বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। অর্থের ঝনঝনানি, টুর্নামেন্টের প্রচার, প্রসার সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেটারদের জন্য চরমতম কাক্সিক্ষত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে আইপিএল। এ জায়গায় ঢের পিছিয়ে অন্যান্য লিগগুলো। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, ইংল্যান্ডের দ্যা হান্ড্রেড, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০, বাংলাদেশের বিপিএল কিংবা আরব আমিরাতের আইএলটি-টোয়েন্টির মত টুর্নামেন্ট আইপিএলের ধারেকাছেও নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইপিএলের সময় অন্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দলগুলোও তাদের সিরিজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ রাখে। সিরিজ থাকলেও আইপিএলে খেলা ক্রিকেটারদের ছুটি দিয়ে পাঠিয়ে দেয় আইপিএলে। ক্রিকেট দুনিয়াকে যেন গ্রাস করে ফেলেছে আইপিএল। আইপিএলের ফলে ভারতের ক্রিকেটে উন্নতিও হয়েছে বেশ। নতুন নতুন তারকা ক্রিকেটাররা উঠে আসছেন, আলো ছড়াচ্ছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও। আইসিসির কাছ থেকে ভারতের রাজস্বের পরিমাণও অন্য যেকোনো দলের তুলনায় কয়েক গুণ। ফলে ক্রিকেটে ভারতের দাপট দিনদিন বেড়েই চলেছে। ভারতের এমন আধিপত্যের অবসান টানতে মাঠে নেমেছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক বোর্ড সদস্য নিল ম্যাক্সওয়েল। যুক্তরাষ্ট্রে টি-টোয়েন্টি লিগ প্রতিষ্ঠায়ও তার বড় অবদান রয়েছে। ম্যাক্সওয়েলের আরেক পরিচয় তিনি অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ব্যবস্থাপক। অজি গণমাধ্যম দ্যা এজ জানিয়েছে, নিল ম্যাক্সওয়েল এক বছর ধরে একটি পরিকল্পনা নিয়ে গোপনে কাজ করছেন। পরিকল্পনায় টেনিসের গ্র্যান্ড স্লামের মত করে সৌদি আরবের টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করার ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে। এখানে ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগ করবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্রীড়া বিনিয়োগকারী সংস্থা এসআরজে স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস। এসব ব্যাপারে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির সাথেও আলাপ চলছে সৌদি ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের। টেনিসে বছরে চারটি গ্র্যান্ড স্লাম হয়ে থাকে - অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন। এই পথ ধরে সৌদি আরবও বছরের আলাদা সময়ে ভিন্ন চারটি দেশে ক্রিকেট লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এখানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের দলও খেলবে টুর্নামেন্ট। ফাইনাল ম্যাচ হতে পারে সৌদি আরবে। এসআরজে স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস সৌদি আরবের সর্বজনীন বিনিয়োগ তহবিলের অংশ। ক্রীড়াঙ্গনের প্রচার প্রসারের জন্য তারা ১ লাখ কোটি ডলার (১ কোটি ২১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা) নিয়ে মাঠে নেমেছে। পরিকল্পিত টি-টোয়েন্টি লিগের মূল লক্ষ্য রাজস্বের নতুন উৎস সৃষ্টি করার পাশাপাশি ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। বিশেষ করে ‘বিগ থ্রি’ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বাইরে ক্রিকেটের অর্থনৈতিক স্থিতি নিশ্চিত করার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে সৌদি লিগ। এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে দুর্বল ক্রিকেট বোর্ডগুলো সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এই লিগ এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে আছে। কবে নাগাদ মাঠে গড়াবে তা এখনও জানা যায়নি। তবে মাঠে নামানোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সৌদি আরবকে। এই লিগ চালুর ক্ষেত্রে লাগবে আইসিসি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সম্মতি। এর পাশাপাশি ভারতীয় ক্রিকেটারদের খেলাতে চাইলে লাগবে বিসিসিআইয়ের অনুমতিও। এখানে উলেখ্য যে, ভারতের ক্রিকেটারদের বিদেশি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে দেয় না বিসিসিআই। কেবল নিজেদের দেশের আইপিএলেই খেলে থাকেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। এর পাশাপাশি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সৌদিকে অপেক্ষায় থাকতে হবে আইসিসির চেয়ারম্যান জয় শাহের সবুজ সংকেতের। সম্প্রতি ক্রীড়াঙ্গনে অঢেল অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যাকে বলা হচ্ছে ‘স্পোর্টস ওয়াশিং।’ ফুটবল, গলফ, রেসিং, বক্সিংসহ আরও অনেক খেলায় প্রচুর বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব। যে কারণে বিশ্বের তারকা প্লেয়াররা আগ্রহী হচ্ছেন সৌদি আরবে খেলতে। ফুটবল বিশ্বের বড় তিন তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা এবং নেইমার বর্তমানে খেলছে সৌদি লিগেই। আইপিএলের নতুন মৌসুমের মেগা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে। ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক সৌদি। শোনা যাচ্ছে, ২০৩৬ অলিম্পিক গেমস আয়োজনের ব্যাপারে বিড করবে তারা।