
প্রার্থীদের দাবির মধ্যে চার বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। গতকাল রোববার দুপুরে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল এবং ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ফল জুন মাসের মধ্যে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ৮ মে শুরু হবে। শেষ হবে ৭ জুলাই। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থী যারা ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন তাদের মৌখিক পরীক্ষা ২২ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। ১৬ জুনের পর এ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর ২৭ জুনের পরিবর্তে ৮ অগাস্ট নেওয়া হবে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। জট নিরসনে ৪৪ থেকে ৪৭ পর্যন্ত চার বিসিএসের রোডম্যাপ দাবি করে ৬ এপ্রিল অবস্থান কর্মসূচি শেষে পিএসসিকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন প্রার্থীরা। দ্রুত এই ‘রোডম্যাপ’ না দিলে ফের আন্দোলনে নামার হুমকিও দেন তারা। প্রার্থীরা বলেছিলেন, ?৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা মে মাসের মধ্যে শেষ করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে হবে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ৪৬ এর লিখিত পরীক্ষার শুরু করতে হবে। ৭ এপ্রিল ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শেষে এবং ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ফের জানিয়েছিলেন প্রার্থীরা। কমিশন বলছে, ৪৬তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়গুলোর লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ থেকে ১৯ মের মধ্যে এবং পদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর লিখিত পরীক্ষা সম্ভাব্য জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ২২ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত থাকবে এবং স্থগিত মৌখিক পরীক্ষাগুলো ১৬ জুনের পরে দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে। স্থগিত মৌখিক পরীক্ষাগুলোর পরিবর্তিত সময়সূচি অতিসত্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চলমান বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে ভিত্তিহীন এবং খণ্ডিত তথ্য সরবরাহ করছে, যা বিসিএস পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মধ্যে থাকা এসব বিভ্রান্তি দূর করার লক্ষ্যে এ তথ্য উপস্থাপন করছে। বিসিএসের জট নিয়ে কমিশন বলেছে, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস নিয়ে সৃষ্ট জট নিরসনকল্পে সকল বিসিএস প্রার্থীদের উদ্বেগ বিবেচনায় রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান জট সমাধানের জন্য কমিশন সবোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অপরিহার্য কিছু বিষয় যেমন-প্রশ্নপত্র ছাপানো, পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনায় কমিশনকে অন্য প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ২০২১ সালে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এক দফায় শুরু হলেও গত ১৮ নভেম্বর তা বাতিল করে পিএসসি। পরে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ফের শুরু হয়। প্রথম দফায় মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ৮ মে। মাঝে সরকারি চাকরি কোটা সংস্কারের ও সরকার বিরোধী আন্দোলনের কারণে প্রথম দফায় এবং সরকার পতনের পর ২৫ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আগে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে মোট ১১ হাজার ৭৩২ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। ‘ন্যায্যতা বজায় রাখতে প্রার্থীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে’ এ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ২০২৩ সালের ১৯ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৭৮৯ জন লিখিত পরীক্ষায় বসেন গত বছর ২৩ জানুয়ারি, যা শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। পিএসসি গত নভেম্বরে জানিয়েছে, কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে থেকে শুরুর ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে কমিশন। দুই দফায় প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করার পর উত্তীর্ণ ২১ হাজার ৩৯৭ জন প্রার্থী এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি, যার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছর ২৬ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছর ৯ মে প্রিলিমিনারি প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন। গত বছরের ২৮ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পরির্তনের পর অস্থির সময়ের কারণে ২৫ অগাস্ট তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ‘বৈষম্য দূরীকরণে’ প্রথম দফায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের সঙ্গে আরও সমসংখ্যক প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ফের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে গত ১৮ নভেম্বর ঘোষণা দেয় পিএসসি। পরে গত ২৭ নভেম্বর আগে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৩৮ জনের সঙ্গে আরও ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল ফের প্রকাশ করা হয়েছে। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুন (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছিল পিএসসি। যা পিছিয়ে ৮ অগাস্ট অনুষ্ঠানের ঘোষণা এল। ৩ হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার এবং ২০১টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে গত ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পিএসসি। গত ১০ ডিসেম্বর সকালে ১০টা থেকে অনলাইনে এ বিসিএসের আবেদনগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৯ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে পিএসসি। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর ৪৭তম বিসিএসের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে আবেদন ফি ও মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) নম্বর কমানো হয়। এ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ফলে মোট নম্বর ১১০০ থেকে পরিবর্তন করে ১০০০ করা হয়েছে। এ বিসিএসে প্রথমবারের মত আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এ বিসিএসের আবেদন, চলে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।