শিক্ষার্থী সাম্য হত্যাকাণ্ড

উত্তাল ঢাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন

আপলোড সময় : ১৬-০৫-২০২৫ ০৬:৩৬:৩৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-০৫-২০২৫ ০৬:৩৬:৩৮ অপরাহ্ন
* ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়ে ঢাবির একাডেমিক-প্রশাসনিক ভবনে তালা
* সাম্যকে নিয়ে একটি গুপ্ত সংগঠন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: ছাত্রদল সভাপতি
* রাজনৈতিক কারণে সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে: রিজভী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যর (২৫) হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এদিন ঢাবিতে অর্ধবেলা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণদিবস ধর্মঘট ঘোষণা করেছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ নামে একটি প্লাটফর্ম। এসময় সাম্য হত্যার প্রতিবাদে তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর আগে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ শুক্রবার প্রশাসনের অর্ধবেলা শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ নামের নতুন এই প্লাটফর্মের অধীনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং কয়েকটি বাম সংগঠনের আধিক্য দেখা গেছে। 
জানা গেছে প্রতিবাদের শুরুতেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে তালা দেন। পরে কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনে তালা দেন। এসময় একটি মিছিলের মাধ্যমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন। মিছিলে উপস্থিত ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের দফতর সম্পাদক সাকিব বিশ্বাস বলেন, আমরা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা ভবনে তালা দিয়েছি। বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক ভবনগুলোতেও তালা দেয়া হবে। এ ছাড়া আমরা পূর্ণদিবস ধর্মঘট হিসেবে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেবো।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ছাত্রদল ও বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করছে। ক্যাম্পাসে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্ধ-দিবস ক্লাসপরীক্ষা বন্ধ থাকার ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণ দিবস একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা।
এদিন উপাচার্যের পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে জড়ো হন ভিসি চত্বরে। তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বারবার জানানোর পরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ক্যাম্পাস নিরাপদ করতে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ছাত্রদল ও বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করছে। শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্ধ-দিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণ দিবস একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। এদিন বেলা পৌনে ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনে তালা দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়ার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে জড়ো হন ভিসি চত্বরে। তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বারবার জানানোর পরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ক্যাম্পাস নিরাপদ করতে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ কোনো ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার এবং সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও জানান তারা। ধর্মঘট শেষে বিকাল ৫টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশও করবেন তারা। সাম্য হত্যার ঘটনায় শোক পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল থেকে অর্ধদিবস স্থগিত থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় একটি গুপ্ত সংগঠন সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাবিতে সাম্য হত্যার বিচার, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। রাকিব বলেন, বার বার জানানোর পরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বিশ্বিবদ্যালয়ের আঙিনা নিরাপদ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখিনি। জুলাই-আগস্টে সাম্য সাহসী ভূমিকায় ছিলেন উল্লেখ করে হত্যায় জড়িতদের বিচার অতিদ্রুত নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, যে গুপ্ত সংগঠন সাম্য হত্যা নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেবে ছাত্রদল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ছাত্রদল ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের কোনো ভূমিকা নাই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ করার লক্ষ্যে সকাল থেকে তৎপরতা দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সিটি করপোরেশনের। শুরু হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন গেট বন্ধের কার্যক্রম। এছাড়া উচ্ছেদ করা হয় উদ্যানের ভেতরে থাকা বিভিন্ন দোকানপাট। এ সময় দোকানে কর্মরত ও মালিকরা অভিযোগ করেন, আগে থেকে কিছু না জানিয়েই চালানো হয় অভিযান। ক্ষতির মুখে পড়ে পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। ভবঘুরেরা কেন তাকে হত্যা করবে। সাম্য একটি পোস্ট করেছিলেন ক’দিন আগে, আন্দোলন চলছে। যারা দেশের পক্ষে, তাদের জীবন চলে যাচ্ছে। এজন্যই বলছি রজনৈতিক কারণ আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকার উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) হল ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংগীতের বিরোধী যারা তাদের বিপক্ষে সাম্যের অবস্থান ছিল তাই কী তাকে হত্যা করা হলো? শিক্ষাঙ্গনে কেন রক্ত ঝরবে। ক্যাম্পাসে কেন রক্ত ঝরবে? একাধিক প্রশ্ন রাখেন রিজভী। তিনি বলেন, ঢাবি ভিসির কাছে সাম্য হত্যার বিচার চাইতে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তিনি তুই-তুকারি করেছেন, বিরক্ত হয়েছেন তাদের কথা শুনে। জাতীয়তাবাদের দর্শনে যারা রাজনীতি করেন তাদের পছন্দ করেন না ভিসি।
ঢাবি ভিসি ও প্রক্টর একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাসী। আপনাদের মাথায় যে দর্শন তা প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছেন ভিসি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সাদরে গ্রহণ করলেন, কিন্তু জবি শিক্ষার্থীরা যখন আবাসনের জন্য গেলেন তাদের ওপর হামলা করল সরকার। আচরণে দ্বিচারিতা কেন, বিভাজন কেন। অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র চলছে। সেদিকে না তাকিয়ে সরকার কোন দিকে তাকিয়ে দেশ চালাচ্ছে-জানতে চেয়ে রিজভী বলেন, ডানে-বামে তাকিয়ে দেশ চালাতে না পারলে, কেউ রক্ষা পাবে না। কারও স্বার্থ রক্ষা না করে দেশে পরিচালনা করুন। সাম্য হত্যা ভিন্নখাতে নিলে সরকারের জন্য তা সুখকর হবে না। সাম্যের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কারা তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দির গেটের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ও স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকও ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net