আ’লীগকে নিষিদ্ধ না করলে স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে : নুর

আপলোড সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০২:৪৫:৪২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০২:৪৫:৪২ অপরাহ্ন
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে দলটির সঙ্গে জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদ। ১২ মে নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার ঘোষণা দেন তারা। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর। লিখিত বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদ জানায়, দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান মো. রাশেদ খান। শুরু থেকেই তারা গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। গণঅধিকার পরিষদ মনে করে, শুধু সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা নয়, আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত নিবন্ধন বাতিল না হলে এই গণঅভ্যুত্থান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিল এবং চূড়ান্তভাবে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে নির্বাচন কমিশন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন তারা। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদ বলেছে, দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করতে পাঁচটির বেশি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত। পাশাপাশি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমানোর আহ্বান জানানো হয়। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী ও সীমান্তপারের ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও দলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। নুরুল হক নুর বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে জনগণের যে সম্পদ লুটপাট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, পতিত সরকারের সময়ে বিরোধী দলসমূহ একটি সমাবেশ করেছিল। এরপর থেকে প্রায় ৩০ হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অথচ গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের মাত্র ৩২ জন নেতাকর্মীও গ্রেফতার হয়নি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হলে তা এক সময় দেশের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়াবে। আওয়ামী লীগ এখন আর শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি সীমান্তের ওপার থেকেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। গত নয় মাসে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। গণঅধিকার পরিষদ, জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দল সম্প্রতি শাহবাগ, পল্টন, প্রেস ক্লাব এলাকায় আন্দোলন করেছে। আমরাও যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে চেয়েছিলাম। তবে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয় যে, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে কনসার্ন আছেন। তরুণদের কথা শোনার মাধ্যমে তিনি আগামীর বাংলাদেশে একটি গতিপথ তৈরি করতে চান’ এই বিশ্বাস থেকে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি- বলেন নুর। সরকারের অভ্যন্তরে ‘আপসকামী’ চরিত্রের উপদেষ্টা থাকার অভিযোগও তোলেন নুর। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য বিদেশি দূতাবাসে গিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। এরপরই আমরা দেখি করিডর দেয়ার ঘোষণা ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের ইঙ্গিত। সেই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ত্যাগ করেন। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রপতি পালিয়ে যাওয়ার দায় শুধু কিশোরগঞ্জের এসপির নয়, এর পেছনে ইমিগ্রেশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা থাকতে পারে। অথচ সরকার দায় চাপিয়েছে শুধু এক জেলা পুলিশ কর্মকর্তার ঘাড়ে। সরকারকে হুঁশিয়ার করে নুর বলেন, এই সরকার আমাদের রক্ত-ঘাম ও জেল-জুলুমের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে। কাজেই এ সরকারের বিরুদ্ধেই আবার আমাদের যদি ঘেরাও করে দাবি আদায় করতে হয়, তাহলে সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করি, যেকোনো জনসম্পৃক্ত দাবি প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুর ২টায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, আহতদের পুনর্বাসন, শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, শহীদ ও আহতদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়নের অগ্রগতি এবং ডামি রাষ্ট্রপতি, হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয় গণঅধিকার পরিষদ। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। ইতোমধ্যে আপনার সরকারের মেয়াদ ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে আপনার সরকারের কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। আ.লীগের বিষয়ে জনগণের সেন্টিমেন্ট অত্যন্ত নেতিবাচক। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। জনগণের এই দাবি পূরণে গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব করছে। এছাড়া গণহত্যার বিচার নিয়ে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দ্রুত সময়ে বিচার নিষ্পত্তিকরণে ন্যূনতম ৫টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করছে গণঅধিকার পরিষদ। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এখন পর্যন্ত শহীদ ও আহতদের প্রকৃত তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের পুনর্বাসন নিয়ে সরকারের চিন্তা ও পদক্ষেপ যথেষ্ট দৃশ্যমান নয়। যাদের রক্ত ও সংগ্রামের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের যথাযথ মর্যাদা ও ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করছে গণঅধিকার পরিষদ। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে ডামি রাষ্ট্রপতি, হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদ তার ছেলে ও শ্যালককে নিয়ে ৮ মে রাত ৩টায় দেশ ছেড়েছেন। আপনার সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সে কীভাবে দেশ ছাড়লো? এ বিষয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। গণঅধিকার পরিষদ উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net