৃত্বের বিরোধিতা করে আসছেন। সেই অংশটি একাধিক সভাতে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিয়েছেন। ছিঁড়ে ফেলেছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পোস্টার-ফেস্টুন। মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বিরোধও বিএনপিতে ওপেন সিক্রেট। জাসাস একসময় শক্তিশালী সংগঠন হলেও বর্তমানে নেই কোনো কার্যক্রম।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হতে পারে। এর মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুনদের আনা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে পাঁচটি পদ খালি আছে। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের ১৭টি, উপদেষ্টা পরিষদের ১৭টি এবং সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক মিলে একশর মতো পদ খালি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে আইন, যুব, জলবায়ু পরিবর্তন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং ছাত্রবিষয়ক, তথ্য ও গবেষণা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদকের পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে যুব ও ছাত্রবিষয়ক সহ-সম্পাদকের দুটি পদ ৮ বছরেও পূর্ণ হয়নি। আর বাকিগুলো রদবদল, মৃত্যু, বহিষ্কার কিংবা পদত্যাগের কারণে শূন্য হয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এখন ৮ থেকে ১০ জনের বেশি সদস্য উপস্থিত থাকেন না। নির্বাহী কমিটির অনেকে অসুস্থ ও বয়সজনিত কারণে নিষ্ক্রিয়। অনেকেই জেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করায় কেন্দ্রে সময় দিতে পারেন না। আবার কেউ কেউ কেন্দ্রে থাকলে এলাকায় সময় দিতে পারেন না। ফলে নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ এবং ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির গত কাউন্সিলের পর থেকেই স্থায়ী কমিটিতে দুটি পদ খালি ছিল। পরবর্তী সময়ে এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদ মারা যান। এ ছাড়া সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করেন। সব মিলিয়ে স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদের সংখ্যা সাতটিতে দাঁড়ায়। এর মধ্যে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে এখনো পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। আবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খালেদা জিয়া ‘সাজাপ্রাপ্ত’ ও অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতিতে ‘সক্রিয়’ নন। চিকিৎসাধীন থাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। নব্বইয়ের বেশি বয়সি জমির উদ্দিন সরকার বৈঠকে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন। বিদেশে অবস্থান করায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারছেন না ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ অবস্থায় সক্রিয় নেতাদের দিয়ে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণের জন্য দলের ভেতর দাবি উঠছে।
স্থায়ী কমিটির শূন্যপদের জন্য বেশ কয়েকজন নেতা আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নুল আবেদিন, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। যুগ্ম মহাসচিব পদের জন্য আলোচনায় আছেন সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, প্রশিক্ষণবিষয়ক সহ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুলসহ কয়েকজন।
জানা গেছে, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। এই পদের জন্য আলোচনায় আছেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, জি কে গউছ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আবদুল খালেক, মো. শরীফুল আলম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ আলী আহমদ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা সবসময়ই বলে এসেছি দলীয় সংগঠন গঠন এবং পুনর্গঠন একটি দলের নিয়মিত কার্যক্রম। অথচ অনেকেই বলেন ঘর গুছানোর বিষয়। রাজনৈতিক দল কোনো জামাকাপড় নয় যে তাকে আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে হবে। দল হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি কর্মীদের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে বটমআপ কনসেপ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটি নির্বাচিত হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা করছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিল অনুষ্ঠান সরকার কর্তৃক বিঘ্নিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আসুক। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা যেন অতিসত্বর আমাদের জাতীয় কাউন্সিলসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি পুনর্গঠনের জন্যে একটি শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয় পরিবেশ ফিরে পাই।
দলটির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাংগঠনিক কাজ চলমান প্রক্রিয়া। দলের কাউন্সিল এবং নেতৃত্ব পরিবর্তন এই প্রক্রিয়ারই অংশ। রাজনৈতিক পদ চিরস্থায়ী নয়। আর মূল নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে তাদের ত্যাগ ও যোগ্যতার ওপর।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংগঠন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। কখন কোন কমিটি পরিবর্তন হবে তা দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না। আমরা আন্দোলনে আছি। পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমও অব্যাহত রাখছি।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সাংগঠনিক ব্যাপারটা হলো রেগুলার প্রসেস। সাধারণভাবে শূন্যপদ পূরণের গণতান্ত্রিক ক্ষমতা চেয়ারপার্সনের আছে। তিনি শূন্যপদ পূরণ করতে পারেন। আর সম্মেলন বা নতুন কমিটি সংগঠনকে গতিশীল করতে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখে।