প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট’ এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কাজী মামুনুর রশিদ। তিনি জানিয়েছেন, এরশাদ ট্রাস্টে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটিতে এরশাদ পরিবারের সদস্যসহ জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা থাকবেন। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাজী মামুনুর রশিদ এ কথা জানান। ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরশাদ পুত্র এরিকের নিরাপত্তাজনিত বিষয়, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের হয়রানি ও জবর দখলের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এরশাদ পুত্র এরিকের খরচ বাবদ প্রতিমাসে বনানীস্থ কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে একটি দোকান, গুলশান ও বনানীতে দুইটি ফ্লাট থেকে প্রাপ্ত ভাড়া প্রায় তিন লক্ষ বিশ হাজার (৩,২০,০০০) টাকা দেয়া হয়। কিন্তু প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এরিক এরশাদের ভরণ-পোষণের উসিলা দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অংকের (১০ লাখ টাকা) অর্থ দাবি করে আসছেন ট্রাস্টের কছে। বিদিশা সিদ্দিক এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে এরিক এরশাদকে। সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ বছর পূর্বে রেকর্ডকৃত (২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি) এরিকের একটি অডিও বার্তা সাংবাদিকদের শোনানো হয়। সেখানে এরিককে বলতে শোনা যায় যে, আমি এতিম একটি ছেলে, আমাকে বাঁচান। আমার মা বিদিশা এখানে অবৈধভাবে থাকছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল সম্পাদিত এক দলিলে ট্রাস্ট গঠন করে তার বিষয়-সম্পত্তির বড় অংশ সেখানে দান করেন এরশাদ। ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ছেলে শাহাতা জারাব এরিকের ভরণ-পোষণ ও জনহিতকর কাজে ব্যয় হবে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়। ট্রাস্টের আয় ভোগ ও কর্মকান্ডে অংশীদার হতে পারবেন না বিদিশা। তিনি এমন দাবি করলে তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকী তিনি প্রেসিডেন্ট পার্কেও থাকতে পারবেন না। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর চারমাস পরই পুত্র এরিককে খাওয়ানোর কথা বলে বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। ট্রাস্টের অসিয়ত না মেনেই নিকেতনে তার নিজস্ব ফ্লাট থাকলে ও তিনি আর প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের হননি। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট পার্কের পুরোনো সকল কর্মচারীদের বিদায় করে দেন তিনি। বর্তমানে বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কেই অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি স্বেচ্ছাচারিতামূলক জীবন যাপন করছেন বলে সংবাদ সম্মেলননে অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বারিধারায় প্রেসিডেন্ট পার্কের সাত হাজার বিয়াল্লিশ (৭০৪২) বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও পার্কিং, গুলশানের ৯৬ নম্বর সড়কের ৪/বি বাড়ির দুই হাজার একাত্তর (২০৭১) বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বনানীতে আল নাহিয়ান ট্রাস্টের সংযুক্ত আরব আমিরাত মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্সের এক হাজার খাট (১০৬০) বর্গফুটের দোকান, রংপুরের ‘পল্লীনিবাস, রংপুরের মিঠাপুকুরের ‘পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজা, পনের কোটি নয় লাখ (১৫,০৯,০০,০০০) টাকার স্থায়ী ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়, শেয়ার এবং পাঁচটি গাড়ি ট্রাস্টে দান করেন এরশাদ। বাকি সম্পদ স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং বড় ছেলে রাহগীর আল মাহী এরশাদ শাদকে দিয়ে গেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকে এরশাদের রেখে যাওয়া ব্যাংক থেকে আমরা কোনো অর্থ উত্তোলন করিনি। দু’টি ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা ইতিমধ্যে মূল টাকায় যোগ হয়েছে। এছাড়া অসিয়ত নামায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজ ও সামাজিক কর্মকান্ডের কথা বলা হলেও তা আমি নিজ অর্থায়নে করেছি। এরশাদের রেখে যাওয়া একটি টাকাও উত্তোলন করিনি। এরিকের ভরণ-পোষণের জন্য শুধুমাত্র একটি ব্যাংক থেকে কিছু লভ্যাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। আমরা ব্যাংকে চিঠি দিয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছি। যাতে অবৈধভাবে কেউ অর্থ উত্তোলন করতে না পারে। বর্তমানে ট্রাস্টের অধিকাংশ সম্পদ বর্তমানে বিদিশা জবর দখল করে রেখেছে- এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পার্ক দখলের মাধ্যমে এরশাদের রেখে যাওয়া অর্থের জন্য আমাদের একের পর এক হুমকি নিয়ে যাচ্ছেন বিদিশা সিদ্দিক এবং তার নিযুক্ত সন্ত্রাসী বাহিনী।