
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে জড়িয়ে সম্প্রতি যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। গতকাল রোববার ডিএনসিসির মুখপাত্র ও তথ্য কর্মকর্তা ফারজানা ববির সই করা এক বিবৃতিতে এজাজের অতীতে হিযবুত নেতা হিসেবে গ্রেপ্তারের তথ্যও নাকচ করা হয়। গত বছর গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ এজাজ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজকে ডিএনসিসির প্রশাসক হিসেবে এক বছরের জন্য নিয়োগ দিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের গত তিন দিনে মোহাম্মদ এজাজকে নিয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন ফেইসবুকে। এসব পোস্টে সায়ের লিখেছেন, তিনি ছাত্রজীবনে ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, ২০০২ সাল থেকে হিজবুত তাহরীরের সাথে জড়িত হন। এই সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে কমপক্ষে দু’বার গ্রেপ্তার হন তিনি। গত শুক্রবার নিজের ফেইসবুক পাতায় কিছু মামলার তথ্য ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সায়ের দাবি করেন, মোহাম্মদ এজাজ নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পঞ্চম। ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের একটি স্মারক পর্যালোচনার তথ্য দিয়ে সাংবাদিক সায়ের বলেন, হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এজাজের অবস্থান ছিল পঞ্চম। একই বছর নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির প্রচারণা ও অর্থায়নের অভিযোগে এজাজসহ আরও আটজন বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার হন। এই ঘটনায় কিছুদিন আটক থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আবারও একই নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে তৎপর থাকেন এজাজ। গত সোমবার উত্তর সিটি করপোরেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, আগের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের নিশানা করার ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ তোলা হয়েছে। “গত ১৬ বছর ধরে মোহাম্মদ এজাজ নিজেকে একজন পরিবেশবাদী, লেখক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বৈরাচারের বিরোধিতা, জলাধার দখল ও পানি নিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লাগাতার সোচ্চার অবস্থান তাকে জাতীয় স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্যতা, পানির অধিকার ও নদীনির্ভর মানুষের জীবিকার পক্ষে তার অবস্থান বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের স্বার্থে আঘাত করেছে,”বলা হয়েছে বিবৃতিতে। নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা হিসেবে এজাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে জুলকারনাইন সায়ের যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে এজাজের মালিকানাধীন একটি ভবন থেকে কয়েক ব্যক্তির গ্রেপ্তারের ঘটনাটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তার বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। “ওই ভবনে বাস না করা সত্ত্বেও, এমনকি ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার পরেও শুধু ভবনের মালিকানার সূত্রে তার নাম ওই অভিযোগের সঙ্গে জড়ানো হয়। পরবর্তী তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় তিনি সম্পূর্ণরূপে খালাস পান, যা তাকে নির্দোষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।” ধর্মের রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ এজাজের অবস্থান ‘প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত’ উল্লেখ করে বিবিৃতিতে বলা হয়, “ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করার বিরুদ্ধে তিনি লেখালেখি করেছেন, বক্তৃতা দিয়ে গেছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী জেলে সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ, প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব এবং সামগ্রিকভাবে বহুত্ববাদ ও ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস তার কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।” ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণকেন্দ্রিক নগর শাসন চালু করেছেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়। “তার উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সব প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ, যাতে নাগরিকরা সরাসরি নজরদারি করতে পারেন। তার এইসব উদ্যোগ কিছু মানুষের অসৎ উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করেছে। যার কারণে তারা পুরোনো ও ভিত্তিহীন অভিযোগকে পুনরুজ্জীবিত করে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।”