
পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। কিন্তু এই উৎসবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘পান্তা-ইলিশ’ খাওয়ার প্রবণতাকে ‘আরোপিত সংস্কৃতি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি এ বছর পহেলা বৈশাখে পান্তার সঙ্গে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “পান্তা-ইলিশ আমাদের প্রকৃত সংস্কৃতির অংশ নয়। এটি মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক একটি রীতি, যা সারাদেশে প্রভাব ফেলেছে। অথচ এই সময়টাতেই নদীতে জাটকা পাওয়া যায়, যা খাওয়া আইনত দণ্ডনীয়।” তিনি আরও বলেন, “পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার নামে অনেকেই জাটকা খাচ্ছেন, যা ভবিষ্যতের ইলিশ উৎপাদনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের আইন অনুযায়ী এই সময় জাটকা ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ। বাজারে যেসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই হয় জাটকা, নয়তো কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত মাছ। আমরা চাই না এই মাছ বাজারে আসুক।” ফরিদা আখতার জোর দিয়ে বলেন, “জেলেরা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মৌসুমে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে পারে, তাহলে আমরা একদিন ইলিশ না খেয়ে জাটকা সংরক্ষণের পাশে দাঁড়াতে পারি। পান্তা-ইলিশ না খেয়ে বরং ভর্তা, পোড়া মরিচ, শাক-সবজি দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করুন।” তিনি এ সময় সবাইকে চৈত্র সংক্রান্তি পালনের আহ্বান জানান, যা পহেলা বৈশাখের আগের দিন বাঙালির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দিন। “চৈত্র সংক্রান্তিতে কোনো আমিষ খাওয়া হয় না। ১৪ রকমের শাক, বিশেষ করে তিতো গিমা শাক খাওয়ার রীতি রয়েছে,”বলেন উপদেষ্টা। “পহেলা বৈশাখে দই, চিড়া, মিষ্টি, ছাতুর শরবত, ভাত, শাক-সবজিÑএইসব খেয়ে দিনটি উদযাপন করাটাই আমাদের সংস্কৃতির মূল উপাদান হওয়া উচিত।” উপদেষ্টা জানান, মঙ্গলবার (আজ) থেকে শুরু হচ্ছে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’, যা চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এই সময় জাটকা আহরণ, বিক্রি ও ভোগ নিষিদ্ধ থাকবে এবং যারা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “ইলিশ রপ্তানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা এখনো বহাল আছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু দেশে সীমিত ছাড় দেওয়া হয়েছে, যাতে তারাও এই জাতীয় মাছের স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “ইলিশ ধরার মৌসুমে আমাদের জলসীমায় বিদেশি জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবার বৈজ্ঞানিকভাবে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এবার ভারতের জেলেদের বাংলাদেশি জলসীমায় ঢ়ুকে ইলিশ ধরার সুযোগ থাকবে না।” ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারি উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন ফরিদা আখতার। তিনি জানান, “জাটকা সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন করে তুললে, ইলিশের উৎপাদন ৫০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। তখন বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কমে আসবে। তবে এজন্য বাজারে সিন্ডিকেট রোধে গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।” ফরিদা আখতার বলেন, “এই একটি দিন আমরা যদি ইলিশ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা সবাই মিলে আরও বেশি ইলিশ উপভোগ করতে পারব। আসুন, পহেলা বৈশাখে ‘পান্তা-ইলিশ’ না খেয়ে প্রকৃত বাঙালি ঐতিহ্যে ফিরে যাই এবং জাটকা সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি।”