অ্যানফিল্ড যেন গত রোববার রাতে রূপ নিয়েছিল আনন্দের সমুদ্রে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০২৪-২৫ মৌসুমে মাত্র এক পয়েন্টের প্রয়োজন ছিল লিভারপুলের শিরোপা নিশ্চিত করতে। কিন্তু তারা অপেক্ষা করেনি কোনো সমীকরণের জন্য। টটেনহ্যাম হটস্পারকে বিধ্বস্ত করে ৫-১ গোলের বড় জয় তুলে নিয়েছে অলরেডরা। তাতে চার ম্যাচ হাতে রেখেই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। ঘরের মাঠে শুরুটা অবশ্য প্রত্যাশামতো হয়নি। ম্যাচের ১২ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে হেড করে টটেনহ্যামকে এগিয়ে দেন ডমিনিক সোলাঙ্কে। গোল খেয়ে কিছুটা থমকে গিয়েছিল গ্যালারি। তবে দ্রুতই নিজেদের মেলে ধরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে লিভারপুল। চার মিনিটের ব্যবধানে লুইস দিয়াজ সমতা ফেরান ডমিনিক সোবোসলাইয়ের নিখুঁত পাস থেকে। প্রথমে অফসাইডের সংকেত এলেও ভিএআর রিভিউর পর গোলটি বৈধ ঘোষণা করা হয়। তারপর শুরু হয় গোলের বন্যা। ২৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার দলকে এগিয়ে দেন। বিরতির আগে ৩৪ মিনিটে কডি গাকপোর গোলে লিভারপুলের লিড বাড়িয়ে নেয় ৩-১ গোলে। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশির আগে গ্যালারি ছিল উত্তেজনায় ফেটে পড়ার অপেক্ষায়। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে লিভারপুল। ৬৩ মিনিটে সোবোসলাইয়ের পাস ধরে ডান প্রান্ত থেকে দারুণ ফিনিশে গোল করেন মোহাম্মদ সালাহ। এটি ছিল তার চলতি মৌসুমের ২৮তম গোল। এই গোলের মাধ্যমে তিনি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সার্জিও আগুয়েরোকে ছাড়িয়ে সর্বকালের পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন দখল করেন। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে স্পার্স ডিফেন্ডার ডেসটিনি উদোগির দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল লিভারপুলের জয়টাকে আরও বড় করে তোলে। ৩৪ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের সংগ্রহ দাঁড়াল ৮২ পয়েন্টে, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট বেশি। ফলে চার ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করেছে আর্নে স্লটের দল। এই জয়ে সর্বোচ্চ ২০টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছে অলরেডরা। শিরোপা জয়ের পর অ্যানফিল্ডে দেখা গেছে এক অনন্য দৃশ্য। বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ‘চ্যাম্পিয়ন্স’ লেখা জার্সি পরে মোহামেদ সালাহ, ভার্জিল ফন ডাইকরা উদযাপনে মেতেছিলেন। গ্যালারির লাল সমুদ্র যেন আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল পুরো সময়টা। লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট নিজের প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি জিতে গড়লেন অনন্য কীর্তি। হোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি ও আন্তোনিও কোন্তের পর তিনিই হলেন আরেকজন কোচ, যিনি ইংলিশ লিগে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেন। উচ্ছ্বসিত স্লট বলেন, ‘‘কিছু জেতা সবসময় দারুণ অনুভূতির, তবে লিভারপুলের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে প্রথম মৌসুমেই শিরোপা পাওয়া, এটা বিশেষ কিছু।’’