আগামী ঈদুল আযহার পর দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জোরালো শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। মূলত ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর পর পরই আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। একই সঙ্গে আগামীদের দলের পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রিয়, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সারা দেশে দলকে চাঙ্গা ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ঈদের পর থেকে মাঠে নামছে টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। দলের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযানের লক্ষ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম ঈদের পর পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে। এবং তৃণমূল থেকে দলকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি এই শুদ্ধি অভিযান চালাবেন। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে মাঝি হয়েও নৌকা ডোবানোর সঙ্গে জড়িত মন্ত্রী-এমপি-বড় বড় নেতাও রেহাই পাবেন না এই শুদ্ধি অভিযানে। একইসঙ্গে ক্ষমতার মধু খেতে দলে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড, বহিরাগত এবং দখল-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত নেতাদের চিহ্নিত করে তখন দল থেকে বের করে দেয়ার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই আহ্বানও সাড়া দেয়নি মন্ত্রী-এমপিরা। এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন, কোন কোন মন্ত্রী, এমপির আত্মীয়রা চর দখলের মতো এলাকা দখলের জন্য আধিপত্য বিস্তার করছেন এবং আত্মীয়করণ করছেন। যারা এটির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের নামের তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে দেওয়া হবে। তবে যারা দলের ভেতর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন এবং কোন্দল সৃষ্টি করছেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা কিছু বলেননি। তারা মনে করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, দলের ভেতরের কোন্দল, বিভক্তি এবং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দলকে ব্যবহার করা, দলের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা এই সমস্ত বিষয়গুলোকে একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ব্যস্ত। এবার আওয়ামী লীগ তাঁর প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর বার্ষিকী পালন করবে। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের আবেগ অনুভূতি রয়েছে। ইতোমধ্যে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণভাবে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এখন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঠিক পরপরই আওয়ামী লীগের ভেতর যারা কোন্দল সৃষ্টি করছেন, যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় মাই ম্যান তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হবে। একইসুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি নাম প্রকাশ না করারশর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি অনেক সহ্য করেছেন। নির্বাচনের পর থেকে তিনি বারবার বলছেন যে, দলের ভেতরে যেন কেউ বিভক্তি সৃষ্টি না করে, নির্বাচনের পর এখন সকলে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে কিন্তু বাস্তবতা হল যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী তারা কারও কথাই শুনছেন না। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। নাম প্রকাশ না করারশর্তে তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা অপকর্ম করছেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা লঙ্ঘন করছেন এবং দলের ভেতর নানা রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং এই তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে একশ্রেণির লোক আছে, যখন যে সরকার তখন সে সরকারের সঙ্গে থাকে। ঠিক তেমনি আমাদের দলেও কিছু লোক ঢুকে পড়েছে; যারা এখনো মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস করে না। স্বাধীনতাকে মানে না। এদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। কারণ এরাই দলের বদনাম করে থাকে। তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।