
নগর বা নগরায়ণ নিয়ে নীতি করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। দুটি মন্ত্রণালয় নীতির খসড়াও করেছে। দুটি মন্ত্রণালয়ই দাবি করছে, এ নীতি করার দায়িত্ব তাদের। স্থানীয় সরকার বিভাগের করা নীতির কাজগুলো অ্যালোকেশন অব বিজনেস (মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর কার্যাবলী) অনুযায়ী তাদের এখতিয়ারাধীন বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, এ ধরনের নীতিমালা করা তাদের এখতিয়ার। এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। দুই মন্ত্রণালয়ের টানাটানিতে বহুল প্রতীক্ষিত এ নীতিটি অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে কার্যকর ও জনবান্ধব নগর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দুই দশক ধরে তারা নগর নীতিমালা করার চেষ্টা করছেন। নগর বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের নগর নীতি চূড়ান্ত করার দাবি অনেকদিনের। কিন্তু নগর নীতি করা হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে। তাই খসড়া হলেও সরকারগুলো এটি চূড়ান্ত করতে দিচ্ছিল না।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ নীতি চূড়ান্ত করার উত্তম সময় মনে করে এগোনো হচ্ছে। গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে খসড়া ‘জাতীয় নগর নীতি-২০২৫’ নিয়ে অংশীজনদের কর্মশালা করা হয়। খসড়া নগর নীতি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন?্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে শিগগির পাঠানো হবে। গণপূর্ত বিভাগ এতদিন এই নীতি না করলেও এখন তারা বাধ সেধেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নগরায়ণ নীতির খসড়া আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপনের জন?্য অপেক্ষমাণ আছে বলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
নগর নীতির খসড়া নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, খসড়া জাতীয় নগর নীতিমালায় নগরায়ণের বিষয়ে যে সব কার্যক্রমের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে ‘অ?্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং দ?্য ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রিস অ?্যান্ড ডিভিশনস’ অনুযায়ী তার অধিকাংশ কাজই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর সংস্থাগুলো সম্পাদন করে। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকা নগর উন্নয়ন অধিদফতর ইতোমধ্যে ‘জাতীয় নগরায়ণ নীতি (খসড়া)’ সম্পাদন করেছে, যা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপনের জন্য অপেক্ষাধীন। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগের খসড়া ‘জাতীয় নগর নীতিমালা, ২০২৫’-এ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্বৈততার বিষয়টি পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের আগেই অবহিত করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ তো নগর নীতি নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে কাজ করছে। আমাদের আইনে বলা আছে, নগর নিয়ে এ কাজগুলো আমাদের। সেই অনুযায়ী আমরা খসড়া করেছি। আমরা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেব। আমরা খসড়াটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন?্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবো। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি অংশীজন কর্মশালা থেকে আসা মতামত বিবেচনায় নেয়া হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে আগামী মে মাসের মধে?্য নীতিটি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চূড়ান্ত করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। গত ২৮ জানুয়ারি নগর নীতি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের আয়োজনে পরামর্শ সভায় ২৫-৩০টি মন্ত্রণালয় অংশ নেয়। সেখানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান একই বিষয়ে দুটি মন্ত্রণালয় থেকে দুটি আলাদা নীতি তৈরি করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এটি তিনি ‘সমন্বয়হীনতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
নগরায়ণ নীতির খসড়া করেছে নগর উন্নয়ন অধিদফতর। এ অধিদফতরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহমুদ আলী বলেন, আমাদের নীতিটি আরবান প্ল্যানিং রিলেটেড (নগর পরিকল্পনা সম্পর্কিত)। সেটা নিয়েই আমরা কাজ করছি। দুটি মন্ত্রণালয়ের কাজের পার্থক্য রয়েছে। সেটি মানতে হবে।
দুটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অ?্যালোকেশন অব বিজনেসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ মূলত নগর সেবা বা নগর প্রশাসন সংক্রান্ত কাজগুলো করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। অন?্যদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ নগর পরিকল্পনা বা আবাসন সম্পর্কিত। নীতিমালা করার ক্ষেত্রে যদি কাজের দ্বৈততা বা এক মন্ত্রণালয়ের কাজে আরেক মন্ত্রণালয় ঢুকে পড়ে, সেক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের এখতিয়ারের মধে?্য থেকে নীতিমালা করবে।