
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন- সিলেট সীমান্তে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ দেওয়ার প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণেই ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, তৎকালীন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা ইলিয়াস আলীকে সহ্য করতে পারেনি। অর্থাৎ ভারত ও আওয়ামী লীগের যৌথ প্রযোজনায় ইলিয়াস আলীকে অদৃশ্য করে ফেলা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে এমন প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ইলিয়াস আলী গুম প্রতিরোধ কমিটি’। রিজভী বলেন, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার কিছুদিন আগে সিলেটের সুরমা কুশিয়ারা নদীর উজানে ভারত সরকার টিপাইমুখ বাঁধ দেবার ঘোষণা দেয়। এটা নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ শুরু হয়। বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করছেন, বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে। প্রথমে একটা লং মার্চ হলো। ইলিয়াস আলী তখন এ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করেছেন। আমার বিশ্বাস এই যে তার দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদী ভূমিকা-এ কারণেই তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস সময় অতিবাহিত হলেও ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির অন্য নেতাদের খোঁজ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আট মাস হয়ে গেল অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়। গুম কমিশন কী কার্যক্রম করছে? ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম সহ অন্যরা কোথায়? তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার কী দায়িত্ব পালন করছে? আমরা দ্রুত গুম হয়ে যাওয়া নেতাদের ফেরত চাই। সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে, এমন প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, যে ভোটাধিকারের জন্য দেশের মানুষ ১৫ থেকে ১৬ বছর সংগ্রাম করেছেন, রাজপথে রক্ত দিয়েছে সেই ভোটাধিকার কেন বিলম্বিত হচ্ছে? সেটা নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে? কেন নির্বাচন ও ভোটাধিকারের বিকল্প হিসেবে সংস্কারকে দাঁড় করানো হচ্ছে? এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ, গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন। আর গণতন্ত্র মানেই ন্যায়বিচার। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলো এখনো প্রত্যাহার না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে এখনো ৬০ লাখ মামলা। অন্তর্বর্তী সরকার এসব মামলা তো প্রত্যাহার করতে পারতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। বিএনপির কর্মীদের আজও কেন আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াতে হবে? রিজভী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অবদানকে আমরা স্বীকার করি। তাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু যদি এ রকম হয় যে তাদের কথায় প্রশাসন চলবে, সব সরকারি কর্মকাণ্ড হবে এটাকে বলে নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্য কেন হবে? ডিসি-এসপিরা বলেন, এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বলে গেছেন, এভাবে করা যাবে না। তাহলে জনপ্রশাসন কেন? বিভিন্ন ঘটনায় মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা অবস্থান করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু আমরা জেনেছি বিএনপির গন্ধ পেলেই প্রশাসন থেকে সঙ্গে সঙ্গে তাদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার মানে কোনো বিশেষ এজেন্ডার মধ্য দিয়ে এই সরকার চলছে কিনা? এটাই আজকে মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক সরাফত আলী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা প্রমুখ।