
বাঙ্গালীর প্রাণের বইমেলার দিন যতই গড়াচ্ছে, ততই ভাটা পড়েছে স্বাস্থ্যবিধিতে। তবে বেড়েছে বেচা-বিক্রি। এতে খুশি প্রকাশকরা। গতকাল রোববার বইমেলা নবম দিনে নতুন বই এসেছে ৯৭টি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিনের তুলনায় লোকসমাগম কিছুটা কম। বিকালের দিকে তা বাড়তে থাকে। লোকসমাগম বেশি হওয়ায় বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানান প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা।
প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ইমাম হোসেন বলেন, মেলার শুরুর দিন থেকেই ক্রমান্বয়ে বিক্রি ও পাঠক-সমাগম বাড়ছে। বিক্রি ভালো। আমরা আশাবাদী। মেলার যত সময় গড়াবে, বিক্রি তত বাড়বে। সব পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্কুল-কলেজ খুলে দিলে মেলায় পাঠকদের আরো উপচে পড়া ভিড় দেখতে পাব। সঙ্গে বিক্রিও বাড়বে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থী ও বিক্রয়কর্মীদের। মেলায় প্রবেশের সময় সবার মুখে মাস্ক থাকলেও ভেতরে প্রবেশের পর অনেকেই মাস্ক খুলে নিচ্ছেন হাতে, পকেটে, থুতনিতে। বইমেলা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নিতে হবে। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, টিকা সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।
বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৯৭টি। তার মধ্যে গল্প-৮টি, উপন্যাস-২৫টি, প্রবন্ধ-৫টি, কবিতা-৩১টি এবং অন্যান্য-২৮টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান: গতকাল রোববার বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাকিদ হায়দারের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চঞ্চল আশরাফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসিফ হায়দার এবং শাওন্তী হায়দার। এতে সভাপতিত্ব করেন আতাহার খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, কবি হিসেবে মাকিদ হায়দারের আত্মপ্রকাশ গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। তার নিকট-অতীত ও সমকালীন কবিদের রচনায় রোমান্টিক আবেগ প্রকাশের যে ধারা গড়ে উঠেছিল, তার অনুগামী না-হয়ে নিজস্ব পৃথক একটি ধারা গড়ে তোলার চেষ্টায় তিনি ব্যাপৃত থেকেছেন। তিনি এমন এক বর্ণনারীতির চর্চা করেছেন যা ষাটের দশকের কবিতায় খুব কম-ই দেখা যায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরাভরণ কিন্তু অর্থবোধক সারল্যের অনুশীলন করেছেন তিনি। তার অধিকাংশ কবিতাই আখ্যানের প্রাথমিক উপাদান বা গল্পের প্রধান শর্তবৈশিষ্ট্য নিয়ে রচিত।
আলোচকদ্বয় বলেন, কবি মাকিদ হায়দারের কবিতায় গদ্যের যে ভূমিকা ছিল, তা আধুনিক কাব্যধারার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জটিল শব্দ ও বাক্য ব্যবহার না করে তিনি তার কবিতায় সহজবোধ্য ভাষা ও বাক্যরীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। ফলে তার কবিতা সহজেই পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে। ব্যক্তি হিসেবে কবি মাকিদ হায়দার ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও মানবিক প্রকৃতির। তার কাব্যরূপ, কাব্যভাষা অধিকতর গবেষণার দাবি রাখে।
সভাপতির বক্তব্যে আতাহার খান বলেন, পারিবারিকভাবে সাহিত্য-সংস্কৃতির আবহে বেড়ে ওঠা মাকিদ হায়দার তার সমকালীন কবি সাহিত্যিকদের থেকে ভিন্নমাত্রায় নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। আরোপিত রূপ বা আড়ালের আশ্রয় না নিয়ে স্পষ্ট এবং প্রচলিত ভাষাতেই তিনি কাব্য রচনা করেছেন। তার কবিতা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যজগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেনÑআবু সাঈদ খান এবং পাভেল পার্থ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সাহেদ মন্তাজ, শাহ কামাল সবুজ এবং আফরোজা পারভীন। আজ ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এবং ঢালী মোহাম্মদ দেলোয়ারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস (বাফা)’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সুমন মজুমদার, শারমিন সাথী ইসলাম, সুনীল সূত্রধর, ড. পরিতোষ মণ্ডল, ফারহানা আক্তার শার্লি এবং শাহনাজ নাসরীন ইলা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) এবং ফিরোজ খান (সেতার)।
আজকের অনুষ্ঠান: আজ সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১০ম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল তিনটা থেকে চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। আজ বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : মনিরুজ্জামান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সালমা নাসরীন এবং মামুন অর রশীদ। এতে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।