মিলছে না আয়-ব্যয়ের হিসাব

নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অনেকে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে

আপলোড সময় : ১৮-০৫-২০২৪ ০১:৪৫:৩২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৮-০৫-২০২৪ ০১:৪৫:৩২ অপরাহ্ন
অস্থির দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের। এতে মিলছে না ভোক্তার আয়-ব্যয়ের হিসাব। তাদের দাবি, আয়ের চেয়ে বেড়ে গেছে ব্যয়। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এপ্রিলে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বছরের শুরুতে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় প্রতিমাসে বেড়েই চলেছে দেশে। এপ্রিলে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ ও শহরে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। অপরদিকে বিবিএসের দেয়া তথ্যের বিপরীতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ১৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশের অপর সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস। গত ১০ মে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ বলে জানান বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাছের দাম, প্রায় ২০ শতাংশ; এরপর বেড়েছে মুরগিসহ পোলট্রিপণ্যের দাম। বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে এবং বিআইডিএসের নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই চিত্র উঠে এসেছে বলে জানান বিনায়ক সেন। আর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য, বছর ব্যবধানে সব ধরনের চাল ও ডালের দামই বেড়েছে। বেশি বেড়েছে মোটা ও মাঝারি চালের দাম; ৮-৯ শতাংশ। এ সময়ে ৫০ শতাংশ বেড়েছে মুগ ডালের দাম। আলুর বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি ভরা মৌসুমও; বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। ৮ শতাংশ বেড়েছে দেশি পেঁয়াজে। বাজারের যখন এই অবস্থা তখন আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ সাধারণ ভোক্তারা। হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার চালাতে। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট ভোক্তারা জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। তার বিপরীতে কমছে না; কমলেও খুবই নগণ্য।
আনিসুল নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, রাত পোহালেই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। ভোক্তারা এখন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে মিলছে না সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব। সঞ্চয় ভেঙে কোনোমতে সংসার চালাতে হচ্ছে। আরেক ভোক্তা অর্ণব সাহা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোটা যেন একধরনের ফ্যাশন হয়ে গেছে। কোনো একটা কিছু হলেই বেড়ে যায় পণ্যের দাম। উৎসব এলে কিংবা বৃষ্টি বা গরম হলেই দাম বাড়ানোর উৎসবে মেতে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপাকে পড়েন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। শুধু নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তই নয়, মূল্যস্ফীতিতে নাকাল মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তরাও। আব্দুস সালাম নামে এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, বাজারে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, এতে সংসার চালানোই দায়। ব্যয় করতে হচ্ছে হিসাব করে। অতি প্রয়োজনের বাইরে কোনো পণ্য কেনা মানে এখন বিলাসিতা। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপণ্যের এমন ঊর্ধ্বমুখী দামে লোকসানে তারাও। কমে গেছে বেচাবিক্রি। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সব জিনিসের দাম বাড়তি। দিন শেষে আমিও একজন ক্রেতা। সংসার চালাতে এখন আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না।
দেশের মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক খাতের যখন এই পরিস্থিতি, তখন অল্প কয়েক  দিনের মধ্যেই উপস্থাপন হতে যাচ্ছে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামকে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার বিষয়টিকে জোর দিয়ে সরকারের প্রতি আগামী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে আসন্ন বাজেটে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ এম আবু ইউসুফ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্য আসন্ন বাজেটে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। আর অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, বর্তমানে বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও বাড়ছে দাম, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যাচ্ছে। তাদের আয়ের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রেই বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে ভাঙতে হচ্ছে সঞ্চয়। ভোক্তা অধিকার যখন অভিযান চালায় তখন কিছুদিন পণ্যের দাম কমলেও, অভিযান বন্ধ হলে পুনরায় আবার দাম বলেও অভিযোগ করেন মাহফুজ কবির। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসন্ন বাজেটে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব  দিতে হবে। বাজার তদারকি কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
অপরদিকে দেশের নিম্নবিত্ত ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি বিদেশি ডলার পাচার প্রতিরোধে কার্যকর ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারিত করে দেয়ার জন্য আলাদা প্রাইস কমিশন গঠন করে সেখানে গণশুনানির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। যারা নির্ধারিত আয়ে চলে অর্থাৎ স্যালারি ক্লাস এবং যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন অর্থাৎ নিম্নবিত্ত; সব মিলিয়ে সমাজের নিচের অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা জালের আওতায় আনতে হবে। শহরগুলোতে ট্রাকসেলের মতো যেসব রেশনিং ব্যবস্থা আছে সেগুলোকে আরও বিস্তৃত করতে হবে। পাশাপাশি বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব ভেঙে দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে সাধারণ ভোক্তাদের রক্ষা করতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে বাজারে এমন সিগন্যাল দিতে হবে যেন সবাই বুঝতে পারে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net