
* হু হু করে ঢুকছে পানি, তলিয়ে যাচ্ছে ধূ ধূ বালুচর
* ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, দুশ্চিন্তায় কৃষক
* গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত
* ফসলি জমি নষ্ট করা ভারতের নয়া ষড়যন্ত্র
হঠাৎ করেই শুকনা তিস্তা নদীতে পানি ঢুকছে হু হু করে। বর্তমানে আকাশে মেঘ নেই, বজ্রপাত নেই। বিনা বৃষ্টিতেই শুষ্ক মৌসুমে আচমকা উজানের ঢল নেমেছে। বৃষ্টি বাদল ছাড়াই এমন ঢলে তিস্তা চরের জমিতে মৌসুমের বিভিন্ন ফসলি তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চরবাসী। ইতোমধ্যে ধূ-ধূ বালুচর পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন ফসলি জমি নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকের চোখে মুখে। ভারত আর হাসিনার নতুন ষড়যন্ত্র এটি। এমনটিই ধারণা নেটিজেনদের। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ফসলি জমিগুলো তলিয়ে ফসল নষ্ট করে দেয়াই ভারতের মূল উদ্দেশ্য।
গণহত্যা চালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনা চুপ করে বসে নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে মিলে একের পর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন দেশকে অস্থিতিশীল করার। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সেøাগানে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। পানিশূন্য নদীর বুকে তিস্তা বিধৌত উত্তরের পাঁচ জেলার লাখো মানুষের ওই কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার কথা। আলোচিত এই কর্মসূচি পালনের ঠিক দুদিন আগে আকস্মিকভাবে ধূ-ধূ বালুচরে দেখা গেছে উজানের ঢল। গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। আর এতেই তিস্তায় তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ফসলি জমি। অসময়ে এই ব্যারেজের গেইট গুলো খুলে দিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে শেখ হাসিনা আর ভারত এমনটিই ধারণা নেটিজেনদের।
জানা গেছে, উজান থেকে আসা পানিতে বন্ধ থাকা জলকপাটগুলো দিয়ে উপচে পড়ছে পানি। এর মধ্যে ১ নম্বর জলকপাটটি খুলেও রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যারাজের খানিকটা দূরে মূল নদীতে গতকাল রোববার সকালেও যেখানে ছিল ধূ-ধূ বালুচর, সেখানে বিকেল থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিকভাবে পানি প্রবাহের খবরে অনেকেই ভিড় করেছেন নদীপাড়ে। ব্যারাজের পূর্বদিকে শুকনো নদীতে যেখানে নদীরক্ষা আন্দোলনের মঞ্চে এখন ছুঁই ছুঁই করছে পানি।
তিস্তা তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, বিগত দিন থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ কার্যক্রমের ফলে অনেক ফসলে জমি নষ্ট হয়ে যায়। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যখন বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আন্দোলন করছেন, ঠিক তখনই তিস্তায় পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত সরকার। তারা মনে করেছে, তিস্তায় পানি ছাড়লে এই আন্দোলনটি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু দেশের মানুষ কখনোই হারতে শিখেনি। আগামী ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি জনতার সমাবেশ অবশ্যই সফল করবে তিস্তা তীরবর্তী বাসিন্দারা।
তাহমিনা আক্তার নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আবারো শুরু হলো ভারতের নতুন চালবাজি। বাংলাদেশিদের বিপদে ফেলতেই ভারত ইচ্ছে করে এমনটি করছে। অনেকের মতে আবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলতেই এমন কুকীর্তি করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। রুমেল খান নামের একজন এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ইউনূস সরকারকে চাপে ফেলতেই ভারত ইচ্ছে করে গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়েছে। এটা ভারত আর হাসিনার নতুন ষড়যন্ত্রে¿র অংশ।
স্থানীয় কৃষকরাও বলছেন, এটি ভারত আর শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র। তা না হলে হঠাৎ করে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের আগের মুহূর্তেই কেন এমন পানি ছেড়ে দেয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাবে ভারত? বাংলাদেশের জনগণকে পানির চাপে ডুবিয়ে মারতে চাওয়ার ঘটনা ভারত এটিই প্রথম ঘটাচ্ছে না। এর আগেও বহুবার এমন অমানবিকতা দেখিয়েছে মোদি সরকার। ২৪ এর অভ্যুত্থানে হাসিনা পালানোর পর পরই ত্রিপুরা রাজ্যের ডম্বুর গেট খুলে দিয়ে পুরো বাংলাদেশকেই পানিতে চুবাতে চেয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রিয় মোদি। সে সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই নিন্দা জানিয়েছিল ভারতের এমন কর্মকাণ্ডে। ভারত আর হাসিনা মিলে ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা রুখে দেবে এ দেশের ছাত্র-জনতা। হাসিনার এসব ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেতে আন্তর্জাতিক মহলের শুভ দৃষ্টি চান নেটিজেনরা। স্থানীয় কৃষক রাকিবুল ইসলাম বলেন, তিস্তার চরে তামাক, ভুট্টা আলু, পেঁয়াজ আর মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে তার ফসলের ক্ষতি হবে।
আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় তিস্তা তীরবর্তী ১১টি স্থানে লাখো মানুষ ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান করবে। এ সময়ের মধ্যে তিস্তার অবস্থা বিশ্ববাসীকে জানাতে রাতে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মশাল। এছাড়াও নানা কর্মসূচি রয়েছে। আর কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। কর্মসূচিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
ডিমলা উপজেলার ঝাড়শিঙ্গেশ্বর চরের বাসিন্দা আছির উদ্দিন জানান, হঠাৎ করে তিস্তায় ঢল নেমে চরের ফসলি জমিতে প্রবেশ করছে। এতে চরের জমিতে থাকা বোরো, গম, আলু, মরিচ, বাদাম তলিয়ে যেতে পারে। এতে কৃষকদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, নদীর পানি বেড়েছে। তবে পানি বাড়লেও এতে ফসলের ক্ষতি হবে না। তাছাড়া পানি নিয়ন্ত্রণ করতে জলকপাট বন্ধ রাখা রয়েছে।