
* এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে
* কমে যাবে স্বার্থের সংঘাত, বাড়বে কাজের গতি
* কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে আলাদা করে দক্ষতা বাড়ানো মূল লক্ষ্য
* পুনর্গঠন কেবল আমলাতান্ত্রিক রদবদল আনবে না বরং সক্ষম কর ব্যবস্থা গড়ে তুলবে
* অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে কলম বিরতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, তোপের মুখে চেয়ারম্যান
দেশের করভিত্তি বিস্তৃত করতেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সংস্থাটি ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে আলাদা করে দক্ষতা বাড়ানো মূল লক্ষ্য এবং স্বার্থের সংঘাত কমানো হবে। বাড়বে কাজের গতি। গতকাল মঙ্গলবার অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে কলম বিরতি পালন করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে তোপের মুখে পড়েন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব খাতকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ সৃষ্টি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পোস্টে বলা হয়, কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে আলাদা করে দক্ষতা বাড়ানো, স্বার্থের সংঘাত কমানো এবং দেশের করভিত্তি বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর কখনোই তাদের রাজস্ব লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এশিয়ায় সর্বনিম্নের মধ্যে পড়ে। তুলনার জন্য বলা যায়, বৈশ্বিক গড় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ার অনুপাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে এই অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করা জরুরি। তিনি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এনবিআর পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতি প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার জন্য একটি একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেয়া উচিত নয়-এই ধরনের ব্যবস্থা স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করে এবং অদক্ষতা বৃদ্ধি করে। বছরের পর বছর ধরে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছে যে নীতিমালাগুলো প্রায়শই ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেয়ে রাজস্ব সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়। এই পুনর্গঠন কেবল একটি আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এটি একটি ন্যায্য, আরও সক্ষম কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সব নাগরিকের চাহিদা পূরণ এবং তাদের আশা বাস্তবায়নের জন্য নীতি নির্ধারণ এবং পরিচ্ছন্ন কর প্রশাসন শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে চলমান বেশ কিছু সমস্যা এনবিআরকে জর্জরিত করেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্টে।
নীতি নির্ধারণ এবং প্রয়োগ উভয়কেই এক ছাদের নিচে রাখার ফলে কর নীতির সঙ্গে আপস এবং ব্যাপক অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায়, কর আদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো জবাবদিহিতা কাঠামোর আওতায় নেই এবং প্রায়ই জনস্বার্থের সঙ্গে আপস করে কর খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ প্রদানের জন্য আলোচনা করতে সক্ষম হন। অনেক ক্ষেত্রে, কর আদায়কারীরা কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে তাদের তা করতে সহায়তা করতে অনিচ্ছুক। কর আদায়কারীদের কর্মক্ষমতা বস্তুনিষ্ঠভাবে পরিমাপ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়া নেই। তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতি পরিমাপযোগ্য কর্মক্ষমতা সূচকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। দ্বৈত আদেশ নীতি প্রণয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি উভয়ের ওপরই মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, করের জাল সংকীর্ণ রয়ে গেছে। রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এনবিআর অসংগত প্রয়োগ, দুর্বল বিনিয়োগ সুবিধা এবং পদ্ধতিগত শাসন সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে। যার সবকটিই বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস করেছে। আইনের শাসনকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিদ্যমান কাঠামো যেখানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধানও এনবিআরের নেতৃত্ব দেন-বিভ্রান্তি এবং অদক্ষতা তৈরি করেছে, কার্যকর কর নীতি নকশা এবং প্রদানকে ব্যাহত করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়া অভিজ্ঞ কর ও শুল্ক কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, তাদের পাশে রাখা হতে পারে বা উপেক্ষা করা হতে পারে। নতুন কাঠামোটি একটি পরিষ্কার, আরও জবাবদিহিমূলক কাঠামোর মাধ্যমে এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রয়োগ, নিরীক্ষা এবং সম্মতি তত্ত্বাবধান করবে। এই পৃথকীকরণ নিশ্চিত করে যে, কর আদায়কারী কর্মকর্তারা কর আদায়কারীদের মতো নন, যা যেকোনো ধরনের যোগসাজশের সুযোগ দূর করে। প্রতিটি বিভাগকে তার মূল আদেশের ওপর মনোনিবেশ করার অনুমতি দিয়ে সংস্কারটি বিশেষীকরণ বৃদ্ধি করবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস করবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক অখণ্ডতা উন্নত করবে। এ সংস্কার করের জাল সম্প্রসারণ করবে। পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে এবং দক্ষ পেশাদারদের উপযুক্ত ভূমিকায় নিয়োগ করে প্রত্যক্ষ কর আদায়কে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। একটি নিবেদিতপ্রাণ নীতি ইউনিট কেবলমাত্র স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত প্রতিক্রিয়াশীল নীতির পরিবর্তে প্রমাণ-ভিত্তিক, ভবিষ্যতমুখী কর কৌশল তৈরি করতে পারে।
স্বচ্ছ, পূর্বাভাসযোগ্য নীতি এবং একটি পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং বেসরকারি খাত থেকে অভিযোগ কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে গত সোমবার দিবাগত রাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্থা এনবিআর বিলুপ্ত করে বহুল আলোচিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে বিলুপ্ত করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। আইএমএফের শর্ত মানতে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করে সোমবার দিবাগত রাতে সরকারি এ প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
আরও জানা গেছে, আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তি করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। গত সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কর্তৃক অনুমোদিত অধ্যাদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বড় কোনো মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া খসড়া অধ্যাদেশ থেকে আজকের অধ্যাদেশ জারি করা হলো। গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে আয়কর ও কাস্টমসসহ এনবিআরের সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই অধ্যাদেশ বাতিল করার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের পক্ষ থেকে প্রধান ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে গতকাল মঙ্গলবার জারি করা অধ্যাদেশে অধিকাংশই মানা হয়নি বলে জানা গেছে। আন্দোলন করা এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল-১. ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৩) এ ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ২. রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদসমূহ বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) এবং বিসিএস (কর) ক্যাডার হতে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা হতে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক পদসমূহে বর্তমানে দায়িত্বপালনরত রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণকে রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি। ৩. খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯ এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪) এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। অথচ কমিটি গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন। ৪. খসড়ার অনুচ্ছেদ ৫ এর দফা (চ) এ রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিবীক্ষণের বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। ৫. খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩) এ বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তা হতে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান এর পরিবর্তে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান এর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। জারি করা অধ্যাদেশে ওই ধারাগুলো কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
তবে তাদের ৬ নম্বর দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যাদেশে অনুচ্ছেদ ৭(৫) এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়ায় ওই অনুচ্ছেদে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলো প্রশাসন ক্যাডার হতে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে জারি করা অধ্যাদেশে প্রশাসনিক পদসমূহ প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের হতে পূরণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জারি করা আজকের অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকারের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পৃথকীকরণ আবশ্যক, সেহেতু রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিকরণকল্পে বিদ্যমান কাঠামো পুনর্গঠনপূর্বক রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। যেহেতু সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে এটা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আশুব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা, আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সমন্বয়ে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ করা হয়। তাদের ব্যানারেই গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে এনবিআর, বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টম হাউস থেকে হাজারো কর্মকর্তারা প্রায় নয় ঘণ্টার বৈঠক করে। ওই বৈঠক থেকে গতকাল মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ৮ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তি নয়, যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন বলে দাবি করে বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) এবং ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিবিএ)। তার আগে পর পর দুই সপ্তাহে আয়কর ও কাস্টমসে সংগঠনের অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ জরুরি সভা (ইজিএম) হয়। যেখানে থেকে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি আসে।
এদিকে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী তিনদিন কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। সেখানে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি তুলে যুগ্ম কর কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, আগামী ১৪, ১৫ ও ১৭ মে এনবিআরের অধীনস্ত সব দফতরের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রফতানি এই তিনটি কার্যক্রম চালু থাকবে। পরবর্তী কর্মসূচি আগামী ১৭ মে বিকেল ৩টায় আমরা ঘোষণা করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এনবিআর ভবন প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তখন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। এনবিআর চেয়ার?ম্যানকে দেখেই ‘ভুয়া ভুয়া’ সেøাগান দেন কয়েকজন। পরে কালো জিপে করে কার্যালয় ছাড়েন চেয়ারম্যান। নতুন এ অধ্যাদেশ জারির ফলে দীর্ঘদিনের রাজস্ব সংস্থা এনবিআরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। রাজস্ব খাত এখন থেকে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এ দুই ভাগে পরিচালিত হবে। এতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছেন এনবিআরের আওতায় থাকা কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ, এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতা নিশ্চিত না করে বরং এনবিআরের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রশাসন ক্যাডারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।