নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে প্রতি মাসেই ছেলেকে রক্ত দিতে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে যেতে হয় কাকলি বেগমকে। গতকাল রোববারও রওনা হয়েছিলেন কাকলি বেগম। কিন্তু হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই বাস থেকে নেমে হাঁটতে হয়েছে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে আধ ঘণ্টার বেশি সময় হাঁটছেন এই মা।
স্বামী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যখন শ্যামলীর শিশু মেলা মোড়ে আসেন তখন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কাকলির। শিশু মেলার সামনে দুপুর থেকে অবস্থান করছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতেরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিতে শিশুমেলা মোড়ের দুই পাশই তাঁরা আটকে দিয়েছেন। এতে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কাকলি বেগম ও তার পরিবারের মতো ভোগান্তিতে পড়েছেন আরিচা থেকে আসা লিটন মিয়া। তিনি হৃদ্?রোগে আক্রান্ত। বাস থেকে নেমে রিকশায় করে শিশু মেলা মোড় পর্যন্ত এসেছেন। বাকি পথ হেঁটে হাসপাতালে যাচ্ছেন। স্ত্রী ও ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছিলেন এই হৃদ্?রোগের রোগী।
গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস সায়েদাবাদ যাচ্ছিল। বেলা ১১.২০ মিনিটে শিশুমেলায় এসে অবরোধে পড়ে। বাসের চালক সুরুজ মিয়ার সঙ্গে কথা হয় বেলা সোয়া একটার দিকে। তিনি বলেন, এই যাত্রীদের হেঁটেও কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।
মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য ধানমন্ডিতে অফিসগামী যাত্রী মো. মিজানুর রহমানের গাড়িটি আটকা পড়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে তিনি একই জায়গায় আছেন। নিজের গাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। কী করবেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘গড নোস’।
সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আজ সকালে রাজধানীর আগারগাঁও ও দুপুরে মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত বেশ কয়েকজন। অবরোধকারীরা তাদের দাবি মেনে নিতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও স্বীকৃতি না দিলে তারা সচিবালয়ের দিকে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে আহতেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছে। চিকিৎসাসেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন না-এমন অভিযোগ করে গতকাল রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভেতর বিক্ষোভ দেখান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত এই ব্যক্তিরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতেও বিক্ষোভ চলে।