
* শাহবাগে আন্দোলন থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আটক
* সড়ক ছেড়েছেন আন্দোলনকারীরা, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক
রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করা সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা সড়ক অবরোধ করলে এ ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষককে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। সড়ক থেকে আন্দোলনকারীরা সরে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা গেছে, শাহবাগ মোড়ে গতকাল সোমবার দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটে পরপর বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘পুলিশের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি সেøাগান দিতে দেখা গেছে।
পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ, জলকামান, ধড়-পাকড় ও বলপ্রয়োগের মুখে শাহবাগ মোড়ের অবরোধ ছেড়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত (তৃতীয় ধাপ) সহকারী শিক্ষকরা। এতে করে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়ের পর শুরু হয়েছে শাহবাগের চারটি সড়কের যান চলাচল। তবে সবগুলো সড়কেই গাড়ির দীর্ঘ সারি ও তীব্র যানজট দেখা গেছে।
আন্দোলন করা সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বলেন, আমাদের নিয়োগ বাতিল করে যে রায় দেয়া হয়েছে সেটি বৈষম্যমূলক। এ সরকারই আমাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। আবার আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এটি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা। আমরা চাই দ্রুত যেন এ রায় বাতিল করে আমাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলন থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে দাবি আদায়ে সড়কে অবস্থানকালে তাদের আটক করা হয়। তবে আটকের সংখ্যা জানা যায়নি।
এনটিআরসিএর নিয়োগপ্রত্যাশীরা বলছেন, শিক্ষক নিয়োগ চক্রে (১ম-৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে) আবেদনকৃতদের বৈষম্যের শিকার ও সিস্টেম দুর্নীতিজনিত কারণে তারা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ১ থেকে ১২তম ব্যাচে উত্তীর্ণ যোগ্য নিবন্ধিত শিক্ষকদের ডেটাবেস পৃথক করে এন্ট্রি লেভেল বয়স বিবেচনা করে এবং বিগত ১৭ অক্টোবর ও ২৩ ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে এপিএস সাব্বির আহমেদের প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে বাস্তবায়ন চান তারা। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক সব জটিলতা নিরসন করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকেই পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারী সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সড়ক থেকে তুলে দিতে বলপ্রয়োগ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সড়কে বসে থাকা নারী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা গেছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, যতবার পুলিশ সড়ক থেকে সরিয়ে দেবে ততবারই তারা ফিরে আসবেন। এমনকি আজ রাতেও শাহবাগেই অবস্থান করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনে অংশ নেয়া আন্দোলনকারীদের অনেককেই পুলিশ হেফাজতে নিতে দেখা গেছে। তাদের শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে লাঠিচার্জের ফলে আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, অনেককেই পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তবে সংখ্যাটি নিশ্চিত নই। তাদেরকে (আন্দোলনকারীদের) নিয়ে থানায় রেখেছি। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। কেউ নির্দোষ হলে ছেড়ে দেয়া হবে। আর কাউকে যদি গ্রেফতার দেখাতে হয় সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করেন হাইকোর্ট। মেধার ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। তারও আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।