
উচ্চ আদালতে দশজন নারী বিচারপতি এবং দেশের অধস্তন আদালতে ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত রয়েছেন
উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে বিচারক, সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে আইন পেশায় এবং আইনে শিক্ষকতায় রয়েছে নারীদের দৃপ্ত পদচারণা। বিচারকার্যের মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। উচ্চ আদালতে দশজন নারী বিচারপতি এবং দেশের অধস্তন আদালতে ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত রয়েছেন।
উচ্চ আদালতের নারী বিচারপতিদের মধ্যে রয়েছেন- বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি ফাতেমা নজীব, বিচারপতি কাজী জিনাত হক, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি তামান্না রহমান ও বিচারপতি সাথিকা হোসেন। আইন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জিনাত আরা। জুলাই বিপ্লবের গণআকঙ্খাকে ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এসব কমিশনেও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন- সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা।
নারী বিচারকদের আলাদা অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। সম্প্রতি এই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল, ঢাকার সদস্য (সিনিয়র জেলা জজ) সৈয়দা হোসনে আরা বেগম এবং মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন সেশন জজ ফারজানা ইয়াসমিন। নব-গঠিত এই কমিটি আগামী এক বছর দায়িত্ব পালন করবে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের হলরুমে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের ৩৪তম বার্ষিক সম্মেলনে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাসোসিয়েশনের ৩৪তম সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইন কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান জিনাত আরা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, দেশের অধস্তন আদালতে ২ হাজার ১৭৯ বিচারকের মধ্যে ৬২৫ জন নারী। এটা খুবই বড় সংখ্যা। আমরা যখন প্রথম বিচার বিভাগে ঢুকেছিলাম তখন তিনজন নারী বিচারক ছিলাম। এখন তো অধস্তন আদালতে তিনভাগের এক ভাগ নারী বিচারক। তিনি বলেন, বিচার বিভাগে নারীদের অবদান অনেক।। নারীরা মায়ের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিচারকের দায়িত্বও পালন করছেন। এটি অসাধারণ চ্যালেঞ্জ। যেখানে নারীরা কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হচ্ছেন।
প্রতি বছর জুডিশিয়াল সার্ভিসের সব পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম দিকে নারীরা সাফল্য দেখাচ্ছেন। চলতি বছরও জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় একজন নারী সারাদেশে প্রথম হয়েছেন। তিনি হলেন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হালিমাতুস সাদিয়া।
দেশের উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদেও নারীরা দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন- সুলতানা আকতার রুবি, শামীমা সুলতানা দীপ্তি, মোহসিনা খাতুন, মাহবুবা আক্তার জুঁই, সালমা সুলতানা, নাহিদ হোসেন, সৈয়দা সাজিয়া শারমিন, জামিলা মমতাজ, আইনুন নাহার, শিউলী খানম, রাশিদা আলীম ঐশ্বী। উচ্চ আদালতে সিনিয়র এডভোকেট, আপিল ও হাইকোর্ট ডিভিশনে এবং অধস্তন আদালতে আইন পেশায় অসংখ্য নারী সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, বিচারক হিসেবে ও আইন পেশায় নারীদের পদচারণা ক্রমাগতই বাড়ছে। নারীর ক্ষমতায়নে এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি।
ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় নারীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন এটি অস্বীকার করারও কোনও উপায় নেই। এজন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি পুরুষদেরকে আরও সাপোর্টিভ হতে হবে। পেশাগত কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিটি নারীকে অধিক মাত্রায় পরিবারকে সময়ও দিতে হয়। উচ্চ আদালতসহ সব প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অফিসে ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের গাইড লাইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ব্যারিস্টার নিশাদ মাহমুদ।