
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সামনে রেখেই আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নতুন দলের নেতৃত্বে কে আসবেন, তা নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া নাহিদ ইসলাম। গতকাল রোববার জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাগরিক কমিটির নেতারা বলছে, প্রাথমিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের দিনক্ষণ মাথায় রেখে প্রস্তুতি শেষ করছে সংগঠনটি।
নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া নাহিদ ইসলাম। নাগরিক কমিটির সূত্রও বলছে, চলতি সপ্তাহে তথ্য উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন নাহিদ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, রাজনৈতিক দলে নাহিদ ইসলামকে আমরা প্রত্যাশা করছি। তারও মৌন সম্মতি রয়েছে। তবে পদত্যাগ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্র বলছে, নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক হিসেবে রেখে সদস্য সচিবের খোঁজ চলছে। সেক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন রয়েছেন মূল আলোচনায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে মতামত জানাচ্ছেন নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। সদস্য সচিব পদে এছাড়াও নাম শোনা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিবিরের সাবেক সভাপতি ও নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের।
নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করলে তিনিই হবেন আহ্বায়ক। সদস্য সচিব পদে কয়েকজন ক্যান্ডিডেট রয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি এবং অন্যান্য অংশীজনদের পরামর্শ নিয়েই সদস্য সচিব ঠিক করা হবে।
একাধিক পদপ্রত্যাশী থাকায় নেতকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আদীব বলেন, কোনো বিভাজনের সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সদস্য সচিব নির্বাচিত হবে।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘোষণা দিয়ে গেল বছরের ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানও সংগঠিত হয় সংগঠনটির নেতৃত্বে।
এরআগে নাগরিক কমিটির নেতারা বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সব কার্যক্রম প্রায় শেষ। দেশের চলমান রাজনৈতিক ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্ন কাঠামো ও ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে নতুন রাজনৈতিক দল সামনে আনতে চান তারা। বিশেষ করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বর্জন ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা তাদের অন্যতম লক্ষ্য। নতুন দলের নেতৃত্ব নির্বাচন ও দলের অভ্যন্তরে বহুমুখী গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে চান তারা। কেউ চাইলে দীর্ঘ সময় দলের শীর্ষ পদ দখলে রাখতে পারবেন না। এছাড়া দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সময় উপযোগী রাজনৈতিক দল গড়তে প্রস্তুত তরুণ ছাত্র নেতারা। ফলে শেষ মুহূর্তেও নেয়া হচ্ছে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করলেও জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্ত হবে না। জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম হিসাবে সংগঠন দুটি কাজ করবে।
নেতারা আরো বলছেন, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেয়া হবে। এতে প্রথম পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এই আহ্বায়ক কমিটিতে যুক্ত হবেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রনেতা। মূলত নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে দেয়া এসব ছাত্র নেতার ওপরই আস্থা রাখতে চান তরুণরা।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানান, তরুণদের মধ্যে যারা সিনিয়র, আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছেন, যারা রাজনীতি সম্পর্কে ভালো বোঝেন তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে রাখা হবে। তিনি জানান, তরুণদের নেতৃত্বেই রাজনৈতিক দল হবে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অনেক বছর পর একটি বড় রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ সামনে এসেছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নেতৃত্বে আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, দল গঠনের কাজ চলমান। কবে এই দল ঘোষণা হবে এবং কারা দায়িত্বে থাকবেন-তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। সেজন্য ঘোষণা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ অবস্থার মধ্যেই রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে গত সেপ্টম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এরপর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণার পরপরই নতুন দল ঘিরে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কিভাবে দল গঠন হবে? কারা এই দলের নেতৃত্বে থাকবেন, তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা শুরু হয়।