
আওয়ামী লীগ ও তাদের আদর্শিক ১৪দলীয় জোট নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ-আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন। তবে অনেকেই বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যখন ঢাকায়, তখন চীন সফরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। এরইমধ্যে বেইজিংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন ১০ সদস্যের সরকারের শরিক বাম নেতারা। তাদের ফেরার পরপরই চীনে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ৫০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
আওয়ামী লীগ ও জোট নেতারা বলছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে তারা দেশটিতে যাচ্ছেন। জোটের বাম নেতারা প্রায় প্রতি বছরই চীন সফরে যান। চলতি বছর কয়েক ধাপে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা সফরে যাবেন, তাদের এই চীন সফর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটিকে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার মতো কোনও কারণ নেই। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ৫০ সদস্যের একটি দল চীনে সফরে যাচ্ছেন ২৫ মে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের নেতৃত্বে এই সফরে থাকবেন আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সদস্যরা। সফর শেষে আগামী ৫ জুন তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণপত্রে আওয়ামী লীগের ছাত্র, যুব ও নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া আওয়ামী লীগের তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে যুক্ত থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ওয়েব টিমের সদস্যরাও প্রতিনিধি দলে থাকবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চীন সফর নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। আর এই ব্যাপারে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি রাখছে। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে চীন সফরের হিড়িক কেন এই নিয়ে নানামূখী আলোচনা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলছেন, এটি হঠাৎ করেই নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সময়ে ভারত সফরও করেন। ভারতেও বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের আলাপ আলোচনার জন্য মতবিনিময় করা হয়। ভারতীয় প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে আসেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল নিয়মিতভাবে যায়। কিন্তু এবার চীনের সফরগুলো সব পাশাপাশি সময় এসেছে। আমন্ত্রণ গুলো কাছাকাছি সময়ে এসেছে। এই জন্য বিষয়টিকে বড় করে দেখা হচ্ছে। এটি আসলে একটি রুটিন কাজ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের অর্থনৈতিক বলয় বিস্তার এবং আওয়ামী লীগ এবং শরিকদের নেতৃবৃন্দের চীন সফর নিয়ে ভারত কোন মন্তব্য না করলেও বিষয়টি নিয়ে তারা দৃষ্টি রাখছে। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান তানভীর শাকিল জয় বলেন, চীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আমরা চীন সফরে যাচ্ছি। সফরটি প্রশিক্ষণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে হচ্ছে। যার মূলে থাকবে রাজনৈতিক নানা বিষয়। বিশেষ করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্র, দল কীভাবে চলে, তারা তৃণমূলে কীভাবে কাজ করে, সেসব ব্যাপারে জানা। এছাড়া চীনের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। এদিকে ৫০ সদস্যের তরুণ নেতাদের পর জুনের শেষ দিকে চীন সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাদের চীন সফর প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তিনি চীন সফর করেছেন, তা নিয়ে একটি বইও আছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ শুরু করে। তবে এবার টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কে নতুন মাত্র যুক্ত হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নিয়মিত চীন সফরে যাচ্ছে, যা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চীনমুখী মনে হতে পারে। তবে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে ভালো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বা একাধিক প্রতিনিধি দল চীন সফরে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে একাধিক সফরের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু। তাদের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খানকে দুইবার চীন সফরে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। এই তালিকায় এবার নতুন করে যুক্ত হলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমাদের দলের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্ক করতে চায়। তারা নিমন্ত্রণ জানিয়েছে, আমাদের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে, এতে দোষের কিছু নেই। এর মাধ্যমে চীনমুখী বলা যায় না, বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গিগত। আমরা ভারতের বিজেপি-কংগ্রেসের আমন্ত্রণে দেশটিতে গেলে তার মানে কি ভারতমুখী? প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও আমাদের গভীর সম্পর্ক। নতুন করে আরেকটা প্রতিবেশী নিয়ে আসা সম্ভব নয়। আমরা বাংলাদেশমুখী, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের ক্ষেত্রেও একই কথা। তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে যারাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় সবার ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব করা এবং সম্পর্ক করা বর্তমান সময়ের চাহিদা। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এই নীতিতে চলছি আমরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর আউটলুক বেরিয়েছে, সেখানেও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে চীনে গেছে ১৪ দলের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দলের ৯ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। আগামী ১৮ মে প্রতিনিধি দলের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। বাম প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ মোহসীন, ওয়ার্কার্স পার্টির নারীনেত্রী লুৎফুন্নেছা খান, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাম্যবাদী দলের অধ্যাপক তৃপ্তি বড়ুয়া, মোশায়হিদ প্রমুখ।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ) দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, বাম নেতারা চীন সফরে কুংমিংয়ে ইউনান অ্যাকাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্স অ্যাকাডেমি, কেপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস পরিদর্শন, রুট (ওয়েলিন কমিউনিটি) লেভেলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি, ইউনান প্রদেশের সরকারের বৈদেশিক শাখার প্রধানসহ অন্যদের সঙ্গে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। এদিকে দুই দিনের সফরে মার্কিন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় এসেছেন। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার পর কলম্বো থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। ডোনাল্ড লুকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথমবার ঢাকা সফরে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কোনো কর্মকর্তা।
আওয়ামী লীগ ও জোট নেতারা বলছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে তারা দেশটিতে যাচ্ছেন। জোটের বাম নেতারা প্রায় প্রতি বছরই চীন সফরে যান। চলতি বছর কয়েক ধাপে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা সফরে যাবেন, তাদের এই চীন সফর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটিকে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার মতো কোনও কারণ নেই। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ৫০ সদস্যের একটি দল চীনে সফরে যাচ্ছেন ২৫ মে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের নেতৃত্বে এই সফরে থাকবেন আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সদস্যরা। সফর শেষে আগামী ৫ জুন তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণপত্রে আওয়ামী লীগের ছাত্র, যুব ও নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া আওয়ামী লীগের তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে যুক্ত থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ওয়েব টিমের সদস্যরাও প্রতিনিধি দলে থাকবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চীন সফর নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। আর এই ব্যাপারে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি রাখছে। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে চীন সফরের হিড়িক কেন এই নিয়ে নানামূখী আলোচনা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলছেন, এটি হঠাৎ করেই নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সময়ে ভারত সফরও করেন। ভারতেও বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের আলাপ আলোচনার জন্য মতবিনিময় করা হয়। ভারতীয় প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে আসেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল নিয়মিতভাবে যায়। কিন্তু এবার চীনের সফরগুলো সব পাশাপাশি সময় এসেছে। আমন্ত্রণ গুলো কাছাকাছি সময়ে এসেছে। এই জন্য বিষয়টিকে বড় করে দেখা হচ্ছে। এটি আসলে একটি রুটিন কাজ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের অর্থনৈতিক বলয় বিস্তার এবং আওয়ামী লীগ এবং শরিকদের নেতৃবৃন্দের চীন সফর নিয়ে ভারত কোন মন্তব্য না করলেও বিষয়টি নিয়ে তারা দৃষ্টি রাখছে। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান তানভীর শাকিল জয় বলেন, চীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আমরা চীন সফরে যাচ্ছি। সফরটি প্রশিক্ষণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে হচ্ছে। যার মূলে থাকবে রাজনৈতিক নানা বিষয়। বিশেষ করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্র, দল কীভাবে চলে, তারা তৃণমূলে কীভাবে কাজ করে, সেসব ব্যাপারে জানা। এছাড়া চীনের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। এদিকে ৫০ সদস্যের তরুণ নেতাদের পর জুনের শেষ দিকে চীন সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাদের চীন সফর প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তিনি চীন সফর করেছেন, তা নিয়ে একটি বইও আছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ শুরু করে। তবে এবার টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কে নতুন মাত্র যুক্ত হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নিয়মিত চীন সফরে যাচ্ছে, যা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চীনমুখী মনে হতে পারে। তবে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে ভালো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বা একাধিক প্রতিনিধি দল চীন সফরে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে একাধিক সফরের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু। তাদের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খানকে দুইবার চীন সফরে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। এই তালিকায় এবার নতুন করে যুক্ত হলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমাদের দলের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্ক করতে চায়। তারা নিমন্ত্রণ জানিয়েছে, আমাদের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে, এতে দোষের কিছু নেই। এর মাধ্যমে চীনমুখী বলা যায় না, বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গিগত। আমরা ভারতের বিজেপি-কংগ্রেসের আমন্ত্রণে দেশটিতে গেলে তার মানে কি ভারতমুখী? প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও আমাদের গভীর সম্পর্ক। নতুন করে আরেকটা প্রতিবেশী নিয়ে আসা সম্ভব নয়। আমরা বাংলাদেশমুখী, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের ক্ষেত্রেও একই কথা। তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে যারাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় সবার ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব করা এবং সম্পর্ক করা বর্তমান সময়ের চাহিদা। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এই নীতিতে চলছি আমরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর আউটলুক বেরিয়েছে, সেখানেও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে চীনে গেছে ১৪ দলের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দলের ৯ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। আগামী ১৮ মে প্রতিনিধি দলের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। বাম প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ মোহসীন, ওয়ার্কার্স পার্টির নারীনেত্রী লুৎফুন্নেছা খান, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাম্যবাদী দলের অধ্যাপক তৃপ্তি বড়ুয়া, মোশায়হিদ প্রমুখ।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ) দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, বাম নেতারা চীন সফরে কুংমিংয়ে ইউনান অ্যাকাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্স অ্যাকাডেমি, কেপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস পরিদর্শন, রুট (ওয়েলিন কমিউনিটি) লেভেলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি, ইউনান প্রদেশের সরকারের বৈদেশিক শাখার প্রধানসহ অন্যদের সঙ্গে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। এদিকে দুই দিনের সফরে মার্কিন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় এসেছেন। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার পর কলম্বো থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। ডোনাল্ড লুকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথমবার ঢাকা সফরে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কোনো কর্মকর্তা।