
কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর বাড়িতে হামলার ঘটনার দুই দিন কেটে গেছে। দুই দিনেও হয়নি কোনও মামলা। গ্রেপ্তাার হয়নি কোন আসামিও। এদিকে নিরাপত্তাহীনতায় শেষ পর্যন্ত আবারও বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। যারা জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করেছেন, তাদের নির্দেশেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের পরিবারের। গত ৩ এপ্রিল দিনগত রাত প্রায় ১টার দিকে উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামে আবদুল হাইয়ের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় আবদুল হাই, তার স্ত্রী, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা বাড়িতে ছিলেন। হামলাকারীরা বাড়ির গেট ও দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। তবে ঘরে প্রবেশ করতে পারেননি। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনার সাথে সাথে আমরা গিয়েছি। কাউকে পাইনি। আমাদের আসার খবর পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে। মামলা ও গ্রেপ্তাারের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে বলেছি যেন মামলা করেন। কিন্তু তারা তাতে রাজি নন। তারা শুধু মুখেই বলেছে যারা পূর্বের ঘটনা ঘটিয়েছে তারাই এই হামলা করতে পারেন। কিন্তু কোনও অভিযোগ করেননি। তবে আমরা পূর্বের ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের খোঁজার চেষ্টা করছি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের গ্রেপ্তাার অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু পূর্বের অভিযুক্তরা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে তাদের আমরা গ্রেপ্তাার করতে পারলে বাড়িতে হামলার ঘটনার জড়িতদের পাওয়া যাবে। আবদুল হাইয়ের ছেলে এবং উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা গত শনিবার বলেন, আমরা বাড়ি এসেছিলাম ঈদের একদিন আগে। প্রশাসনের আশ্বাসে বাড়িতে এসেছিলাম। পুলিশ সার্বক্ষণিক আমাদের সাথে ছিল। কিন্তু আমরা ওই রাতে পুলিশকে বলেছিলাম, কোনও সমস্যা নেই, আপনারা যেতে পারেন। সেই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। এরপর থেকে নিয়মিত পুলিশ আমাদের বাড়িতে গেছে। আমরা আজ বাড়ি ছেড়েছি। ফেনীতে আছি। বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মামলা বা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা পূর্বে হামলা করেছিল তারাই নতুন করে আবার হামলা করেছে। দুই রাত ঘুমাতে পারিনি। আমাদের জীবন ঝুঁকিতে ছিল। পূর্বের ঘটনায় অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর কী মামলা করবো? এরাইতো অভিযুক্ত। ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, যারা আমার গলায় জুতার মালা পরিয়েছিল, তারাসহ একদল দুর্বৃত্ত বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাড়িতে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলাকারীদের হাতে রামদা, চায়নিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল। বাড়ির গেট, ঘরের দরজা-জানালায় কুপিয়েছে। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারলে আমাকে প্রাণেই মেরে ফেলতো। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে পালিয়ে গেছে তারা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। আবদুল হাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরানোয় ১০০ কোটি টাকার মানহানি এবং মারধরের অভিযোগে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা ২৫ ডিসেম্বর থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। পরদিন পুলিশ পাঁচ জনকে আটক করেছিল। তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তাার দেখিয়ে ২৪ ডিসেম্বর কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে একজনকে ২৫ ডিসেম্বর করা মামলায় আসামি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা। ইসমাইল হোসেন মজুমদার নামে ওই আসামিরও জামিন হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। এরপর থেকে কাউকে গ্রেপ্তাার করতে পারেনি পুলিশ।