
দেশের শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানান, নতুন এই মূল্যহার চলতি এপ্রিল মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিল্প কারখানার বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ারÑঅর্থাৎ শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩১.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত চাহিদার চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই নতুন মূল্যহার প্রযোজ্য হবে বলে জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান। এর আগে পেট্রোবাংলা একটি প্রস্তাব দিয়েছিল যাতে নতুন এবং প্রতিশ্রুত (ইতোমধ্যে অনুমোদিত কিন্তু কার্যকর না হওয়া) গ্রাহকদের গ্যাসের দাম ৭৫.৭২ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। এমনকি প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের অর্ধেক বিল বর্তমান দরে এবং বাকি অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা হার অনুযায়ী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিইআরসি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি আয়োজন করে। সেখানে ব্যবসায়ী এবং শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধিরা পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। বিশেষ করে একই খাতে দুই ধরনের গ্যাস মূল্য নির্ধারণকে বৈষম্যমূলক” এবং অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেন উদ্যোক্তারা। শুনানিতে পেট্রোবাংলা দাবি করেছিল, বর্তমান গ্যাস বিক্রয়মূল্য অপর্যাপ্ত হওয়ায় বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হচ্ছে। সেই ঘাটতি পূরণেই তারা মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে শিল্প মালিকরা এ যুক্তিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন এবং তাদের দাবি, এর ফলে দেশীয় শিল্প উৎপাদন এবং বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নতুন শিল্পে যারা বিনিয়োগ করতে চান, তারা বিকল্প জ্বালানির চিন্তা করতে পারবেন। এটি এক ধরনের সুযোগও তৈরি করে।” এছাড়া তিনি জানান, বিইআরসি ভবিষ্যতে বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করবে এবং প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ করে পর্যালোচনা চালাবে। তিনি আরও বলেন, “গত ১২ মাসে কী ধরনের নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ১২ মাসে কী দেওয়া হবে, সেটিও নজরে রাখা হবে।” নতুন মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যেই শিল্প উদ্যোক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, এই বাড়তি ব্যয় উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে এবং দেশীয় শিল্প প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। বিশেষত রপ্তানিমুখী খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। একজন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা গ্যাসের উপর নির্ভর করে উৎপাদন চালাই। এমনিতেই ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসের কারণে আমরা চাপে আছি। এর মধ্যে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি আমাদের আরও বিপদে ফেলবে।”