
উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে যে, দেশটি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করার জন্য তাদের সৈন্য পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-এর এক প্রতিবেদনে পিয়ংইয়ং এর সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তাদের সৈন্যরা ইউক্রেনে কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল ‘পুরোপুরি মুক্ত’ করার জন্য রাশিয়ান বাহিনীকে সহায়তা করেছে। দেশটির নেতা কিম জং আন এর নির্দেশেই তারা এটি করেছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ ‘উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের বীরত্বের’ প্রশংসা করার পর উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে এমন প্রতিক্রিয়া এলো। মস্কোও এই প্রথম প্রকাশ্যে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের অংশগ্রহণ স্বীকার করলো। তিনি একইসঙ্গে দাবি করেছেন, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন অবশ্য এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিল, পিয়ংইয়ং গত বছর কুরস্ক অঞ্চলে সৈন্য পাঠিয়েছে। কেসিএনএ বলছে, এই সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে পারস্পারিক প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায়। ‘যারা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছে, তারা সবাই বীর এবং মাতৃভূমির সম্মানের প্রতিনিধি,’ কিমকে উদ্ধৃত করে বলেছে কেসিএনএ। কুরস্কে নিজেদের জোট ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রদর্শনের কথা বলেছে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া। তারা বলেছে, ‘রক্তে প্রমাণিত বন্ধুত্ব’ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণে বড় অবদান রাখবে। কেসিএনএ অবশ্য বলেনি যে, কুরস্ক মিশন শেষে উত্তর কোরিয়ার এই সেনাদের নিয়ে কী করা হবে। রিপোর্টে বলা হয়, কিম ও পুতিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীরতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়ার এসব সেনাকে গত অক্টোবরে মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও ছিল, যেখানে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম পরস্পরকে সমর্থনে একমত হয়েছিলেন। জানুয়ারিতে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছিলেন, তাদের বিশ্বাস উত্তর কোরিয়া থেকে পাঠানো কমপক্ষে এক হাজার থেকে ১১ হাজার সেনা গত তিন মাসে মারা গেছে। উত্তর কোরিয়ার এই সেনাদলটি একটি এলিট ইউনিটের অংশ, যার নাম স্টর্ম কর্পস। তবে আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। ‘তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে রাশিয়ার কর্মকর্তারা, কিন্তু তারা এদের বুঝতে পারতেন না,’ বলছিলেন সাবেক ব্রিটিশ আর্মি ট্যাংক কমান্ডার কর্নেল হামিশ ডি ব্রেটন গর্ডন। এ সত্ত্বেও ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ওলেকসান্দ্র সিরস্কি আগেই সতর্ক করেছিলেন, রণাঙ্গনে উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইউক্রেনের যোদ্ধাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। ‘তারা অনেক। অতিরিক্ত ১১-১২ হাজার অনুপ্রাণিত ও ভালোভাবে প্রস্তুত সেনা আক্রমণাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা সোভিয়েত কৌশলের ওপর ভিত্তি করে কাজ করছে। তারা তাদের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে,’ ইউক্রেনের একটি নিউজ প্রোগ্রামে বলছিলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা