![](https://dainikjanata.net/public/postimages/67a1f124c9fc1.jpg)
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
পুঁজি রক্ষার দাবিতে বিনিয়োগকারীরা আন্দোলনে নামার পর দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে গতকাল সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখেয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে বেড়েছে সবগুলো মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। এদিকে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন দেখা দিলে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে মতিঝিলে সমাবেশের ডাক দেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা এই সমাবেশের ডাক দেয়ার পর গত রোববার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। আর গতকাল সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শেষ হওয়ার পর ডিএসইর পুরোনো ভবনের সামনের রাস্তায় সমাবেশ শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। সমাবেশ থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ তাৎক্ষণিক ১১টি দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের সমাবেশের দিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৩টির। আর ৬৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৩১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৭৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ব্যাংকের ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বিচ হ্যাচারি, সেন্ট্রাল ফার্মা, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অগ্নি সিস্টেম, ইফাদ অটোস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং হাক্কানী পাল্প। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৯টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এদিকে পুঁজি রক্ষার দাবি নিয়ে মতিঝিলের রাস্তায় সমাবেশ করেন শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) ব্যানারে সমাবেশ করছেন তারা। বিনিয়োগকারীদের ১১ দাবিগুলো হলো-
১. বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ও আইসিবি’র চেয়ারম্যানকে দ্রুত অপসারণ করে নতুন যোগ্য চেয়ারম্যান নিয়োগ করে পুঁজিবাজার বাঁচাতে হবে।
২. বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে গেইন-ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে (তদন্ত ও অসময়ে জেড গ্রুপে প্রেরণ ইত্যাদি)।
৪. পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর বিধান সংস্কার করা প্রয়োজন। কারণ কোম্পানির জেড ক্যাটাগরিতে গেলে সর্বোপরি বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।
৫. কোম্পানিগুলোকে আয়ের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে।
৬. ব্যাংক, ফাইন্যান্স, ইন্স্যুরেন্স, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবিসহ পুঁজিবাজারে তাদের যতটুকু বিনিয়োগ করার কথা তা শতভাগ কার্যকর করতে হবে।
৭. টাস্ক ফোর্সের সংস্কারগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দ্রুত জানাতে হবে। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করে বিনিয়োগকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে।
৮. কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
৯. বিএসইসি’র দায়িত্ব অন্তত ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার বিনিয়োগ নিয়ে আসা।
১০. পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হলে তাহার বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে।
১১. ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে।