
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি টাইমলাইন ঘোষণা করেছে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা আশাবাদ তৈরি করলেও প্রশ্ন উঠেছে স্বচ্ছতা, সময়সীমা এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই রোডম্যাপ অনেক ক্ষেত্রেই অস্পষ্ট এবং এতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়গুলো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন, সময়ানুবর্তিতা এবং কার্যকরী অংশীদারত্ব নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছেন। একদিকে যেমন প্রশাসনের ঘোষণাকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে দেরি, দ্ব্যর্থতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার জন্য সমালোচনাও করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের এই পথচলায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-একটি কার্যকর, স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ডাকসু নির্বাচনের যে টাইমলাইন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকাশ করেছে তা ডাকসু ও হল সংসদসমূহের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত আলোচনার প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে যা আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্বাচনের আচরণবিধি নির্ধারণের নানা বিষয়ে এখনও অস্বচ্ছতা বিদ্যমান। কীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তসমূহ চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত হিসেবে প্রচারিত সিদ্ধান্তসমূহের বিষয়েও সবার মতপ্রকাশের বিষয় রয়েছে। না হয় এসব বিষয় নিয়ে পরে জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনাও প্রকট হয়ে আছে। এছাড়াও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব পদক্ষেপের কথা টাইমলাইনটিতে লেখা আছে সেসব উল্লিখিত সময়ানুযায়ী বাস্তবায়ন করা ক্যাম্পাস ও জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কতটুকু বাস্তবিক সেটাও খুবই অস্পষ্ট।
গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত সব বিষয়েই অত্যন্ত আগ্রহী ও উৎসুক নজর রাখছে এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখানোর চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টের প্রতি আন্তরিক থেকে সকল অংশীজনের ভূমিকা রাখা উচিত।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা ইতিবাচক, তবে দীর্ঘসূত্রতা ও নানা আনুষ্ঠানিকতা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন অংশীজনের প্রয়োজনীয় মিটিং সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত ডাকসু গঠনতন্ত্রের চূড়ান্ত কপি প্রকাশ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণে আন্তরিকতা থাকলে মে মাস পর্যন্ত সময় লাগার কথা নয়। তিনি বলেন, দ্ব্যর্থবোধক নির্দেশনা ও অস্পষ্ট শব্দচয়নে গঠিত এই টাইমলাইন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাটকীয়তার শামিল। ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অসমাপ্ত প্রতিটি কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অন্যতম কারণ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করা। কিন্তু ৮ মাস অভ্যুত্থানের ৮ মাসেও কোনো কাজ হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন রোডম্যাপ ঘোষণা কিছুটা আশা জাগানিয়া। তবে রোডম্যাপে যেহেতু নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নেই তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায় যে আদৌ নির্বাচনের কাল বিলম্ব হয় কি না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোডম্যাপে যে অস্পষ্টতা রেখেছে তা দূর করে দ্রুতই নির্বাচন দিতে পারেন। কাল বিলম্ব না করে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। যেন এই রক্তক্ষয়ী একটি অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা যেন কথা বলার মতো প্ল্যাটফর্ম পান বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ১৫ এপ্রিল ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করলেও, সেখানে নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার করা হয়নি। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। একটি অদৃশ্য শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর ভর করে ডাকসু বানচালের চেষ্টা করছে। তিনি ঢাবি প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন কোনো অদৃশ্য শক্তির ভয় না পায়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক বলেন, গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গণ নিশ্চিতের জন্য ডাকসু নির্বাচন অত্যাবশ্যক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজকে ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই শিক্ষার্থী, সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনসহ সকল অংশীজনের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হোক। আশু এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, আমরা দেখছি প্রশাসন বারবার নির্বাচনের দিন তারিখ ধার্যের চেষ্টা করলেও গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রশ্ন বারবার এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব ছাত্র সংগঠনই নিজেদের গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাবে বলেছে তারা সভাপতি পদে একজন নির্বাচিত শিক্ষার্থী চান। অনির্বাচিত ভিসিকে প্রধান বানিয়ে তৈরি যে কাঠামো তার পরিবর্তন চান। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতির ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চান। সেই সব প্রশ্নের মীমাংসা না করে রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়াস খুবই দুঃখজনক।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন। আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে অনেক দেরি হয়ে গেলেও তারা অবশেষে ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন। তবে সদ্য ঘোষিত ডাকসুর টাইমলাইন নিয়ে আমাদের কিছুটা আপত্তি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে মে মাসের মাঝামাঝিতে ডাকসু নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মে মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন চান। মে মাসের মাঝামাঝিতে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সেটি সম্ভব হবে না।
মুসাদ্দেক প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, নির্বাচন কমিশন এপ্রিল মাসের মধ্যে গঠন করে শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করুন।
১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিক শিকদার বলেন, এই টাইমলাইনে সুনির্দিষ্ট সময় না দিয়ে এক ধরনের সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। যা মূলত শিক্ষার্থীদের সামনে মুলা ঝোলানোর মতো একটা বিষয়। আমরা চাই, এই টাইমটা সুনির্দিষ্ট করা হোক এবং নির্বাচনটা যেন জুন মাসের মধ্যেই হয়। তা নাহলে নির্বাচনটা হবে বলে মনে হয় না। অনেক গোষ্ঠীই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা করেন সাদিক।
২০-২১ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী নুমান আহমেদ বলেন, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ৯ দফার একটি অন্যতম দফা ছিল দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। সে জায়গা থেকে ৮ মাস হয়ে গেলেও নির্বাচন না হওয়াটা হতাশাজনক। ছাত্রদের দাবি ছিল গঠনতন্ত্র ও পদ্ধতিগত সংস্কার করে নির্বাচন করা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করাটা ইতিবাচক হলেও এই রোডম্যাপ অনেক ক্ষেত্রেও অস্পষ্ট। সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তও এতে নেই। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্পষ্ট এ রোডম্যাপকে আরো সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করে প্রকাশ করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের হাতে ক্যাম্পাসের নেতৃত্বভার তুলে দেয়া।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন, সময়ানুবর্তিতা এবং কার্যকরী অংশীদারত্ব নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছেন। একদিকে যেমন প্রশাসনের ঘোষণাকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে দেরি, দ্ব্যর্থতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার জন্য সমালোচনাও করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের এই পথচলায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-একটি কার্যকর, স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ডাকসু নির্বাচনের যে টাইমলাইন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকাশ করেছে তা ডাকসু ও হল সংসদসমূহের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত আলোচনার প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে যা আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্বাচনের আচরণবিধি নির্ধারণের নানা বিষয়ে এখনও অস্বচ্ছতা বিদ্যমান। কীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তসমূহ চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত হিসেবে প্রচারিত সিদ্ধান্তসমূহের বিষয়েও সবার মতপ্রকাশের বিষয় রয়েছে। না হয় এসব বিষয় নিয়ে পরে জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনাও প্রকট হয়ে আছে। এছাড়াও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব পদক্ষেপের কথা টাইমলাইনটিতে লেখা আছে সেসব উল্লিখিত সময়ানুযায়ী বাস্তবায়ন করা ক্যাম্পাস ও জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কতটুকু বাস্তবিক সেটাও খুবই অস্পষ্ট।
গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত সব বিষয়েই অত্যন্ত আগ্রহী ও উৎসুক নজর রাখছে এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখানোর চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টের প্রতি আন্তরিক থেকে সকল অংশীজনের ভূমিকা রাখা উচিত।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা ইতিবাচক, তবে দীর্ঘসূত্রতা ও নানা আনুষ্ঠানিকতা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন অংশীজনের প্রয়োজনীয় মিটিং সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত ডাকসু গঠনতন্ত্রের চূড়ান্ত কপি প্রকাশ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণে আন্তরিকতা থাকলে মে মাস পর্যন্ত সময় লাগার কথা নয়। তিনি বলেন, দ্ব্যর্থবোধক নির্দেশনা ও অস্পষ্ট শব্দচয়নে গঠিত এই টাইমলাইন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাটকীয়তার শামিল। ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অসমাপ্ত প্রতিটি কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অন্যতম কারণ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করা। কিন্তু ৮ মাস অভ্যুত্থানের ৮ মাসেও কোনো কাজ হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন রোডম্যাপ ঘোষণা কিছুটা আশা জাগানিয়া। তবে রোডম্যাপে যেহেতু নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নেই তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায় যে আদৌ নির্বাচনের কাল বিলম্ব হয় কি না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোডম্যাপে যে অস্পষ্টতা রেখেছে তা দূর করে দ্রুতই নির্বাচন দিতে পারেন। কাল বিলম্ব না করে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। যেন এই রক্তক্ষয়ী একটি অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা যেন কথা বলার মতো প্ল্যাটফর্ম পান বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ১৫ এপ্রিল ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করলেও, সেখানে নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার করা হয়নি। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। একটি অদৃশ্য শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর ভর করে ডাকসু বানচালের চেষ্টা করছে। তিনি ঢাবি প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন কোনো অদৃশ্য শক্তির ভয় না পায়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক বলেন, গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গণ নিশ্চিতের জন্য ডাকসু নির্বাচন অত্যাবশ্যক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজকে ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই শিক্ষার্থী, সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনসহ সকল অংশীজনের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হোক। আশু এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, আমরা দেখছি প্রশাসন বারবার নির্বাচনের দিন তারিখ ধার্যের চেষ্টা করলেও গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রশ্ন বারবার এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব ছাত্র সংগঠনই নিজেদের গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাবে বলেছে তারা সভাপতি পদে একজন নির্বাচিত শিক্ষার্থী চান। অনির্বাচিত ভিসিকে প্রধান বানিয়ে তৈরি যে কাঠামো তার পরিবর্তন চান। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতির ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চান। সেই সব প্রশ্নের মীমাংসা না করে রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়াস খুবই দুঃখজনক।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন। আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে অনেক দেরি হয়ে গেলেও তারা অবশেষে ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন। তবে সদ্য ঘোষিত ডাকসুর টাইমলাইন নিয়ে আমাদের কিছুটা আপত্তি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে মে মাসের মাঝামাঝিতে ডাকসু নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মে মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন চান। মে মাসের মাঝামাঝিতে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সেটি সম্ভব হবে না।
মুসাদ্দেক প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, নির্বাচন কমিশন এপ্রিল মাসের মধ্যে গঠন করে শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করুন।
১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিক শিকদার বলেন, এই টাইমলাইনে সুনির্দিষ্ট সময় না দিয়ে এক ধরনের সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। যা মূলত শিক্ষার্থীদের সামনে মুলা ঝোলানোর মতো একটা বিষয়। আমরা চাই, এই টাইমটা সুনির্দিষ্ট করা হোক এবং নির্বাচনটা যেন জুন মাসের মধ্যেই হয়। তা নাহলে নির্বাচনটা হবে বলে মনে হয় না। অনেক গোষ্ঠীই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা করেন সাদিক।
২০-২১ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী নুমান আহমেদ বলেন, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ৯ দফার একটি অন্যতম দফা ছিল দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। সে জায়গা থেকে ৮ মাস হয়ে গেলেও নির্বাচন না হওয়াটা হতাশাজনক। ছাত্রদের দাবি ছিল গঠনতন্ত্র ও পদ্ধতিগত সংস্কার করে নির্বাচন করা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করাটা ইতিবাচক হলেও এই রোডম্যাপ অনেক ক্ষেত্রেও অস্পষ্ট। সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তও এতে নেই। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্পষ্ট এ রোডম্যাপকে আরো সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করে প্রকাশ করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের হাতে ক্যাম্পাসের নেতৃত্বভার তুলে দেয়া।