
নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য দূরীকরণে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু সরকার পরিবর্তন যথেষ্ট নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবারের ভেতর থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অধিকার ও সমতার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও নারী সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নারীমুক্তির আকাক্সক্ষা: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিানে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এই সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছিল, কারণ মানুষ একত্রিত হয়েছিল। কিন্তু এর বাইরে কোনও বৃহত্তর সামাজিক ঐক্য তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি ও স্লোগানগুলো মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করেছিল। সেখানে বৈষম্যহীন সমাজ, ধর্মীয় স্বাধীনতা, লিঙ্গ সমতা এবং শ্রেণিগত ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছিল, যা কোনও কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশে হয়নি বরং সাধারণ জনগণের মধ্য থেকেই এসেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা স্বৈরাচারী সরকারের পতন দেখেছি, কিন্তু যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল, তা দূর করতে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিটি স্তরে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পরিবার থেকেই বৈষম্যের বীজ বপণ করা হয়, ছেলেদের অপরাধকে লঘু করে দেখা হয়, পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে তাদের বড় করা হয়, নারীদের ছোট করে দেখা হয়। ধর্মীয় শিক্ষার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোরআন-হাদিসের প্রকৃত শিক্ষার পরিবর্তে, ওয়াজ মাহফিলে নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। সেখানে সমাজের প্রকৃত সমস্যা— দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলার উচিত। সেখানে এই বক্তারা নারীদের কোনঠাসা করার লক্ষ্যে ওয়াজমাহফিল করে থাকেন। নারীর নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারীরা যখন ঘর থেকে বের হন, তখন প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে পড়েন। আট বছরের শিশু হোক বা কর্মজীবী নারী— নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবসময় থাকে। তারা প্রতিনিয়তন যে পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। তিনি আরও বলেন, শুধু নারী নয়, সমাজের দুর্বল শ্রেণিগুলো— লিঙ্গভিত্তিক সংখ্যালঘু, জাতিগত সংখ্যালঘু, নিম্নবিত্ত ও অন্যান্য নিপীড়িত গোষ্ঠীগুলোও প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্র যদি বৈষম্য ও নিপীড়নকেই তার পরিচয় বানিয়ে ফেলে, তাহলে কেউই নিরাপদ থাকতে পারবে না। ফলে এর থেকে বেরিয়ে আসতে রাষ্ট্রের কার্যকর ভূমিকা বা পদক্ষেপ জরুরি।