
সংস্কার কমিশন থেকে পাঠানো সংস্কার প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনায় ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। সংস্কার কমিশনের পাঠানো প্রস্তাবের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও একমত হয়েছে, আবার কোথাও একমত হতে পারেনি। রোজার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সুপারিশ বা প্রস্তাব সংস্কার কমিশনে পাঠাবে। এরপর সরকারের হাই কমান্ডের সঙ্গে সংলাপে বসবে। অনুষ্ঠেয় ওই সংলাপে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হবে। এক্ষেত্রে সরকার গড়িমসি বা কালক্ষেপণ করলে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেকরা।
চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা-ভাবনা ও কর্মসূচীর বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বাম জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে ঈদের পরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এসব দলের নেতারা।
সূত্রগুলো জানায়, সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নারীর প্রতি সহিংসতা, সীমান্ত হত্যা ও মব জাস্টিস ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম ও বাংলাদেশ জাসদ ঈদের পর দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে। প্রয়োজনে এসব দলের নেতারা একমঞ্চে শরীক হবেন।
গণতন্ত্রমঞ্চের একাধিক নেতা জানান, আগামী ১৬ মার্চ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে গড়িমসি করলে রাজপথে দৃশ্যমান কর্মসূচি দেয়া হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের একটি সূত্র জানায়, আন্দোলন বেগবান করতে প্রয়োজনে গণতন্ত্রমঞ্চ, সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম সকলেই এক মঞ্চে উঠতে পারে। তাদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দাবি হচ্ছে নির্বাচন। সরকার কর্তৃক নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা। এক্ষেত্রে কোনো গড়িমসি করা হলে ঈদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গণতন্ত্রমঞ্চসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এছাড়া গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ঈদের পরে আবার বৈঠক হবে। এছাড়া বাম জোটের উদ্যোগে বাম দল, প্রগতিশীল মনা রাজনৈতিক দল, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি পেশাজীবী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংগঠন ও দলিত সম্প্রদায়দের নিয়ে ‘যুক্ত ফ্রন্ট’ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুই ধারার বিপরিতে বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে চাই। এতে গণতন্ত্রমঞ্চের অন্যরা আলোচনা করতে চাইলে আলোচনা হবে। ঈদের পর প্রধান ইস্যু বা দাবি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবিতে সরকারের কাছে সকল দলই দাবি তুলে ধরবে। সরকার দাবি মানতে না চাইলে রাজনৈতিক ভাষায় গণতান্ত্রিকভাবে রাজপথে রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলবে।
প্রসঙ্গত: গণতন্ত্রমঞ্চ হচ্ছে ছয়টি রাজনৈতিক দলের একটি জোট। দলগুলো হলো- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গণ অধিকার পরিষদ প্রথমে এই জোটে থাকলেও মে ২০২৩ এ তারা জোট থেকে বের হয়ে আসে। ফলে জোটটিতে ৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। ওই সময় গণতন্ত্র মঞ্চ একটি রূপরেখা প্রকাশ করে। ওই রূপরেখায় বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। রূপরেখায় আরো বলা হয়, প্রয়োজনে এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহিহীনভাবে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ যথা: সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহির কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন। এসব দাবি নিয়ে ওই সময় গণতন্ত্রমঞ্চ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে রাজপথে লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তখন গণতন্ত্রমঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, রফিকুল ইসলাম বাবলু, এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাসদ (রব) শহিদ উদ্দিন স্বপনসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা পুলিশের বেধরক লাঠিপেটায় আহত হন। পরবর্তীতে হত বছর ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নাগরিক ঐক্য ও জাসদ রবের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জেলায় মব জাস্টিসের শিকার হন। জাসদ রবের রমগতি, বেগমগঞ্জ সিরাজগঞ্জ ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামলের উপর মব জাস্টিস হয়েছে। এসব ঘটনায় গণতন্ত্রমঞ্চের নেতারা ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর যেখানে জনগণ জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে দখলদারিত্ব এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একথা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে- জনগণ নতুন করে আওয়ামী লীগের মতো কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে দেবে না। ঈদের পর নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণাসহ অন্যান্য দাবি প্রসঙ্গে গণতন্ত্রমঞ্চের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা এখন ব্যস্ত সংস্কার কমিশন থেকে পাঠানো তাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা নিয়ে। এসব শেষ হলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হবে। সেখানে দ্বিমত হলে শুধু গণতন্ত্রমঞ্চ নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তখন নিশ্চই কোন একটা পদক্ষেপ নিবে। নাগরিক ঐক্য এর বাইরে নয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জনজীবনে দুর্ভোগসহ নানা ধরনের সংকট চলছে। সেসব বিষয় নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এখনও কোন সিন্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। তবে আমাদের গণতন্ত্রমঞ্চের একটি বৈঠক হবে শিগগিরই। সেখানে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, গণতন্ত্রমঞ্চ গঠনের সময় একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রমঞ্চ সেই রূপরেখা অনুযায়ী হাসিনা সরকারের পতনের জন্য রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের সংগ্রামের ফসল। এই সরকারের কাজ হচ্ছে-নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, তা করে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, নির্বাচন কবে হবে, সে সর্ম্পকে সরকারের সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা নেই। আজ জনজীবনে দুর্ভোগ, মব জাস্টিস, নারীর ওপর সহিংস আচরণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভীশ্বাস উঠেছে। ফলে এসব নিয়ে গণতন্ত্রমঞ্চের শিগগিরই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আলোচনা করে গণতন্ত্রমঞ্চ দৃশ্যমান কর্মসূচির পদক্ষেপ নেবে।
জাসদ (রব) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন স্বপন বলেন, বর্তমানে কমিশনের সংস্কার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। তাদের পাঠানো প্রস্তাবে কোথাও দ্বিমত, কোথাও একমত হয়েছি। এরপর সরকারকে আমরা আমাদের প্রস্তাবনা দেব। তার পরে সংলাপ হবে। সেখানে সরকারের ভিন্ন কোন কৌশল দেখতে পেলে বা আভাস পেলে অবশ্যই আমরা দৃশ্যমান বড় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবো।
চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা-ভাবনা ও কর্মসূচীর বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বাম জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে ঈদের পরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এসব দলের নেতারা।
সূত্রগুলো জানায়, সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নারীর প্রতি সহিংসতা, সীমান্ত হত্যা ও মব জাস্টিস ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম ও বাংলাদেশ জাসদ ঈদের পর দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে। প্রয়োজনে এসব দলের নেতারা একমঞ্চে শরীক হবেন।
গণতন্ত্রমঞ্চের একাধিক নেতা জানান, আগামী ১৬ মার্চ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে গড়িমসি করলে রাজপথে দৃশ্যমান কর্মসূচি দেয়া হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের একটি সূত্র জানায়, আন্দোলন বেগবান করতে প্রয়োজনে গণতন্ত্রমঞ্চ, সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম সকলেই এক মঞ্চে উঠতে পারে। তাদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দাবি হচ্ছে নির্বাচন। সরকার কর্তৃক নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা। এক্ষেত্রে কোনো গড়িমসি করা হলে ঈদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গণতন্ত্রমঞ্চসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এছাড়া গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ঈদের পরে আবার বৈঠক হবে। এছাড়া বাম জোটের উদ্যোগে বাম দল, প্রগতিশীল মনা রাজনৈতিক দল, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি পেশাজীবী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংগঠন ও দলিত সম্প্রদায়দের নিয়ে ‘যুক্ত ফ্রন্ট’ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুই ধারার বিপরিতে বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে চাই। এতে গণতন্ত্রমঞ্চের অন্যরা আলোচনা করতে চাইলে আলোচনা হবে। ঈদের পর প্রধান ইস্যু বা দাবি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবিতে সরকারের কাছে সকল দলই দাবি তুলে ধরবে। সরকার দাবি মানতে না চাইলে রাজনৈতিক ভাষায় গণতান্ত্রিকভাবে রাজপথে রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলবে।
প্রসঙ্গত: গণতন্ত্রমঞ্চ হচ্ছে ছয়টি রাজনৈতিক দলের একটি জোট। দলগুলো হলো- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গণ অধিকার পরিষদ প্রথমে এই জোটে থাকলেও মে ২০২৩ এ তারা জোট থেকে বের হয়ে আসে। ফলে জোটটিতে ৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। ওই সময় গণতন্ত্র মঞ্চ একটি রূপরেখা প্রকাশ করে। ওই রূপরেখায় বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। রূপরেখায় আরো বলা হয়, প্রয়োজনে এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহিহীনভাবে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ যথা: সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহির কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন। এসব দাবি নিয়ে ওই সময় গণতন্ত্রমঞ্চ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে রাজপথে লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তখন গণতন্ত্রমঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, রফিকুল ইসলাম বাবলু, এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাসদ (রব) শহিদ উদ্দিন স্বপনসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা পুলিশের বেধরক লাঠিপেটায় আহত হন। পরবর্তীতে হত বছর ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নাগরিক ঐক্য ও জাসদ রবের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জেলায় মব জাস্টিসের শিকার হন। জাসদ রবের রমগতি, বেগমগঞ্জ সিরাজগঞ্জ ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামলের উপর মব জাস্টিস হয়েছে। এসব ঘটনায় গণতন্ত্রমঞ্চের নেতারা ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর যেখানে জনগণ জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে দখলদারিত্ব এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একথা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে- জনগণ নতুন করে আওয়ামী লীগের মতো কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে দেবে না। ঈদের পর নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণাসহ অন্যান্য দাবি প্রসঙ্গে গণতন্ত্রমঞ্চের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা এখন ব্যস্ত সংস্কার কমিশন থেকে পাঠানো তাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা নিয়ে। এসব শেষ হলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হবে। সেখানে দ্বিমত হলে শুধু গণতন্ত্রমঞ্চ নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তখন নিশ্চই কোন একটা পদক্ষেপ নিবে। নাগরিক ঐক্য এর বাইরে নয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জনজীবনে দুর্ভোগসহ নানা ধরনের সংকট চলছে। সেসব বিষয় নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এখনও কোন সিন্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। তবে আমাদের গণতন্ত্রমঞ্চের একটি বৈঠক হবে শিগগিরই। সেখানে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, গণতন্ত্রমঞ্চ গঠনের সময় একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রমঞ্চ সেই রূপরেখা অনুযায়ী হাসিনা সরকারের পতনের জন্য রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের সংগ্রামের ফসল। এই সরকারের কাজ হচ্ছে-নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, তা করে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, নির্বাচন কবে হবে, সে সর্ম্পকে সরকারের সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা নেই। আজ জনজীবনে দুর্ভোগ, মব জাস্টিস, নারীর ওপর সহিংস আচরণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভীশ্বাস উঠেছে। ফলে এসব নিয়ে গণতন্ত্রমঞ্চের শিগগিরই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আলোচনা করে গণতন্ত্রমঞ্চ দৃশ্যমান কর্মসূচির পদক্ষেপ নেবে।
জাসদ (রব) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন স্বপন বলেন, বর্তমানে কমিশনের সংস্কার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। তাদের পাঠানো প্রস্তাবে কোথাও দ্বিমত, কোথাও একমত হয়েছি। এরপর সরকারকে আমরা আমাদের প্রস্তাবনা দেব। তার পরে সংলাপ হবে। সেখানে সরকারের ভিন্ন কোন কৌশল দেখতে পেলে বা আভাস পেলে অবশ্যই আমরা দৃশ্যমান বড় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবো।