
আমাদের শরীরের বেশিরভাগ পরমাণু মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের চারপাশে একটি মহাজাগতিক ‘কনভেয়র বেল্ট’-এ ঘুরে বেড়িয়েছে। তারপর সেগুলো আমাদের ছায়াপথে পুনরায় ফিরে এসেছে, এমনকি সূর্য ও পৃথিবী তৈরি হওয়ার আগে। এ সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরমাণুগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে আমাদের মিল্কিওয়ের বাইরে মহাজাগতিক ভ্রমণে ছিল। তারপর মিল্কিওয়েতে ফিরে এসে নতুন গ্রহ এবং আমাদের মতো জীবের বা প্রাণের অংশ হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের শরীরের কার্বন সম্ভবত অনেক আগে অন্য ছায়াপথের কাছাকাছি ভ্রমণ করেছে। এরপর মহাজাগতিক ‘কনভেয়র বেল্ট’-এর সাহায্যে ফিরে এসেছে।
লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন মতে, নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, আমাদের শরীরের বেশিরভাগ পরমাণু, বিশেষ করে কার্বন, অক্সিজেন, লোহা একসময় আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের বাইরে চলে গিয়েছিল। এই পরমাণুগুলো মূলত প্রাথমিকভাবে নক্ষত্র থেকে তৈরি হয় এবং যখন নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয় (সুপারনোভা), তখন এগুলো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুলো শুধু মিল্কিওয়ের মধ্যেই ঘুরে বেড়ায় না, বরং মহাজাগতিক ‘কনভেয়র বেল্ট’-এর মাধ্যমে ছায়াপথের বাইরে চলে যায় এবং একইভাবে আবার ফিরে আসে।
মানুষের আয়ত্তাধীন জ্ঞান বলে, এই ‘কনভেয়র বেল্ট’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘সার্কামগ্যালাকটিক মিডিয়াম’ (পরৎপঁসমধষধপঃরপ সবফরঁস বা ঈএগ)। এটি একটি বিশাল গ্যাসের মেঘ, যা ছায়াপথের চারপাশে থাকে এবং নক্ষত্রের বিস্ফোরণ থেকে ছড়িয়ে পড়া উপাদানগুলোকে বহন করে। আগে ধারণা ছিল, কার্বন এত হালকা যে, ছায়াপথের বাইরে যেতে পারে না। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, কার্বন শুধু বাইরে যায় না, বরং এই মহাজাগতিক স্রোতে প্রচুর পরিমাণে থাকে।
হাবল টেলিস্কোপের ‘কসমিক অরিজিন্স স্পেকট্রোগ্রাফ’ দিয়ে দূরের কোয়েসারের আলো পরীক্ষা করে তারা জানতে পেরেছেন, কার্বন মিল্কিওয়ে থেকে ৪,০০,০০০ আলোকবর্ষ দূরেও পাওয়া যায়-যা আমাদের ছায়াপথের আকারের চার গুণ!
গবেষণার সহ-লেখক জেসিকা ওয়ার্ক বলেন, আমাদের শরীরের কার্বন অনেক সময় মিল্কিওয়ের বাইরে কাটিয়েছে। অক্সিজেন, লোহার মতো অন্যান্য উপাদানও এভাবে ভ্রমণ করেছে। তাই আমাদের শরীরের বেশিরভাগ পরমাণু একসময় ছায়াপথের বাইরে ছিল। এই আবিষ্কার থেকে বোঝা যায়, আমরা শুধু পৃথিবীর বা মিল্কিওয়ের নই, আমাদের শরীরের কণাগুলো পুরো মহাবিশ্বের ভ্রমণকারী!