
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের চিত্র। নানা দাবিতে কথায় কথায় চলছে সড়ক অবরোধ। কোথাও কোথাও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাও এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কারো দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ চান সরকারিকরণ। বদলি নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন। ঢাকার কাঁধে এখন শুধু আন্দোলনের চাপ। দাবির ইস্যুতে ক্লান্ত ঢাকা। আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগ ব্যানারে লেখা বঞ্চিত আর বৈষম্যের শিকার জাতীয় শব্দ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ছয় মাসের অধিক সময়ে সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ বা হতাহতের ঘটনাও কম ঘটেনি। মাঝখানে কিছুটা বিরতি থাকলেও সম্প্রতি প্রতিদিনই সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে। শুধু রাজপথের আন্দোলনই নয়, দীর্ঘ ১৫ বছরের বঞ্চিত বলে দাবি-দাওয়া আদায়ে অবস্থান-অনশন হয়েছে সচিবালয়সহ সরকারি অফিসেও। এমএলএসএস থেকে শুরু করে বাদ যায়নি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও।
জানা গেছে, রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নগর ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাকেন্দ্রিক আন্দোলন কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগরজুড়ে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন তার সমর্থকেরা। আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ইশরাকের সমর্থকেরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে। তারা ঢাকা অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। নগর ভবনের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, আমরা আগামীকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না এলে বুধবার সকাল ১০টায় একত্রিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব।
এদিন বেলা ১১টা বাজতেই জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের অবস্থান কর্মসূচি। পরে গানে গানে আর সেøাগানে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো নগর ভবন এলাকা। মূল ফটকের সামনে ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে একে একে গান গাইছেন জাতীয়তাবাদী শিল্পী গোষ্ঠী। প্রথমেই শুরু করেন ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি দিয়ে, যা শতশত নেতা কর্মীরা একসাথে গলা ধরেন গানের তালে তালে। এর পর ‘আসছে আসছে ইশরাক আসছে’ ‘এমন একটা মা দে না’ ‘জিয়া তুমি আমার অহংকার’ ‘মা তুমি আমার আগে যেয়ো নাকো মরে’সহ এক এক করে গান গাইতে থাকেন শিল্পীরা। গানের আয়োজনের তদারকি করছেন সুরকার ইথুন বাবু। গানের বিরতি হলেই শুরু হয় ইশরাক নিয়ে সেøাগান ‘ইশরাক তোমার ভয় নাই রাজ পথ ছাড়ি নাই’ ‘শপথ নিয়ে টাল বাহানা চলবে না’ ‘আমাদের দাবি-আমাদের দাবি, মেনে নাও মেনে নাও’সহ নানান সেøাগান। এই সময় নগর ভবনের সামনে রাস্তায় সংকুলান না হওয়ায় ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান বঙ্গমার্কেট ও গোলাপ শাহ রোড বন্ধ করে রাস্তায় বসে পড়েন ইশরাক সমর্থনরা। কদমতলীর ৫২ নং ওয়ার্ডের বিএনপি সভাপতি রবিউল ইসলাম দিপু বলেন, এ আন্দোলন হলো আমাদের অধিকারে আন্দোলন, জনতার মেয়র ইশরাককে তো কোটে রায় দিয়েছে। তাহলে কেন শপথ দিতে টালবাহানা করছে? এই আন্দোলনে দল মত নির্বিশেষে সব থাকা উচিত। সব আন্দোলনে জনগণের কষ্ট হয়। কিন্তু দাবি আদায় করতে হলে কিছুটা কষ্ট মেনে নিতে হয়। কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ফারুক ইকবাল বলেন, আন্দোলন হলেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের মত সাধারন জনগণের, পুরা রাস্তা বন্ধ। সেই কদমতলী থেকে হেঁটে আসছি গুলিস্তান। শতশত গাড়ি আটকা পড়া, আমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবেন না।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার না পেলে সারা দেশ অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। ছাত্রদল সভাপতি বলেন, সাম্য হত্যার বিচার না পেলে আমরা ঢাকা অচল করে দেব। সারা দেশ অচল করে দেব। আমরা সরকারকে সময় দিচ্ছি। দ্রুত প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করুন। তিনি বলেন, আমরা সাতদিন ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এরপর কোনো অশান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে হলে এর দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।
এর আগে বিকেল ৩টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ এবং সাম্য হত্যার প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিব বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা সাম্যের প্রকৃত খুনি কি না, তা আমরা জানি না। সরকার আমাদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। তিনি বলেন, সাম্য-পারভেজ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। অবস্থা খুব নাজুক। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের সুবিধাভোগী যারা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন, তাদের সংগঠন রয়েছে, তারা আজ পর্যন্ত সাম্য হত্যার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায়ও দুঃখ প্রকাশ করেনি। আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। যারা পারভেজ-সাম্য হত্যার পর সামান্য সহানুভূতি প্রদর্শন করে না, তাদের প্রতি আমরা কোনো সহানুভূতি প্রদর্শন করব না।
সমাবেশে সাম্যের হত্যাকাণ্ডের পর ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে গুপ্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা নেতিবাচক বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। সাম্য হত্যার পর ১৪ মে হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ছাত্রশিবির। এই বিবৃতির প্রতি ইঙ্গিত করে তা ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান’ করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, সাম্য হত্যার পর আপনারা তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছে, এসব প্রশ্ন করছেন। সাগর-রুনি হত্যার পর খুনি হাসিনা যেমন বলেছিল ‘বেডরুমে পাহারা দেয়া সরকারের কাজ নয়’, তেমনি একদল ফিতা মেপে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ব্যর্থ প্রশাসন সিসিটিভি থেকে কোনো আলামত সংগ্রহ করতে পারেনি। যারা ফিতা মেপে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতামুক্ত রেখে) দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছেন, সেই উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধের পর বিকেল পৌনে ৫টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।
শুধু নগর ভবন কিংবা শাহাবাগেই নয় এদিন বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বাধার মুখে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার পর রাজধানীর বিজয় নগরে শ্রম ভবনের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে যমুনা অভিমুখে যেতে থাকেন তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এদিন বিকেল ৩টায় মিছিলটি কাকরাইল মসজিদ মোড়ে এলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাতে বাধা দেয়। এরপর থেকে তারা সেখানেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এতে কাকরাইল মসজিদ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালমুখী রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মৎস্যভবন থেকে কাকরাইলমুখী সড়কে চলাচলকারী যানাহনও আংশিক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিকেল সোয়া ৩টায় বৃষ্টি শুরু হলেও অবস্থান ছাড়েননি পোশাক শ্রমিকরা। বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা যায়। বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়া পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন আশুলিয়ায় অবস্থিত চেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, গাজীপুরে অবস্থিত টিএনজেড গ্রুপের আটটি প্রতিষ্ঠান ও ডার্ড গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দিতে দেখা গেছে।
বেশ কয়েকটি দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সিভিল সার্ভিসের ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে তারা বৃষ্টির মধ্যে বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করেন। এই কর্মসূচির ডাক দেয় আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম।
মানববন্ধন থেকে জানানো হয়, আগামী ২৬ মে’র মধ্যে কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ও বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আগামী ২৭ ও ২৮ মে অর্ধদিবস কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করা হবে। মানববন্ধনে কর্মকর্তারা দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির জন্য ২৫ ক্যাডারের ১২ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করা হয়েছিল। তবুও দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কার্যক্রম চলছে। তারা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, সরকারি বিধি-বিধান ভঙ্গ করে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে মারামারি করেছেন, মিছিল করেছেন। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কয়েকদিন আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপ-সচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে। কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আসছে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে কেউ দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে নামতে পারত না। পুলিশের লাঠিচার্জ-গুলি, পাশাপাশি হেলমেটবাহিনীর তাণ্ডবে আন্দোলন থমকে যেত। মানুষ এখন একটু ফ্রিলি কথা বলতে পারছে। ফলে তারা চাইছে আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে। এতে করে যানজটে স্থবির সড়কে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অফিস শেষে হেঁটে বাসায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন লাখো মানুষ। তবে রাজপথ চলমান রাখতে আন্দোলন ইস্যুতে উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সেল গঠন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, এতদিন একপক্ষ সুবিধা নিয়েছে। বঞ্চিতরা তাই ব্যস্ত দ্রুত নিজেদের ঘাটতি মেটাতে। এ জন্য তারা দাবি আদায়ে রাজপথে নামছেন। তারা মনে করছেন, একটা অপরচুনিটি সামনে আসছে, এই সময়টাকে ইউটিলাইজ করতে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থগোষ্ঠী তারা তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তবে আন্দোলন করতে গিয়ে যাতে মানুষের জনদুর্ভোগ না হয় সেই দিকে সবার দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাজপথ চলমান রাখতে আন্দোলন ইস্যুতে উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সেল করার পরামর্শ ড. সাব্বির আহমদের।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের দাবির যৌক্তিকতা আছে। গত ১৫ বছরে অনেক বৈষম্য এবং অনিয়মে অনেকেই বঞ্চিত। ফলে বঞ্চিতরা মনে করছেন, এখনই সময় এই বৈষম্য অবসানের। কিন্তু তারা এই দাবি জানাতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক পথে না গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছেন। কখনো সচিবালয়ে ঢুকে পড়ছেন, কখনো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বসে পড়ছেন। ঢাকার রাস্তা দখল করে আন্দোলন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন, যা দুঃখজনক। তিনি বলেন, সব দাবি সরকার একবারে পূরণ করতে পারবে না। তাই উভয় পক্ষকেই সহনশীল হতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাষ্ট্র কাঠামোতে দাবি দাওয়া উপস্থাপনের একটা পদ্ধতি আছে। রাস্তা বন্ধ করার কথাও না। কেউ আন্দোলন করলেই বর্তমান সরকার শুরুর দিকে দাবি মেনে নেয়ায় মানুষ ধরেই নিয়েছে এটাই পদ্ধতি। কিন্তু পার্থকুঞ্জ পার্ক নিয়ে নীরব আন্দোলন হচ্ছে অনেক দিন ধরে, দায়িত্বশীলরা গায়ে মাখছেন না। এই নগর পরিকল্পাবিদ বলেন, এভাবে রাস্তায় বসে দাবি আদায়ের পদ্ধতি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। নগরীতে বড় বড় স্কয়ার করে দিতে হবে। যেখানে গিয়ে মানুষ তার দাবির কথা বলবেন। তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তারা সরকারকে লিখিত দেবেন। সেখানে একজনের ন্যায্য দাবি হলেও সরকার তা মেনে নেবেন। কিন্তু লক্ষ মানুষও অন্যায় দাবি করলে তা মানবে না এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।