
* ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর চাকরিজীবীরা কর্মব্যস্ত রূপে ফিরেছে
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে বেশিরভাগ রাজধানীবাসী ছুটেছিলেন গ্রামের পথে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। এতে-ই ফাঁকা হয়ে পড়েছিল রাজধানী। দীর্ঘ এই ছুটি শেষে আজ থেকে নিজেদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন তারা। আর শ্রমজীবী মানুষেরা ফিরেছেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। ফলে একদিকে যেমন শুরু হয়েছে কর্মব্যস্ততা, অন্যদিকে নগরীও ফিরেছে তার চিরচেনা রূপে। রাজধানীর সড়কে বেড়েছে কর্মচঞ্চল মানুষের পদচারণা, ফলে বেড়েছে যানজট। ঈদের টানা নয় দিনের ছুটি কাটিয়ে প্রথম কার্মদিবসে রাজধানীর সড়কগুলো ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা দৃশ্য।
গতকাল রোববার রাজধানীর রামপুরা, স্টাফ কোয়াটার ও যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান-পল্টন-প্রেসক্লাব, শাহবাগ-কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, ফার্মগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও আগারগাঁওসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে ও গুগল ম্যাপের সহযোগিতায় যানজটের এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে টানা ৯দিন ঈদের ছুটি চলাকালীন রাস্তায় গণপরিবহনের উপস্থিতি কম থাকলেও গতকাল রোববার প্রথম কর্মদিবসেই রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। গণপরিবহনের উপস্থিতি সীমিত থাকায় অফিসগামী মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সে সময় যানজটের দেখা না মিললেও বেলা বাড়তে-ই শুরু হয় যানজট।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ঈদের ছুটি শেষে সকালে প্রথমদিনে কর্মব্যস্ত মানুষ সকাল থেকে-ই এসে ভিড় করতে শুরু করেন বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। সকাল থেকেই ব্যস্ততার দেখা মেলে রাজধানীর সড়কে। কেউ কেউ বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকছেন কেউবা আবার সুযোগ পেলে উঠে পড়ছেন। সব বাসে-ই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাসে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সেই সঙ্গে সকাল থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতি ছিল বেশ ভালোই। এছাড়া সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিকের দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চিত্রও দেখা গেছে। অফিস-আদালত শুরু হওয়ায় দীর্ঘ ছুটি শেষে যানবাহনে যাত্রীর পূর্ণতায় খুশিভাব প্রকাশ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে সড়কে ফিরে আসে যানজট, গাড়ির ব্যস্ততা, ট্রাফিক সিগনাল, গণপরিবহনে যাত্রীদের ভিড়। নগরীর এই পুরানো চিত্র ফিরে আসাতে-ই কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বস্তির কথা জানিয়েছেন গণপরিবহনের কর্মীরা। গুলিস্তানে নিজের কর্মস্থলে যোগ দিতে আসেন জিয়াউল হক। তিনি বলেন, আমার ঈদ ঢাকাতেই করা হয়েছে। বন্ধের এই কয়দিন খুব শান্তিতে চলাফেরা করতে পেরেছি। এখন আবার যানজট শুরু হয়েছে। যদিও সেরকমভাবে আজকে জ্যামে পড়িনি তবে বিকালে কী হবে জানি না। আরেক কর্মজীবী আহাদ হাসান বলেন, আমি মোহাম্মদপুর থেকে পল্টনে এসেছি অফিসে। মোটামুটি জ্যামে পড়েছি। বাসেও ভিড় ছিল। তবে এই কয়দিনের যে শান্তি ছিল সেটা আর নেই। আসলে কিছু করারও নেই; এটা-ই ঢাকা।
এদিকে ছুটি শেষে অফিস-আদালত খুলে যাওয়াতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন গণপরিবহনের কর্মীরা। মিডলাইন বাসের চালকের সহকারী (হেলপার) মো. ইউনুস বলেন, ঈদের ছুটিতে আমরা যাত্রী-ই পাইনি। যাত্রী না পেলে আমাদের লস। রাস্তা ফাঁকা থাকে ঠিক-ই কিন্তু যাত্রী ডেকে আনতে হয়েছে। এখন পাচ্ছি। যাত্রী না থাকলে গাড়ি চালিয়ে মজা নেই। দিশারি বাসের চালক আকবর হোসেন বলেন, আমার গাড়ি চিড়িয়াখানা লাইনের। তাই ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানার যাত্রী পেয়েছি। আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি। বিহঙ্গ বাসের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ছুটির মধ্যে যাত্রী খরায় ছিলাম। আজকে থেকে অফিস খুলেছে সবার; আমাদের যাত্রী পাওয়া শুরু হয়েছে। অবশ্য ছুটির সময় গাড়িও কম ছিল, সব গাড়ি রাস্তায় নামেনি। এখন সব গাড়ি আছে রাস্তায়। পুরানা পল্টন এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা বিজয় সরকার বলেন, সকাল ১০টা থেকে এই এলাকায় গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। যানজটের সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী সিগনাল দিয়ে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে এখনও পুরোপুরি ব্যস্ততার চিত্র দেখিনি। এই এলাকা আরও জনবহুল থাকে।
যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীদের ভিড়, যানজট: ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফেরা অফিস-আদালত ও শ্রমজীবী মানুষদের যাত্রাবাড়ীতেও ভিড় করতে দেখো গেছে। এদিন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা ফেরত যাত্রীদের ঢল। অনেকে পরিবার নিয়ে এক সাথে এসেছেন। এতে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এর মধ্যে পূর্বে আন্তঃজেলা বাসের যানজটের বহর যাত্রাবাড়ী থেকে ঠেকেছে রায়েরবাগ পর্যন্ত। কুমিল্লা থেকে তিশা বাসে আগত কয়েকজন যাত্রী জানান, যানজটের কবলে পড়ে কুতুবখালী থেকে হেঁটে যাত্রাবাড়ী আসতে হয়েছে। অথচ আমাদের শেষ স্টপেজ ছিল সায়দাবাদ পর্যন্ত। চট্টগ্রাম থেকে আসা বিআরটিসি বাসের চালক আলী হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের যাত্রী খরা আজ থেকে কিছুটা কাটতে শুরু হয়েছে। তিনি মনে করেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ের মতো তাদের ব্যস্ততা বাড়বে। এছাড়াও দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ পড়ছে অভ্যন্তরীণ বাসের ওপরে। বিশেষ করে পশ্চিমে শহীদ ফারুক রোডের দুই পাশেই একটি বাসের সাথে আরেকটি বাস স্পর্শ করে আছে। চৌরাস্তা মোড় থেকে একেবারেই দয়াগঞ্জ পর্যন্ত একই চিত্র। তবে স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী শওকত হোসেন জানান, গত শনিবার সকালেও রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। আজকে যাত্রাবাড়ি মোড়ে প্রচন্ড ভীড় ও গাড়ির চাপ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেছে। অপরদিকে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা প্রতিটি বাসই যাত্রীতে পরিপূর্ণ। সেই সড়কে ও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইপাড় পর্যন্ত কয়েকশ’ যানবাহনের সারি। চালকরা জানান, রাত থেকে এ চাপ আরও বাড়বে।