
* রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত
* ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান
* বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা ও সংস্কার প্রচেষ্টাকে স্বাগত
বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পৃথিবীর মধ্যে নজির সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএনপি’র হয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অংশ নেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস?্যু বলে জাতিসংঘ মনে করে। এ দেশের জনগণকে-ই তা নির্ধারণ করতে হবে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশে আগামীতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামীর নির্বাচন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদী।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। এ ছাড়া, সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়েও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্থাটির সাহায্য প্রয়োজন। এখনও জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কাজ করছেন। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় নতুন জাতিসংঘ ভবন পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে যে সংস্কার চলছে তা সবক্ষেত্রে দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে তিনি বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরে উজ্জ্বীবিত বলেও জানান। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহায়তা করতে সর্বাত্মকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে কঠিন পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই উদার উদ্যোগকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করা উচিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে জাতিসংঘ পাশে থাকবে বলেও জানান গুতেরেস।
এছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে গুতেরেস বলেন, তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন। গুতেরেস গতকাল শনিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এবং জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করতে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনে যান। বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের শেষে তিনি ভবন পরিদর্শন করেন। গুতেরেস এবং শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।
এদিকে গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গাজার ওপর ইসরায়েলের ১৭ মাসব্যাপী যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসলামবিদ্বেষ, আরববিরোধী মনোভাব এবং ইহুদিবিদ্বেষ বেড়ে চলেছে। গুতেরেস বলেন, ‘আমরা ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষ প্রত্যক্ষ করছি। জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক নীতি মানবাধিকার ও মর্যাদাকে লঙ্ঘন করছে, যা ব্যক্তিগত সহিংসতা ও উপাসনালয়ের ওপর হামলার রূপ নিচ্ছে। এটি সামগ্রিকভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, চরমপন্থী মতাদর্শ এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের একটি অংশ।’ নির্দিষ্ট কোনও দেশের নাম উল্লেখ না করে-ই সরকারগুলোর প্রতি ‘সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ানো ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার’ আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও হয়রানি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং আমাদের সবাইকে ধর্মীয় বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মোরাতিনোস জানান, মুসলমানরা বর্তমানে ‘প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য ও সামাজিক-অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার’ মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মুসলিমদের প্রতি অযৌক্তিকভাবে জাতিগত সন্দেহ, পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন এবং কিছু রাজনৈতিক নেতার ইসলামবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে আরও উসকে দেয়া হচ্ছে।’ বছরের পর বছর ধরে মানবাধিকার কর্মীরা ইসলাম ও আরব সম্প্রদায়ের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। বিশেষ করে, কিছু ব্যক্তি মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সম্পর্ক তৈরি করে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামবিদ্বেষী হামলা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে ইসলামবিদ্বেষ ও আরব-বিরোধী ঘটনার অভিযোগের সংখ্যা ৮,৬৫৮-এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটির দাবি, ১৯৯৬ সালে তথ্য সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।
* ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান
* বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা ও সংস্কার প্রচেষ্টাকে স্বাগত
বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পৃথিবীর মধ্যে নজির সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএনপি’র হয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অংশ নেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস?্যু বলে জাতিসংঘ মনে করে। এ দেশের জনগণকে-ই তা নির্ধারণ করতে হবে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশে আগামীতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামীর নির্বাচন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদী।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। এ ছাড়া, সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়েও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্থাটির সাহায্য প্রয়োজন। এখনও জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কাজ করছেন। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় নতুন জাতিসংঘ ভবন পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে যে সংস্কার চলছে তা সবক্ষেত্রে দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে তিনি বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরে উজ্জ্বীবিত বলেও জানান। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহায়তা করতে সর্বাত্মকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে কঠিন পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই উদার উদ্যোগকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করা উচিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে জাতিসংঘ পাশে থাকবে বলেও জানান গুতেরেস।
এছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে গুতেরেস বলেন, তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন। গুতেরেস গতকাল শনিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এবং জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করতে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনে যান। বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের শেষে তিনি ভবন পরিদর্শন করেন। গুতেরেস এবং শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।
এদিকে গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গাজার ওপর ইসরায়েলের ১৭ মাসব্যাপী যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসলামবিদ্বেষ, আরববিরোধী মনোভাব এবং ইহুদিবিদ্বেষ বেড়ে চলেছে। গুতেরেস বলেন, ‘আমরা ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষ প্রত্যক্ষ করছি। জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক নীতি মানবাধিকার ও মর্যাদাকে লঙ্ঘন করছে, যা ব্যক্তিগত সহিংসতা ও উপাসনালয়ের ওপর হামলার রূপ নিচ্ছে। এটি সামগ্রিকভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, চরমপন্থী মতাদর্শ এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের একটি অংশ।’ নির্দিষ্ট কোনও দেশের নাম উল্লেখ না করে-ই সরকারগুলোর প্রতি ‘সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ানো ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার’ আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও হয়রানি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং আমাদের সবাইকে ধর্মীয় বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মোরাতিনোস জানান, মুসলমানরা বর্তমানে ‘প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য ও সামাজিক-অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার’ মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মুসলিমদের প্রতি অযৌক্তিকভাবে জাতিগত সন্দেহ, পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন এবং কিছু রাজনৈতিক নেতার ইসলামবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে আরও উসকে দেয়া হচ্ছে।’ বছরের পর বছর ধরে মানবাধিকার কর্মীরা ইসলাম ও আরব সম্প্রদায়ের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। বিশেষ করে, কিছু ব্যক্তি মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সম্পর্ক তৈরি করে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামবিদ্বেষী হামলা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে ইসলামবিদ্বেষ ও আরব-বিরোধী ঘটনার অভিযোগের সংখ্যা ৮,৬৫৮-এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটির দাবি, ১৯৯৬ সালে তথ্য সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।