
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি জানান। ইশরাক লিখেছেন, গণতান্ত্রিক ভাষা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে, যৌক্তিক কারণেই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব ধরনের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, এটি প্রতীয়মান যে, আপনারা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ভবিষ্যতে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হবেন কিংবা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি আরও বলেন, এই প্রেক্ষাপটে আপনাদের পদত্যাগই যুক্তিযুক্ত এবং সেটিই বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। উপদেষ্টা পদে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সুবিধা প্রদানের আশঙ্কা অমূলক নয়। ক্ষমতা ধরে রাখলে আপনারা নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন না, এমনটি ইতিহাসও বলে। ইশরাক উদাহরণ টেনে বলেন, আপনাদের সহকর্মী নাহিদ ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণযোগ্য। তিনি চাইলে কিছুদিন মন্ত্রিত্ব ধরে রেখে পরে এনসিপিতে যোগ দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। অতীতে সারজিস আলম কিংবা হাসনাত আবদুল্লাহর মতো নেতারাও মন্ত্রিত্ব না নিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। হয়তো ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে ক্ষমতা ফিরে পাবেন। এ সময় ইশরাক নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আজ আমাকে অনেকে সমালোচনা করছেন, আন্দোলনের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জনগণকে বোঝানো প্রয়োজন ছিল যে, আপনাদের ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা যৌথ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফসল- এটা বুঝতে রাজনৈতিক সচেতনতা লাগে না। তিনি আরও বলেন, আইন-আদালতের রায় মেনে না নিলে দেশ সংস্কারের পথ কোথা থেকে শুরু হবে? আপনারা চাইলে সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমাকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপনারা পদত্যাগ করতে চাইছেন না কেন? জনগণ কি আপনাদের পদে থাকার পক্ষে? প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। এদিকে, ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ছয় দিন ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তার সমর্থকরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সমাধান না এলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে, ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল গতকাল বুধবার। এদিন শুনানি শেষে আবার আজ বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করা হয়। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিকেলে শুনানি শেষে এ আদেশের দিন নির্ধারণ করেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন বিএনপির ইশরাক হোসেন। তবে গত ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।