পোরশায় ধাতব দ্রব্যের সন্ধানে মাটি খনন

আপলোড সময় : ১০-০২-২০২৫ ১০:২০:৩৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-০২-২০২৫ ১০:২০:৩৪ অপরাহ্ন
নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের মাটি যেন সোনার চেয়েও খাঁটি হয়ে গেছে। নিতপুর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পূনর্ভবা নদীর পূর্ব পাশে নদীর তীর ঘেষা ওই গ্রামের আশেপাশে যে কোন জায়গা খনন করলেই মিলছে নানা প্রকার মূল্যবান ধাতব দ্রব্য, ছোট পাথর ও তৈজসপত্র। এভাবে বিগত ১৪-১৫ বছর ধরে অর্ধশতাধীক লোক দিনের পর দিন দল বেঁধে প্রতিনিয়িত মাটি খনন করছেন। বহুল আলোচিত মাটি খনন করে বিভিন্ন মুল্যবান ধাতব দ্রব্য পাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং পাহাড়পুর জাদুঘর কতৃপক্ষ জানলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অনেকে বলছেন।
এ ঘটনায় সরকারের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুল্যবান ওইসব ধাতব সম্পদ উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরজমিনে জানাগেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে স্থনীয় এক ব্যক্তি টেকঠা গ্রামের এক জমিতে মাটি কাটতে গিয়ে কিছু মূল্যবান ধাতব দ্রব্য পান। এরকম খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা মাটি খননের কাজ শুরু করেন। সে থেকেই প্রতিদিন স্থানীয়রা যে যার মত কোদাল, খুনতি, শাবল দিয়ে মাটি খনন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। প্রায় পাঁচ থেকে আট ফিট মাটি খনন করলেই মিলছে মূল্যবান জিনিস। পাওয়া যাচ্ছে ছোট বড় অনেক রকমের পাথরসহ মূল্যবান সম্পদ। পয়সা, তাবিজ, তস্বি দানা, পাথর, ছোট-বল পাথরের বল ইত্যাদি। এগুলোর বিভিন্ন রং এর। লাল, কাল, সাদা, কমলা, সবুজ এবং কতগুলো গোলাপী রং এর। অনেক সময় অনেকে স্বর্নও পেয়েছেন বলে জানাগেছে। আর স্বর্ণ বিক্রি না করে অনেকে নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন। আর ছোট-বড় পাথর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ক্রেতারা খবর পেয়ে এসে তাৎক্ষনিক দ্রব্যগুলি কিনে নিয়ে যান। পাথর গুলি রকম ও ওজন ভেদে প্রায় ১২-১৫হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান স্থানীয়রা। তারা বলছেন, প্রাপ্ত দ্রব্য গুলির গুণগত মান অনুযায়ী ১০০টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, বিগত সময়ে এ এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত। নদির তীর হিসাবে এখানে হাট-বাজার বসত। এখানকার হাট-বাজার সহ স্থানীয় হিন্দুরা বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়ায় হয়ত তাদের মূল্যবান অনেক জিনিসগুলো নিয়ে যেতে পারেনি। ফলে তাদের ঘর-বাড়ী ধ্বংস হয়ে জিনিসগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বলছেন তারা।
এলাকাবাসি অনেকে জানান, যে এলাকায় জিনিস গুলো পাওয়া যাচ্ছে সেই জায়গায় হাট বাজার বসতো। যার প্রমাণ স্বরূপ কালিদহ বলে একটি কূপ আজও বিদ্যমান আছে নদীতে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এখানে বসবাসকারী অনেক জমিদার এবং সম্পদশালী হিন্দু পরিবার সবাই ভারতে চলে যান। বলা যায় এ এলাকা ছিল সম্পদশালী হিন্দুদের আশ্রয়স্থল। কাজেই তাদের ব্যবহৃত বহু মূল্যবান জিনিসপত্র এখানে থেকে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। মাটি খনন কাজে নিয়োজিত পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন থেকে মাটি খুড়ছেন। সেখানে একটি জালিবল পেয়েছেন।
এছাড়াও অনেকে বোতাম, মার্বেল, জালি পোটল, ফুটবল, গোলাপি বল পেয়েছেন। এগুলো পাঁচশত টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকায় তারা বিক্রি করেছেন বলে জানান।
এছাড়াও সংবাদ পেয়ে অন্য এলাকা থেকে এসে ক্রেতারা দ্রব্যগুলি কিনে নিয়ে যায় বলে জানান। তবে পাথর সহ অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি করলেও মাটি খনন করে পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার কেউ বিক্রি করেন না। নিতপুর গ্রামের আমির উদ্দিন জানান, বিগত ১৪-১৫ বছর থেকে অনেক মানুষ মাটি খনন করে মাটির নিচে থাকা মূল্যবান ধাতবদ্রব্য সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তুলে নিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এগুলো উত্তোলন বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
মূল্যবান সম্পদগুলো উত্তোলন বন্ধ করা দরকার। তবে সরকারী উদ্যোগে খনন কাজ চালিয়ে মূল্যবান দ্রব্যগুলি উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলেও তিনি মনে করছেন। এবিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে পাহাড়পুর যাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম জানান, প্রত্নতাত্বিক দিক থেকে এ উপজেলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এলাকাটি তারা অনেকবার পরিদর্শন করেছেন। এখানে খনন কাজ বন্ধ করার জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কতৃপক্ষকে পত্র দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না গ্রহণ করলে তাদের করার কিছু নেই বলে তিনি জানান। তবে তারা আবারও বিষয়টি ব্যাপারে প্রত্নত্বত্ত অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net