
ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনের আগে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। তবে অনেকটা আগেভাগে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে বৃহৎ দুই দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পৃথক পৃথক ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ ও ইনসানিয়াত বিপ্লব। তবে মাঠে নামতে পারেনি টানা সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ।
বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা ৩১ দফা নিয়ে ছুটছেন দেশের শহর বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের একাধিক অঞ্চলে সভা সমাবেশ কর্মশালা করে ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ করছে দলটি। খোদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত রোববারও তিনি রাজধানীর কদমতলীতে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ৩১ দফার কর্মশালায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। কর্মশালায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মূলত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি।
৬৪ জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের ৬৪ জেলায় ৮ দিনের সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ১২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ দিনে সব জেলায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে কোথায়-কবে সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কে কোথায় বক্তব্য দেবেন তা জানানো হয়েছে।
১২ ফেব্রুয়ারি: লালমনিরহাটে বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিরাজগঞ্জে নজরুল ইসলাম খান, ফেনীতে সালাহউদ্দিন আহমদ, খুলনায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, রাজবাড়ীতে আসাদুজ্জামান রিপন, পটুয়াখালীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সুনামগঞ্জে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী এবং জামালপুরে থাকবেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল। ১৭ ফেব্রুয়ারি: যশোরে বক্তব্য দেবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, টাঙ্গাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, মাদারীপুরে সেলিমা রহমান, চাঁদপুরে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঠাকুরগাঁওয়ে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বগুড়ায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, মৌলভীবাজারে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী এবং ভোলায় থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
১৮ ফেব্রুয়ারি: কক্সবাজারে বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, পাবনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, পঞ্চগড়ে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা দক্ষিণে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক, ঝিনাইদহে উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মানিকগঞ্জে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, হবিগঞ্জে যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং নেত্রকোণার সমাবেশে থাকবেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
১৯ ফেব্রুয়ারি: নোয়াখালীতে বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিলেটে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কিশোরগঞ্জে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান, কুষ্টিয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, শরীয়তপুরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, পিরোজপুরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং রাজশাহীর সমাবেশে থাকবেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
২০ ফেব্রুয়ারি: ঢাকায় সমাবেশ করবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লক্ষ্মীপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশাল দক্ষিণে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ময়মনসিংহ দক্ষিণে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফরিদপুরে ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চুয়াডাঙ্গায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, নওগাঁয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু এবং কুড়িগ্রামের সমাবেশে থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম।
২২ ফেব্রুয়ারি: ঝালকাঠিতে সমাবেশ করবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণে ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান, ময়মনসিংহ উত্তরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়পুরহাটে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হারুন অর রশিদ, কুমিল্লা উত্তরে এ এইচ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বান্দরবানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসলাম চৌধুরী, রংপুরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া এবং নরসিংদীর সমাবেশে থাকবেন যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ।
২৪ ফেব্রুয়ারি: মুন্সীগঞ্জে সমাবেশ করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বরিশাল উত্তরে স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নড়াইলে ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, নাটোরে ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান, গাইবান্ধায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হারুন অর রশিদ, রাঙামাটিতে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল, মাগুরায় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং নীলফামারীর সৈয়দপুরের সমাবেশে থাকবেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
২৫ ফেব্রুয়ারি: নারায়ণগঞ্জের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গাজীপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রাম উত্তরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বাগেরহাটে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাতক্ষীরায় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, দিনাজপুরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মেহেরপুরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, নীলফামারীতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক, খাগড়াছড়িতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাবেশে থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম।
নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে জামায়াত: ত্রয়োদ্বশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এককথায় বলতে গেলে নির্বাচনী প্রচারে একধাপ এগিয়ে রয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে দেশের অন্তত পাঁচটি জেলায় সংসদ সদস্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। জেলাগুলো হলো ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ। পাঁচটি জেলায় ২৭ আসনে জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন গঠিত। এর মধ্যে আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালী এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসন। এই আসনে ঢাকা জেলা শাখার শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ইলিয়াছ মোল্লাকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা দুটি নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন। নগরকান্দা উপজেলা জামায়াতের আমির সোহরাব হোসেনকে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে লড়বেন। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৩ আসন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ফরিদপুর অঞ্চলের টিম সদস্য আবদুত তাওয়াবকে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী থাকবেন। ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত। ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির সরোয়ার হোসেন এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী। এছাড়া টাঙ্গাইলে ৮টি, নেত্রকোনার ৫টি এবং ময়মনসিংহের ১১টির মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। টাঙ্গাইলে আটটি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীরা হলেনÑটাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) অধ্যক্ষ মন্তাজ আলী, টাঙ্গাইল-২ (ভূঁঞাপুর-গোপালপুর) হুমায়ূন কবীর, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) হুসনে মোবরক বাবুল, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) প্রফেসর খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-৫ (টাঙ্গাইল সদর) আহসান হাবীব মাসুদ, টাঙ্গাইল-৬ (বাসাইল-সখীপুর) শফিকুল ইসলাম খান, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ তালুকদার, টাঙ্গাইল-৮ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) ডাক্তার আব্দুল হামিদ। নেত্রকোনার ৫ আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেনÑ নেত্রকোনা-১, দুর্গাপুর-কলামাকান্দা আসনে জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও কলমাকান্দা উপজেলা আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেম, নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্টা আসনে সাবেক জেলা আমির ও ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাওলানা এনামূল হক, নেত্রকোনা-৩, আটপাড়া কেন্দুয়া আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও আটপাড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেলাওয়ার হোসেন সাইফুল, নেত্রকোনা-৪, মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী আসনে ময়মনসিংহ মহানগরী জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র-শিবিরের আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, নেত্রকোনা-৫, পূর্বধলা আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও পূর্বধলা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা। এছাড়া ময়মনসিংহের ১১টির মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীর নামের তালিকা করা হয়েছে। ময়মনসিংহে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা হলেনÑময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে মাহফুজুর রহমান, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে মাহবুব মণ্ডল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মাওলানা বদরুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে মতিউর রহমান আকন্দ, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আসাদুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে মঞ্জুরুল হক, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে ইসমাইল হোসেন ও ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে সাইফ উল্লাহ পাঠান।
লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে লাগাতার জনসমাবেশ: জামায়াত ৫ আগস্টের পর থেকে সারাদেশে বড় বড় সমাবেশ শুরু করে। সেই সমাবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। অন্য নেতারাও ছুটছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই জামায়াতের নেতারা তৃণমূলে ছুটছেন।
কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেই আওয়ামী লীগ: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হা?সিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ। প্রায় সাড়ে ১৫ বছর টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটির কোনো নেতাকর্মী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দলটির তৃণমূল তেকে হাইকমাণ্ডের নেতাকর্মীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। সর্বশেষ চলতি মাসে কর্মসূচি দিলে ও প্রকাশ্যে মাঠে নামতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা। উল্টো অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দেশজুড়ে প্রায় কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন মাস পর প্রথমবারের মতো কোনো কর্মসূচির ডাক দিয়েও মাঠে নামতে পারেনি আওয়ামী লীগ। শহীদ নূর হোসেন দিবসে দলটির বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গত রোববার দিনভর ছিল টান টান উত্তেজনা। ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে এদিন দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে জিরো পয়েন্টে সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে দলটির নেতাকর্মীদের তেমন কোনো সমাগম ছিল না। এ ছাড়া সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এদিন মাঠে থাকবেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিলেও, তাদেরও কাউকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি।
জানা গেছে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগসহ ১০টি দাবিতে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ ধরনের কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে-১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি আছে প্রচারপত্র বিলি; ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রয়েছে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের ডাক। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এসব কর্মসূচি দিলেও প্রকাশে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এর আগে নূর হোসেন দিবসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার পর ওইদিন রাতেই তা প্রতিহত করতে জিরো পয়েন্ট এলাকায় গণজমায়েতের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে জিরো পয়েন্টে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। দলটির এ কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের’ ব্যানারে একই জায়গায় গণজমায়েতের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ দিন যারা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এসেছিলেন বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল বের করেন। বিভিন্ন গলি থেকে হঠাৎই বের হয়ে তারা মূল সড়কে উঠে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিতেই ধাওয়ার মুখে পড়েন। তাদের লাঠিসোঁটা নিয়ে মারধর করা হয়। এদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকজনকে পেটাতে দেখা গেছে। পেটানোর সময় তাদের মধ্যে কয়েকজনের পোশাক খুলে ও ছিঁড়ে ফেলা হয়। বেলা ১১টার কিছু আগে থেকে এসব ঘটনা ঘটতে শুরু করে। পিটুনির সময় পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তাদের বাধা দিতে দেখা যায়নি। পরে পুলিশভ্যানে করে মারধরের শিকারদের নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে। তিনি টেলিফোনে বলেন, আমরা মূলত সময়টা নিয়েছিলাম নেতাকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টা বিবেচনা করে, অনেক ক্ষতি হয়েছে, আর যেন না হয়। তিনি বলেন, আমরা আর কতদিন হাত-পা গুটিয়ে থাকব? একের পর এক হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন, নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে যাচ্ছে। আমাদের তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে।
৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা গণঅধিকার পরিষদের: আগামী ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)। এতে বলা হয়, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নামে নিবন্ধিত দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে আগ্রহীদের আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তিদের আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে যে সংসদীয় আসনে প্রার্থিতা করতে আগ্রহী সেটি উল্লেখপূর্বক দলীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় দফতর বরাবর জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় গণঅধিকার পরিষদের দফতর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বলেন, গণঅধিকার পরিষদ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাজপথ থেকে গড়ে উঠা একটি সংগঠন। স্বৈরাচারী হাসিনার রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে গণমানুষের নায্য অধিকার আদায়ে দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছে। আগামীতে গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে। সেই লক্ষ্যে গণঅধিকার পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে।
৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে ইনসানিয়াত বিপ্লব: আগামী ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওার ঘোষণা দিয়েছে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ নামের একটি রাজনৈতিক দল। ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারের বিশ্বরোড চৌরাস্তা এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন দলটির চেয়ারম্যান ইমাম হায়াত। এ সময় তিনি বলেন, দেশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। দেশে ধর্মের নামে অরাজকতা, ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাব পড়ছে। দেশের কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি বলেন, বিগত আমলের মতো যদি প্রহসনের নির্বাচন না হয়, তাহলে আমরা সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব শেখ রায়হান রাহবার ও কেন্দ্রীয় নেতা আরেফ সারতাজ, আবু আবরার চিন্তি, আহমদ শাহ মোর্শেদ, এমদাদ সায়ীফ, ইলিয়াস শাহ্, শেখ নয়ীমুদ্দীন, শেখ হানিফ, রেজাউল কাওসার, মাঈনউদ্দিন টিটু, মিজানুর রহমান আখন্দ, মাহমুদ হাসান নয়নসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।