
* ১৪ বছরে বজ্রপাতে মৃত্যু ৪১৫৮ জন
* মৃতদের মধ্যে ২৮৪২ জন পুরুষ
* নারী ৫৪১ জন ও শিশু ৭৭৪ জন
* আহত হয়েছেন ১১৩৪ জন
* বেশি ঝুঁকিতে কৃষক, শ্রমিক, শিশু-কিশোর
* সচেতন না হলে আরও বাড়বে মৃতের সংখ্যা
সারাদেশে বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত রোববার দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাত ও ঝড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার চার জেলায় বজ্রপাতে চারজন নিহত হয়েছেন। গত ১৪ বছরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ৪ হাজার ১৫৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশ। নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪১ ও ৭৭৪ জন। বজ্রপাত এখন আর কেবল প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক ঘটনা নয় এটি একটি প্রাণঘাতী দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব পেয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে দেশজুড়ে ১০ লাখ তালগাছের চারা আর ৩৫ লাখ আঁটি রোপণের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরিচর্যা না থাকায় কোথাও মরে যায় তালের চারা, কোথাও হয়েছে নষ্ট। আর আঁটি থেকেও গজায়নি চারা। প্রায় শতকোটি টাকা গচ্চাতেই শেষ হয় তালগাছ প্রকল্পের গল্প। তারপর থেকে বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকার।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানতে ৬৮ কোটি টাকা খরচায় দেশের আট স্থানে বসানো হয় রাডার (লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর)। বলা হয়েছিল, ১৫ মিনিট আগেই ওই এলাকার মানুষকে বজ্রপাতের তথ্য জানিয়ে দেয়া যাবে। তবে সেটাও সফলতার মুখ দেখেনি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহযোগিতায় বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ নামে একটি প্রযুক্তি চালু করে। এর মাধ্যমে ৫৪ ঘণ্টা আগেই বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়ার কথা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষক ও জেলেদের কাছে এ ধরনের প্রযুক্তি সহজলভ্য না হওয়ায় এটি খুব বেশি কাজে লাগবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।
এদিকে, তালগাছ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে হাওরাঞ্চলে আরও দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্প দু’টির সফলতা নিয়ে এখনও আশাব্যঞ্জক তথ্য মেলেনি। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি রিডাকশন (রিভার)’ শীর্ষক প্রকল্প পাস হয়েছে। সেই প্রকল্পেও ১ হাজার ৪০০টি বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন করার কথা বলা আছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ভৌগোলিক অবস্থান, সচেতনতার অভাব, উঁচু গাছ কাটাসহ নানা কারণে বছর বছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর এই ৯ মাসে হয় বজ্রপাত, তবে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হয় সবচেয়ে বেশি। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুনে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিকাজের সময় ৭০ শতাংশ, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় এবং গোসল কিংবা মাছ ধরার সময় জলাশয়ে ১৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশই কৃষক। গবেষকরা বলছেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের শঙ্কা ১০ থেকে ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। বার্ষিক প্রাণহানির এই সংখ্যার বিচারে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিবছর মার্চ মাস থেকেই বজ্রপাতের প্রকোপ শুরু হয় এবং বর্ষাকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। বছরে বজ্রপাতে গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। ২০২৪ সালে এ সংখ্যা প্রায় ৩০০ ছঁই ছুঁই। আর ২০২৫ সালের শুরু থেকেই যেন আরও ভয়াল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। মাত্র জানুয়ারি থেকে মে মাসের প্রথম দশকে দেশজুড়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতে মৃতদের বেশিরভাগই হন কৃষক, গৃহবধূ, শ্রমিক এবং স্কুল-কলেজগামী শিশু-কিশোররা।
বজ্রপাতের মৃত্যুর হিসাব নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বজ্রপাতে ১৪ বছরে (২০১০-২০২৪ সাল) প্রাণ গেল ৪ হাজার ১৫৮ জনের। নিহতদের মধ্যে শিশু ৭৭৪ জন, নারী ৫৪১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। সেবছর ৩৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর এককভাবে সর্বোচ্চ পুরুষের মৃত্যু ঘটেছে ২০২০ সালে। যার সংখ্যা ২৭১ জন।
তথ্য বলছে, ২০১০ সালে বজ্রপাতে প্রাণ হারান ১২৩ জন, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৩৬২ জনে। এরপর ২০২২ সালে কিছুটা হ্রাস পেলেও মৃত্যু হয়েছে ৩১৬ জনের। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৮৮ জন, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। এছাড়া, ১৪ বছরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ৪ হাজার ১৫৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশ। নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪১ ও ৭৭৪ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের কৃষিকাজ, মাছ ধরা, গবাদি পশু পালনসহ বহিরাঙ্গন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ফলে মৃত্যুর হারও বেশি। বজ্রপাতের ফলে আহতের সংখ্যাও উদ্বেগজনক। এই সময়কালে বজ্রপাতজনিত আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৪ জনে। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি আহত হন ১৯৬ জন। এছাড়া, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরও সারা দেশে বজ্রপাতের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে এই বজ্রপাত মৌসুমে প্রাণহানির ঘটনা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। মাত্র একদিনেই, অর্থাৎ গত ২৮ এপ্রিল বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন। এদের মধ্যে ১৯ জনই ছিলেন কৃষক-যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করছিলেন। আর শুধু কিশোরগঞ্জ জেলাতেই এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন। এরসঙ্গে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট হবিগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও কুড়িগ্রাম এলাকাতেও প্রতিবছরই বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন প্রান্তিক ও খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষজন। বিশেষ করে কৃষক, জেলে, শিশু-কিশোররা। তাদের অধিকাংশেরই তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই আবার সতর্কবার্তা পাওয়ার সুযোগও সীমিত। ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাত বাড়লেও প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষায় নেয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। ফলে এক অদৃশ্য যমদূত মাথায় নিয়েই তারা প্রতিদিন কাজকর্ম করছেন। আবার অনেকেই মনে করছেন, বজ্রপাত বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়েও সচেতনতা কার্যক্রমও সীমিত।
এমন অবস্থায় বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতা ও পূর্বসতর্কতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তির যুগে বসবাস করলেও বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে এখনও পর্যাপ্ত সচেতনতা নেই। বজ্রপাতের সময় কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, কি করা যাবে না-এসব বিষয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষকে বারবার সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে স্কুলপর্যায় থেকে এ বিষয়ে শিক্ষা দেয়া জরুরি। স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু তথ্য নয় বরং মানুষের জীবন বাঁচাতে দরকার সঠিক প্রস্তুতি। এরসঙ্গে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বা ‘লাইটনিং অ্যারেস্টর’ এর ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার সমন্বয় ছাড়া বজ্রপাত থেকে জীবন রক্ষা কঠিন। যার জন্য টেকসই অবকাঠামো ও স্থানীয় প্রস্তুতি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আবহাওয়া অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পাঠালেও তা পৌঁছায় না সবার কাছে। কিন্তু গ্রামের কৃষকের হাতে স্মার্টফোন না থাকলে এসব উদ্যোগও ব্যর্থ হয়ে পড়ে। কিছু স্টার্ট-আপ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সতর্কতা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সেগুলোর নাগাল গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছেনি এখনো। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুলে বজ্রপাত বিষয়ক সচেতনতামূলক শিক্ষা থাকা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় সতর্কবার্তা দ্রুত পৌঁছাতে হবে। এছাড়া কৃষকদের জন্য নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে পারলেও মৃত্যু হার কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বজ্রঝড় সাধারণত খুব দ্রুত তৈরি হয়, তাই আগাম সতর্কতা না থাকলে মাঠে কাজ করা কৃষকদের পক্ষে সময়মতো নিরাপদ আশ্রয় নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে খুব শিগগিরই বজ্রপাত হতে পারে পরিবেশে এমন কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন, আকাশে হঠাৎ ঘন মেঘ জমা হওয়া, মেঘের গর্জন, বাতাসের আচরণে দ্রুত পরিবর্তন, ঝোড়ো হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমক দেখা দিলে বুঝতে হবে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই খোলা মাঠ, ধানক্ষেত বা জলাশয় ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া উচিত। কৃষকদের মধ্যে এসব লক্ষণ চেনার প্রশিক্ষণ ও মোবাইল ফোনে বার্তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা গেলেও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এমন পরিবেশ দেখলে বা বজ্রপাত শুরু হলে ঘর ছেড়ে বের না হওয়ার এবং জানালা-দরজা বন্ধ রাখার পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি। এছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার, গাছের নিচে আশ্রয় না নেয়ার, কংক্রিটের মেঝেতে না শোয়ার এবং কংক্রিটের দেয়ালে হেলান না দেয়ার কথাও বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোনোটাই টেকসই হচ্ছে না। কোনটা যথার্থ হবে-তা পরীক্ষামূলক ব্যবহারের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে; অন্যথায় অর্থ অপচয় হবে। এ কারণে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে টেকসই প্রকল্প দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসাইন বলেন, বজ্রপাত বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা ও উষ্ণ বায়ুর মিশ্রণ বেড়েছে। ফলে এই পরিস্থিতি বজ্রমেঘ তৈরির উপযোগী আবহাওয়া সৃষ্টি করছে বারবার। এছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে মৌসুমি জলবায়ু, উচ্চ তাপমাত্রা ও ঘন মেঘ তৈরি হয়। ফলে এ আবহাওয়া বজ্রপাতের জন্য একটি প্রাকৃতিক ‘হটস্পট’ তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্প বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুন মাসে এ প্রবণতা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আগে বজ্রপাত মৌসুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। এখন প্রায় বছরজুড়েই বজ্রপাত হচ্ছে-এটি স্পষ্ট জলবায়ুগত সংকেত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।