
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশের স্বাস্থ্য খাতে তার কালো ছায়া রয়ে গেছে। মুখ বদল করে একটি রাজনৈতিক দল সমর্থিতরা স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়ন্ত্রণে মরিয়া। এরই মধ্যে তাদের পছন্দসই ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য নিজেদের কব্জায় নিয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতেই প্রতিপক্ষ আরেকটি গ্রুপকে টার্গেট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরই স্বাস্থ্য খাতে আলোচনায় আসে ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফোরাম’ (এমটিএফ) নামের একটি সংগঠন। একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থিত এ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দ্রুত স্বাস্থ্য খাতের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। এমনকি এ চক্রকে ম্যানেজ করে ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগীরা স্বপদে বহাল এবং কেউ কেউ প্রাইজ পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন। শীর্ষ অনেক কর্মকর্তাও তাদের পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর এখন তাদের ইশারায় চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা যায়, বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেই এমটিএফ’র কয়েকজন নেতা কোটিপতি বনে গেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা এবং একজন লাইন ডাইরেক্টরের কক্ষ এখন ওই রাজনৈতিক দলের শাখা কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকেই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। এমটিএফ সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ, মহাসচিব মো. সোহেল রানা, ফার্মাসিস্ট তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় মানসিক হাসপাতালের ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট মোশাররফ হোসেন, সোহেল হাওলাদার, জাতীয় গ্যাস্টলিভার হাসপাতালে কর্মরত জহুরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরী মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের আবু বকর সিদ্দিক, উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ডেন্টাল গোলাম মওলা, বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত শরিফুল ইসলাম প্রমুখের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট সব কিছু দেখভাল করেন। বিগত ৯ মাসের বদলি তালিকা যাচাই করলেই এ সিন্ডিকেটের অপকর্ম স্পষ্ট হবে বলে সূত্রের দাবি। তাদের মতে, সিন্ডিকেটকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগীরা নিজেদের পছন্দমাফিক স্থানে বদলি হতে পারছেন। উদাহরণ হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট আ. হালিমের নাম উল্লেখ করা যায়। আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত হওয়ার কারণে তাকে বদলি করা হয়েছিল। তবে মোটা অংকের টাকায় সিন্ডিকেট তাকে দলে ভিড়িয়ে সুবিধাজনক জায়গায় বদলির ব্যবস্থা করে দেয়।
এদিকে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতেই সিন্ডিকেট উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাবার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এরই অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী আদর্শের পেশাজীবী সংগঠন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এম-ট্যাব) কে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগকারীরা জানায়। তারা জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এম-ট্যাব নেতা-কর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকার কারণে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যেমন সংগঠনের মহাসচিব বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব গত একযুগ সাসপেন্ড ছিলেন এবং গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দবির উদ্দীন খান তুষার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকার কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৪ জুলাই তাকে গুম করে ব্যাপক নির্যাতন করে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও নির্যাতনের কারণে তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত আওয়ামী আমলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ব্যাপক অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যে, কেনাকাটার নামে ভয়ংকর দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমানে একটি চক্র সেটিকে অব্যাহত রাখতে মরিয়া। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।