
* গতবারের চেয়ে এবার চকবাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে
* চাহিদার শীর্ষে বড় বাপের পোলায় খায় ও সুতি কাবাব
* ইফতার বাজারে ইউটিউবারদের উপস্থিতি বেশি
চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার রোজার শুরু থেকেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন দুপুর থেকেই চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে ও আশপাশের দোকানিরা ইফতারের বিভিন্ন আইটেম সাজিয়ে বসেন। বিক্রি চলে ইফতারের সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তৃতীয় রমজানে পুরান ঢাকার ইফতার বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ইফতার কিনতে ভিড় করেছে হাজারো মানুষ। ভিড়ের কারণ তিল ধারণের জায়গা নেই সেখানে। এছাড়াও ইউটিউবারদের উপস্থিতিও অনেক বেশি ছিল।
বিক্রেতারা কেউ হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের ডাকছেন, কেউ খাবার প্যাকেট করছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছেন ইফতার কিনতে। দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই ইফতার বাজারে সময়ের সাথে সাথে ভিড় বাড়তে থাকে। আসরের নামাজের পর থেকে সেখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না। এবার ক্রেতারা বলছেন, ইফতারের দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় তাদের দাম বাড়াতে হয়েছে।
চকবাজারের ইফতার বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখানকার ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কিনতেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। মাংস, সুতি কাবাব, ডাবলি, ডিম, মগজসহ ১২টি আইটেম দিয়ে তৈরি এই বড় বাপের পোলার কেজি ৮০০ টাকা করে। এছাড়া পুরান ঢাকার অন্যতম বিখ্যাত সুতি কাবাব বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে। শাহি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি, ঘুগনি ১৬০ টাকা, চিকেন আচারি ১৩০ টাকা, ডিসেন্টের হালিম ৮০০ টাকা কেজি, বটি কাবাব ১৩০ টাকা, দই বড়া ১৫০-২০০ টাকা, শাহী জিলাপী ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, আস্ত কোয়েল পাখির রোস্ট ৮০ টাকা, কবুতর রোস্ট ৮০ টাকা, বাদামের পরোটা ৮০ টাকা, খাসির লেগ পিস ৮০০ টাকা, মোহাব্বাদের শরবত প্রতি লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এইসব খাবারের পাশাপাশি চকবাজারের আনন্দ বেকারি ও আলাউদ্দীন সুইটমিটের ইফতার আইটেমও সকলের পছন্দের।
বংশাল থেকে ইফতার কিনতে এসেছেন মো. মাসুদ বলেন, প্রতি বছর রোজায় চকবাজার থেকে ইফতার কিনি। এখানকার শাহি জিলাপি ও বিভিন্ন আইটেমের কাবাবের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। সব কিছুর দাম গতবারের মতোই রয়েছে বলে জানান মাসুদ। ছেলেকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থেকে ইফতার কিনতে এসেছেন ইকবাল হোসেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, চকবাজারে এসে ইফতার কিনলে আমেজ পাওয়া যায়। এখানে প্রচুর ভিড় থাকে, তারপরেও এতে মানুষের পদচারণায় ভালোই লাগে। আমার ছোট্ট ছেলেটাও ভিড় ঠেলে ইফতার কেনাকাটার এই মজাটা উপভোগ করে। উন্মুক্ত পরিবেশে কাবাব বিক্রি করছিলেন মো. মকবুল। তিনি জানান, গতবারের চেয়ে এবার সব কিছুর দামই বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা দাম বাড়াইনি। সব কিছুর দাম আগের মতোই রেখেছি। খাবার খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, সব বানানোর সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায় তাই খাবার ঢাকা হয় না। তাছাড়া কাবাব ঢেকে রাখলে কাস্টমার দেখবে না।
মোহাব্বতের শরবত বিক্রি করা মো. আবুল হোসেন বলেন, এখানে আমি গত ১০/১২ বছর ধরে শরবত বিক্রি করি। এর আগে আমার চাচা বিক্রি করতেন। চকবাজারের ইফতারের বাজার আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। পুরান ঢাকার চকবাজারসহ অন্যান্য ইফতারের বাজারগুলোতেও আমরা অভিযান পরিচালনা করব। গ্রাহকের জন্য মানসম্মত ও যথামূল্যে খাবার নিশ্চিত করাটাই আমাদের লক্ষ্য। চকবাজারের ইফতার বাজারের পাশাপাশিও পুরান ঢাকার বংশালে আল রাজ্জাক হোটেল, নাজিরা বাজার রোড, রায়সা বাজারে ক্যাফে ইউসুফ, স্টার হোটেল, ঘরোয়া হোটেলেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।