
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মো. পারবেজ মিয়া হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত ও তৃণমূল বিএনপির সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরীকে চার দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটরের কথার জবাবে আদালতের অনুমতি নিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি খেতাবপ্রাপ্ত আহত মুক্তিযোদ্ধা। খুবই দুঃখজনক, মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করা হচ্ছে। রিমান্ড দেওয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালতে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক মো. নাজমুল হাসান মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামিপক্ষে জুনাইদ আহমেদ পলক ও শমসের মবিন চৌধুরীর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড বাতিল চেয়ে পলকের পক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, পলককে ৬০ দিন রিমান্ড হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ দিন রিমান্ড পেন্ডিং আছে। রিমান্ডে আর নতুন কিছু পাওয়ার নেই। এর আগে যাত্রাবাড়ী থানার অন্য মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। বয়স্ক মানুষ। রিমান্ড বাতিলের আবেদন করছি। পরে রাষ্ট্র পক্ষের ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ওনারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ‘আয়নাঘর’ না, বিনা ভোটের নির্বাচন না, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণ না। আপনারাই মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করেছেন। আজ তাদের কারণে স্বাধীনতাবিরোধীরা বড় গলায় কথা বলার সুযোগ পায়। দেশটাকে আপনারা কোথায় নিয়েছেন, একটু ভেবে দেখেন। এ ধরনের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির জন্য বোঝা। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি খেতাবপ্রাপ্ত আহত মুক্তিযুদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমি কোনও অন্যায় করিনি। খুবই দুঃখজনক, আজ মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষিপ্তভাবে দালাল, সুবিধাবাদী বলে তাকে সম্বোধন করে। তিনি আরও বলেন, ১৫ বছর আমি বিএনপি করেছি। আমি ৫ আগস্টের সময় বাড়িতে ছিলাম। পরে হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। আমার রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর করা হলে একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি অন্যায় করা হবে। পরে ফারুকী বলেন, ওনার পা হারানোর পুরস্কার পেয়েছেন। ওনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি পেয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনা ওনাকে জাতীয় বেইমান বলেছেন। এরপর উনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৪ সালে বিএনপির সঙ্গে বেইমানি করে আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের সুযোগ দেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূঁইফোড় সংগঠন করে শেখ হাসিনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করেন। যদিও তাকে কোনও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি বলেন, নির্বাচন করা অন্যায় নয়। আমি কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। আর নির্বাচনে আমাকে কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি। পরে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।