জুলাই-আগস্ট বিপ্লব
সুচিকিৎসার দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে, অর্থাভাবে মানবেতর জীবন
অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও নিশ্চিত হয়নি আহতদের সুচিকিৎসা। স্বৈরাচার হটাতে গুলির সামনে বুক পেতে দেয়া ছাত্রদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। অর্থাভাবে সেবা না পেয়ে কাটছে মানবেতর জীবন।
অন্যদিকে শহীদ পরিবারগুলোর অসহায়ত্ব কম নয়। পুনর্বাসনসহ সহায়তার আশায় ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ধাপে ধাপে যাচাই প্রক্রিয়া থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
জুলাই-আগস্টে উত্তাল দিনগুলোতে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে যারা দাবি আদায়ের লড়াই করেছেন, সেই সাহসী বিপ্লবীদের সামনে আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি। গণ-অভ্যুত্থানের ৬ মাস হতে চললেও এখনও সুচিকিৎসার দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে আন্দোলনে আহতদের।
সারা দেশ যখন স্বৈরাচারী বিদায়ের খবরে উচ্ছ্বসিত, তখন মর্গে মর্গে সন্তানের লাশ খুঁজে বেড়াতে হয়েছে ১৬ বছরের অন্তরের মা হামিদা বানুতাকে। ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায় এই মা তিন দিন পর ঢাকা মেডিকেলের মর্গে সন্তানের নিথর দেহ খুঁজে পান।
কান্নজড়িত কণ্ঠে অন্তরের মা বলেন, আমার ছেলের বয়স যখন ১৫ মাস, তখন তার বাবা আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। আমার ছেলেটাকে দূরে রেখে কাজ করে পড়ালেখা করিয়েছি। গত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সে ঘর থেকে বের হয়। রাতে আর ফেরেনি। পরে ঢাকা মেডিকেল থেকে গুলি খাওয়া ছবি পাঠিয়েছে। আমার ছেলের বুকে ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে।
সব হারিয়ে নিঃস্ব অন্তরের পরিবার এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে একটু সহায়তার আশায়। অন্তরের মা বলেন, আমি কোনো অনুদানই পাইনি। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা মামুন অভ্যুত্থানে নিজের চোখ হারিয়েও পাননি কোনো সহায়তা। মাথায় বুলেট নিয়ে তিন সন্তানের ভবিষ্যতের শঙ্কা আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে রেখেছে তাকে। মামুন বলেন, মাথায় বুলেট লেগেছে। এটার চিকিৎসা হচ্ছে ৬ মাস পর। তো এখন আমার পরিবারটা কে চালাবে! শুধু আশাই দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে আমি একটা টাকাও পাইনি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ রফিকুল ইসলাম উপার্জনক্ষম বড় সন্তানকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরতে পথে নেমেছেন অটোরিকশা নিয়ে। নানা নথি সংগ্রহ আর জমা দিতে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে তাকেও।
এদিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন বলছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ভুয়া প্রার্থীসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিঘ্ন হচ্ছে সহায়তা কার্যক্রম। সেইসঙ্গে এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থানে আহতদের গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন,
আন্দোলনে আহত নয়, এমন ১০ থেকে ১৫ জনকে খুঁজে বের করতে পেয়েছি। কোনো না কোনোভাবে তারা তাদের নামটা খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। যতদিন পর্যন্ত গেজেট না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটি আমাদের মতো করে চালাতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ৮৩৪ জনের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এরইমধ্যে প্রায় ৭০০ শহীদ পরিবার এবং আড়াই হাজার আহত পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এত শহীদের রক্তের ঋণ শোধের দায় যাতে আটকে না যায় লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে। তারা চান, স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখে এত মানুষ জীবন দিলেন অকাতরে জাতীয় সেই বীরদের যথাযথ সম্মান দেবে রাষ্ট্র।