দেশের বড়, মাঝারি কিংবা ছোট সবখাতের ব্যবসায়ীরই বাড়তি সুদ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বাড়ছে ব্যাংক খাতে। বাড়তি সুদের চাপে অনেক ভালো গ্রাহকও ঋণের কিস্তি ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছেন না। আট মাসে সুদ ৮-৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন হয়েছে সাড়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি সুদ বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। ঋণের সুদের হার বাড়ানোতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। একদিকে ডলারের দাম বাড়ায় ব্যবসায় খরচ বেড়েছে। এরমধ্যে সুদের হার বাড়ায় তা আরও উসকে দিচ্ছে। খরচ বাড়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে পণ্যের দাম বাড়ালে বিক্রি কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঋণের সুদহার পাগলা ঘোড়ার গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। সুদহার বৃদ্ধির চাপ তারা আর নিতে পারছেন না। গ্যাস-বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ অবস্থায় ঋণের সুদহার দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খেলাপি ঋণের চাপ আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। বিনিয়োগ করা অর্থ ফিরে আসছে না। ফলে ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে এখন বড় দুশ্চিন্তায় উদ্যোক্তারা। কারণ ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে যে মুনাফা হবে, তা দিয়ে কোম্পানির ব্যয় মিটিয়ে ব্যাংক ঋণ শোধ করা কঠিন হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে গত ৮ মে ব্যাংক ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। যদিও এর আগেই চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ওই সময় ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নেয়া হয়। ঋণের সুদহার নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিছুটা নিয়ন্ত্রিত এ পদ্ধতি চালুর পরও মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে ঋণের সুদহার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পর গত এক সপ্তাহে অনেক ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশেও উন্নীত করেছে।
ঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি একই দিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একদিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয় ১১৭ টাকা। যদিও ওই দিনের শুরুতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ ১১০ টাকা নির্ধারিত ছিল। সে হিসাবে একদিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো চাইলে এর চেয়ে বেশি কিংবা কম দামেও ডলার বেচাকেনা করতে পারবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। ডলারের বর্তমান ঘোষিত দর আমলে নিয়ে গত দুই বছরের ব্যবধানে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে আনুষ্ঠানিক খাতেই প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। টাকার এ রেকর্ড অবমূল্যায়নের প্রভাবে আমদানি নির্ভর প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসার ব্যয়ও। দেশের ব্যাংক খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ থাকার পরও গত তিন বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর বাইরে আরো ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার খেলাপি যোগ্য ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। খেলাপি ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আইএমএফ। এ হিসাবে দেশের ব্যাংকগুলোর ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪১৩ কোটি টাকায়। অন্যদিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপনও করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের এক-চতুর্থাংশের বেশি ঋণ এখন দুর্দশাগ্রস্ত।
ব্যাংকঋণের সুদহার ও হঠাৎ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে কোনো নীতিমালায় হঠাৎ পরিবর্তন না করে তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি নীতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় যে লোকসান হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তরের প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম জানান, অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে ডলারের দাম ১১৭ টাকার মধ্যে থাকবে। ব্যাংকভেদে এক টাকা কমবেশি হতে পারে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী যেন একই দামে ডলার পান, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বলেছি। এখনো ডলারের কিছু সমস্যা আছে, তবে আগের চেয়ে সমস্যা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংকট কেটে যাবে। নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার যে নতুন শর্ত ঠিক করা হয়েছে, তা শিথিল করার জন্য ব্যবসায়ীরা অনুরোধ করেছেন বলে তিনি জানান। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের দাম এত দিন ১১০ টাকা ছিল। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম আরও অনেক বেশি ছিল। এখন এর দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডলারের দাম যেন হঠাৎ করে না বাড়ে তা নিশ্চিত করা দরকার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে গত ৮ মে ব্যাংক ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। যদিও এর আগেই চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ওই সময় ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নেয়া হয়। ঋণের সুদহার নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিছুটা নিয়ন্ত্রিত এ পদ্ধতি চালুর পরও মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে ঋণের সুদহার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পর গত এক সপ্তাহে অনেক ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশেও উন্নীত করেছে।
ঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি একই দিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একদিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয় ১১৭ টাকা। যদিও ওই দিনের শুরুতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ ১১০ টাকা নির্ধারিত ছিল। সে হিসাবে একদিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো চাইলে এর চেয়ে বেশি কিংবা কম দামেও ডলার বেচাকেনা করতে পারবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। ডলারের বর্তমান ঘোষিত দর আমলে নিয়ে গত দুই বছরের ব্যবধানে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে আনুষ্ঠানিক খাতেই প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। টাকার এ রেকর্ড অবমূল্যায়নের প্রভাবে আমদানি নির্ভর প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসার ব্যয়ও। দেশের ব্যাংক খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ থাকার পরও গত তিন বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর বাইরে আরো ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার খেলাপি যোগ্য ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। খেলাপি ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আইএমএফ। এ হিসাবে দেশের ব্যাংকগুলোর ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪১৩ কোটি টাকায়। অন্যদিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপনও করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের এক-চতুর্থাংশের বেশি ঋণ এখন দুর্দশাগ্রস্ত।
ব্যাংকঋণের সুদহার ও হঠাৎ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে কোনো নীতিমালায় হঠাৎ পরিবর্তন না করে তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি নীতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় যে লোকসান হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তরের প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম জানান, অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে ডলারের দাম ১১৭ টাকার মধ্যে থাকবে। ব্যাংকভেদে এক টাকা কমবেশি হতে পারে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী যেন একই দামে ডলার পান, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বলেছি। এখনো ডলারের কিছু সমস্যা আছে, তবে আগের চেয়ে সমস্যা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংকট কেটে যাবে। নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার যে নতুন শর্ত ঠিক করা হয়েছে, তা শিথিল করার জন্য ব্যবসায়ীরা অনুরোধ করেছেন বলে তিনি জানান। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের দাম এত দিন ১১০ টাকা ছিল। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম আরও অনেক বেশি ছিল। এখন এর দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডলারের দাম যেন হঠাৎ করে না বাড়ে তা নিশ্চিত করা দরকার।